ঢাকা, শনিবার, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১, ২৯ জুন ২০২৪, ২১ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

অলস সময় কাটিয়ে আবারও সাগরে নামবেন উপকূলের জেলেরা

উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০২২
অলস সময় কাটিয়ে আবারও সাগরে নামবেন উপকূলের জেলেরা

পাথরঘাটা (বরগুনা): দীর্ঘ ৬৫ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষে আবারও মাছ শিকারের জন্য সাগরে যাত্রা শুরু করছেন উপকূলের জেলেরা।

শনিবার (২৩ জুলাই) রাত ১২টার পর থেকেই সাগরে মাছ ধরতে যেতে পারবেন তারা।

এটি যেন তাদের কাছে 'স্বপ্নের যাত্রা'। বুকভরা আশা নিয়ে সাগরের বুক জুড়ে মাছ শিকারে যেতে পেরে আবারও সরগরম হয়ে উঠবে জেলে পল্লী।

দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতারা আসবেন তাজা ইলিশ কিনতে। এতে করে ক্রেতাদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠবে দেশের বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র বরগুনার পাথরঘাটা।

গভীর সাগরে ইলিশ পাওয়ার আশায় ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে দল বেধে প্রস্তুতি নিচ্ছেন জেলেরা। তাদের প্রত্যাশা, নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে এই সময়টায় আগের চেয়ে বেশি ইলিশ ধরা পড়বে তাদের জালে। মৎস্য অবতরণ এলাকার ঘাটগুলো আবার সরব হয়ে নিষেধাজ্ঞার সময়ের শূন্যতা দূর করবে। সাগরে যে'কদিন কাটাতে হবে, পরিবারের কাছে সেই কয়দিনের বাজার সদয়ও কিনে রেখে যাচ্ছেন তারা।

মৎস্য বিভাগ বলছে, ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞার কারণে ক্ষতিপূরণ হিসেবে জেলেদের ৮৬ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেয় সরকার। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ৫৬ কেজি এবং দ্বিতীয় ধাপে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়। ৬৫ দিন পরিবার-পরিজন নিয়ে চলতে কষ্ট হলেও আবারও নিজ পেশায় ফিরতে পেরে খুশি জেলেরা।

এদিকে আড়ৎদাররা তাদের আড়ৎ নতুন করে সাজিয়ে নিচ্ছেন। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার পাইকারদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন তারা।

পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের গহরপুর গ্রামের জাকির মীর ও বাদুরতলা গ্রামের জাহাঙ্গীর মাঝি জানান, দুই মাস নিষেধাজ্ঞা শেষে শনিবার রাত ১২টার পরে সাগরে মাছ শিকারে যাবেন তারা। ইলিশ মাছ ধরা একমাত্র পেশা হওয়ায় এতদিন অলস সময় পার করতে হয়েছে। বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় ধার-দেনা করে চালাতে হয়েছে সংসার। এখন সমুদ্রে ইলিশ ধরা পড়লে ধার-দেনা পরিশোধ করতে পারবেন বলে আশা তাদের।

পাথরঘাটা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্তু কুমার অপু বাংলানিউজকে জানান, সাগরে মাছসহ মূল্যবান প্রাণিজ সম্পদের ভাণ্ডার সুরক্ষায় চলতি বছরের ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সরকার। আজ রাত ১২টার পর থেকে ইলিশসহ অন্যান্য সব ধরনের মাছ শিকারে আর কোনো বাধা থাকবে না।

তিনি আরও জানান, নিরাপত্তার জন্য জেলেদের ফ্লাই জ্যাকেট ও বয়া নিয়ে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত জেলেদের বিশেষ ভিজিএফের মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে পাথরঘাটায় নিবন্ধিত ১১ হাজার ৪১১ জন জেলে এ সহায়তা পেয়েছেন।

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ৬৫ দিনের সরকারি নির্দেশনা পালন করেছি। অনেক আশা নিয়ে সাগরে ট্রলার পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি। আশা করি ভালো মাছ ধরা পড়বে।

মাছের প্রজনন মৌসুম হওয়ায় প্রতিবারের মতো এ বছর ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকার ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সরকার।

এদিকে পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরের মৎস্যে সরকারের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। মৎস্য কেন্দ্রের বিপণন কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার সরকার জানান, মাছ বিক্রির ওপর শতকরা হিসেবে ১ টাকা ২৫ পয়সা হারে রাজস্ব পায় সরকার। এতে সরকারের রাজস্ব বেড়েছে দ্বিগুণ। তবে গতবার ইলিশের আকার তুলনামূলক ছোট ছিল।

বিএফডিসির বিপণন বিভাগের তথ্য মতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রায় এক হাজার ১৫৩ মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদন হয়। অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের উৎপাদন ছিল এক হাজার ৫৮১ মেট্রিক টন। এতে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ৯৯ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। অন্যদিকে ২০২১-২২ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন ছিল প্রায় দুই হাজার ৪৭৬ মেট্রিক টন। আর অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ ছিল দুই হাজার ৩২৪ মেট্রিক টন। তাতে সরকার রাজস্ব পায় এক কোটি ৯২ লাখ টাকা।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলেদের জীবনমান উন্নয়ন এবং উপকূলীয় ও সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নে বিশ্ব ব্যাংকের সহযোগিতায় 'সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্ট ইন বাংলাদেশ' শীর্ষক বৃহৎ প্রকল্পে নেওয়া হয়। এ প্রকল্পের মাধ্যমে জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের উপকরণ বিতরণ, অবকাঠামো উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে দারিদ্র্য হ্রাস করা হবে।

এছাড়া ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং এ সম্পদের উন্নয়ন টেকসই করার লক্ষ্যে 'ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যস্থাপনা প্রকল্প' বাস্তবায়ন করছে মৎস্য অধিদপ্তর।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০২২
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।