ঢাকা, শনিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ মে ২০২৪, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

ঈশ্বরদীতে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে তীব্র ভাঙন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট   | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৭, ২০২২
ঈশ্বরদীতে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে তীব্র ভাঙন ঈশ্বরদীর দেশের সর্ববৃহৎ রেল সেতু হার্ডিঞ্জ ব্রিজ

পাবনা: পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পাবনার ঈশ্বরদীর পাকশীতে দেশের সর্ববৃহৎ রেল সেতু হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে বিভিন্ন স্থানে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে।

গত ৪০ বছরের মধ্যে এমন ভাঙন এখানে দেখা যায়নি বলে জানান স্থানীয়রা।

তারা জানান, তীব্র এই ভাঙনের ফলে হুমকিতে লালনশাহ সেতু, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও নদী রক্ষা বাঁধসহ আশপাশের কয়েকশ একর ফসলি জমি। ইতোমধ্যে প্রায় ৩০ একর জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

গত শুক্রবার (৫ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদ্মার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্রিজের নিচে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। মাত্র সাতদিনের ব্যবধানে ব্রিজের ৩ নম্বর পিলার (গার্ডার) থেকে ২ নম্বর পিলার পর্যন্ত নদীর চর ভেঙে গেছে। এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে নদী রক্ষা বাঁধ হুমকির মুখে পড়তে পারে। সেই সঙ্গে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন সেতুরও ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। প্রায় ২৫-৩০ একর জমির কলা বাগানসহ ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। নদী পারের বাসিন্দারা আতঙ্কে দিন পার করছেন। ভাঙন রোধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

ব্রিজটির নিচের অস্থায়ী ফুসকা ও চটপটি বিক্রেতা ফজলুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, চলতি বছরের শুরুতে ৪ নম্বর পিলারের কাছে চর ছিল। এখন চর ভাঙতে ভাঙতে ভাঙতে তা ২ নম্বর পিলারের কাছে চলে এসেছে। দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটক ও ভ্রমণপিপাসুরা ব্রিজের নিচে চরের মধ্যে ঘোরাফেরা করতে আসেন। অস্থায়ী দোকান-পাটে তারা কেনাকাটা ও খাওয়া-দাওয়া করেন। এভাবে নদীর তীর ভাঙতে থাকলে এখানে আর মানুষজন আসবে না। আমাদের ব্যবসাও থাকবে না।  

রূপপুর গ্রামের সাসুদ আলী বলেন, তীব্রভাবে ভাঙছে পদ্মার চর। হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে প্রায় তিন দশক ধরে আবাদ করছি। এমন তীব্র ভাঙন এর আগে কখনও দেখিনি। এরই মধ্যে কলা বাগানসহ বেশ কিছু জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের তীব্রতা দেখে মনে হচ্ছে ব্রিজের আশপাশের চর ভেঙে নদীতে বিলীন হয়েছে। এ চর ভাঙন রোধে কেউ কোনও পদক্ষেপও নিচ্ছেন না।

সাঁরাঘাট এলাকার বাসিন্দা আলেয়া খাতুন বাংলানিউজকে বলেন, পদ্মায় পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের বাড়ির পাশ দিয়ে সাঁড়াঘাট এলাকায় ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। প্রায়ই জিও ব্যাগ (বালি ভর্তি বিশেষ বস্তা) ফেলানো হচ্ছে, তবুও ভাঙন রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। কয়েকদিন যাবত পরিবারসহ নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে।  

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) উত্তরাঞ্চলীয় পরিমাপ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদ বাংলানিউজকে বলেন,  গত ১১ দিনের ব্যবধানে পদ্মায় পানি বেড়েছে দুই মিটারের বেশি। ২৫ জুলাই পানির পরিমাণ ছিল ৯ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার। আর শুক্রবার (৫ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে পানির পরিমাণ ১১ দশমিক ৯৬ সেন্টিমিটার। প্রতিদিনই পদ্মায় গড়ে ২৫ থেকে ৪০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত পানি বাড়ছে। একই সঙ্গে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে পদ্মার চরে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে।

পাকশী রেলওয়ে বিভাগের সেতু প্রকৌশলী নাজিব কাওছার বলেন, হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে পিলারের আশপাশের স্থান নদীতে ভেঙে গেলেও ব্রিজের কোনো ক্ষতি হবে না। কারণ ব্রিজের পিলার নদীর গভীরে পাইলিং করে স্থাপন করা হয়েছে।

নদী রক্ষা বাঁধের ক্ষতির সম্ভাবনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পাউবো পাবনার নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে একাধিকবার আমার কথা হয়েছে। নদী ভাঙন রোধে পাউবো কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।

পাউবো পাবনার নির্বাহী প্রকৌশলী সরোয়ার জাহান সুজন বাংলানিউজকে বলেন, হার্ডিঞ্জ ব্রিজের আশপাশের এলাকাসহ সাঁড়াঘাটে ভাঙন রোধে গত বছর প্রায় ২ কোটি টাকার জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হয়েছে। এবার পানি বৃদ্ধির বিষয়টি জেনেছি। পানি কমতে শুরু করলে জিও ব্যাগ ডাম্পিংসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে ভাঙন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ ভাঙনে ব্রিজ বা নদী রক্ষা বাঁধের ক্ষতির কোনো সম্ভাবনা নেই। নদীর চর ভাঙবে ও জাগবে এটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। আমরা এ বিষয়টি সব সময় নজরে রেখেছি। কোনো ধরনের সমস্যা হলে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১০২০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৭, ২০২২
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।