ঢাকা, সোমবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ জুলাই ২০২৪, ২৩ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

সবজি বিক্রি করে পেটের ভাত জোগান বিধবা চাঁনমতি

সাজিদুর রহমান রাসেল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৭ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০২২
সবজি বিক্রি করে পেটের ভাত জোগান বিধবা চাঁনমতি

মানিকগঞ্জ: স্বামী মারা যাওয়ার পর ছোট দুই ছেলে আর এক মেয়েকে নিয়ে জীবন সংগ্রাম শুরু হয় চাঁনমতির (৭০)। প্রায় ৪০ বছর আগে হারান স্বামীকে।

এরপর থেকে মানুষের বাড়িতে কাজ করে আর মাটি কেটে যে টাকা পেয়েছেন তা দিয়েই বড় করে তুলেছেন তিন সন্তানকে।

এই বয়সেও রাস্তায় ঠেলা গাড়িতে করে সবজি বিক্রি করে পেটের ভাত জোগাড় করতে হয় সদর উপজেলার বকজুরী এলাকার মৃত আফছের আলীর স্ত্রী চাঁনমতির।

শনিবার (৩০ জুলাই) পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের লওখন্ডা ব্রিজের কাছে কথা হয় চাঁনমতির সঙ্গে।

বড় ছেলে মিঠু মিয়া বিয়ে করে শ্বশুর বাড়িতেই স্থায়ীভাবে বসবাস করেন, ছোট ছেলে রমজান মিয়া বিয়ে করে আলাদা থাকলেও মাঝে মাঝে খোঁজ খবর নেন মায়ের। মেয়েকেও বিয়ে দিয়েছেন পার্শ্ববর্তী গ্রামেই।

চাঁনমতি বলেন, ছোট ছেলে অটোরিকশা চালায়, সারা দিনে যে টাকা আয় করে তাতে তাগো-ই চলে না। এখনো চলাফেরা করতে পারি তাই নিজের পেটের ভাত নিজেই জোগাড় করি। ভোর বেলায় জাগীর কাঁচামালের আড়ৎ থেকে সবজি কিনে ঠেলাগাড়ি দিয়ে শহরের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করি। যেদিন ভালো বিক্রি হয় ওই দিন হয়তো দেড় থেকে দুই শত টাকা লাভ হয়। লাভের টাকা দিয়ে চাল-ডাল কিনে রান্না করে খাই।

কোথায় থাকেন এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, একেক দিন একেক জনের। মেয়ের বাড়ি, বোনের বাড়ি, ছোট ছেলের বাড়ি।  

তিনি বলেন, অসুস্থ হলে কাউকে কিছু বলি না, কাদের বলমু? কারা চিকিৎসা করাইবো? পুলা মাইয়াগোতোই সংসার চলে না। গরীব মানুষের আল্লাহ আছে, সহজে আমাগো অসুক হয় না।

লওখন্ডা এলাকার মধ্য বয়সী নারী রানু বেগম বলেন, আমরা যখন ছোট তখন থেকেই দেখছি চাঁনমতি মানুষের বাড়িতে কাজ করে তার তিন সন্তানকে বড় করেছে। শুনেছি বড় ছেলে কোনো যোগাযোগ করে না, ছোট ছেলে মাঝে মাঝে মায়ের খোঁজ খবর নেয় এবং কিছু টাকা পয়সাও দেয়।

গঙ্গাধরপট্টীর বাসিন্দা আওয়াল হোসেন বলেন, প্রায় পাঁচ বছর ধরে শহরের এই মহল্লায় বসবাস করি। ঠিক মতো হাটতে না পারলেও ভ্যান নিয়ে শহরে ঘুরে ঘুরে সবজি বিক্রি করেন তিনি। আমি তাকে দেখলেই তার কাছ থেকে সবজি কিনি।

চাঁনমতির ছোট ছেলে রমজান মিয়া বলেন, মা এক জায়গাতে থাকতে চায় না। তাকে কাজ করতে নিষেধ করছি কিন্তু তিনি শোনেন না। নিজের খরচ নিজেই জোগাড় করতে চান। এ কারণে তাকে আর বাধা দেইনি।

মানিকগঞ্জ পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর তসলিম মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, পৌরসভা থেকে কোনো অনুদান এলে প্রথমেই তাকে (চাঁনমতি) দেই। তার থাকার জন্য কোনো ঘর নেই। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছি।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৭ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০২২
কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।