ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সিলেট পুলিশ লাইন্সে স্মৃতি ৭১’র উদ্বোধন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৫৭ ঘণ্টা, আগস্ট ৭, ২০২২
সিলেট পুলিশ লাইন্সে স্মৃতি ৭১’র উদ্বোধন

সিলেট: মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের ৫০ বছর পর বীর শহীদদের গণকবর সংরক্ষণ করলো সিলেট জেলা পুলিশ। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনা নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে এ স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করা হয়েছে।

 

সিলেটের পুলিশ সুপার (পদোন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত ডিআইজি) মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিনের উদ্যোগে গণকবর সংরক্ষণ করে নির্মিত হয় নান্দনিক ‘স্মৃতি ৭১’।  

রোববার (৭ আগস্ট) দুপুর ১টার দিকে নগরের রিকাবিবাজার জেলা পুলিশ লাইন্সে স্মৃতিস্তম্ভ উদ্বোধন করেন সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি (উপ-মহাপরিদর্শক) মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডিআইজি (উপ-মহাপরিদর্শক) মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন সিলেট ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। তার কর্মকালে তিন বছরে সিলেটে অনেক ভালো কাজ করে গেছেন। আইনশৃঙ্খলার যেমন উন্নতি করেছেন, গণমানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, করোনা ও বন্যার সংগ্রাম করেছেন এবং বড় বড় কাজও করেছেন। অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলার আসামিকেও গ্রেফতার করেছেন। সবচেয়ে বড় বিষয় এ স্মৃতি ৭১ নির্মাণের মধ্য দিয়ে নিজেকে ইতিহাসের অংশ করে যাচ্ছেন।  

তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় কথা, ভালো কাজ করতে গেলে জনগণের সহায়তা ছাড়া সম্ভব নয়। আজকে যারা উপস্থিত সবার মন জয় করে তিনি এ কাজগুলো করেছেন, আজকের উপস্থিতি তার প্রমাণ। তাছাড়া তিনি পুলিশ সদস্যদের ভালো আবাসনের ব্যবস্থা ও থানা ভবনের উন্নয়ন করেছেন। সিলেট থেকে চলে গেলেও তাকে স্মরণ করবে এ অঞ্চলের মানুষ।   

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) কমিশনার নিশারুল আরিফ, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমেদ, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি আল আজাদ, সময় টিভির ব্যুরো প্রধান ইকরামুল কবির, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহিত চৌধুরী, সিলেট জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত চক্রবর্তী জুয়েল ও মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ভবতোষ রায় বর্মণ রানা।  

জানা গেছে, মহান মুক্তিযুদ্ধে সিলেটে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ হন অনেকে। তাদের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ অসংখ্য মানুষকে শহরের রিকাবিবাজার এলাকার পুলিশ লাইন্সের ভেতর গণকবর দেওয়া হয়। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এখানে শহীদদের স্মরণে নির্মিত হলো স্মৃতিস্তম্ভ।  

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় ব্যক্তিদের তথ্য অনুযায়ী, মুক্তিযুদ্ধের পরপরই গণকবরটি চিহ্নিত করা হয়। রিকাবিবাজারের পার্শ্ববর্তী মুন্সিপাড়াসহ শহরের বিভিন্ন এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী হত্যা করে ফেলে রাখে। পরে এসব শহীদের মরদেহ এনে স্বজন ও পরিচিতজনরা পুলিশ লাইন্সের ভেতরে একটি ডোবায় গণকবর দেন। কতজনকে এখানে গণকবর দেওয়া হয়েছে এমন সঠিক পরিসংখ্যান কোথাও সংরক্ষিত না থাকলেও গণকবর দেওয়া আটজন শহীদের নাম-তথ্য জানা গেছে। তারা ওইসময় পুলিশ বাহিনীতে চাকরিরত ছিলেন। তারা হলেন- সহকারী উপ-পরিদর্শক আবদুল লতিফ, হাবিলদার আবদুর রাজ্জাক, কনস্টেবল মোক্তার আলী, শহর আলী, আবদুস ছালাম, মো. হানিফ ব্যাপারী, মনিরুজ্জামান ও পরিতোষ কুমার।  

এসব পুলিশ সদস্য ১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল জিন্দাবাজার এলাকার তৎকালীন ন্যাশনাল ব্যাংকে (বর্তমানে সোনালী ব্যাংক) দায়িত্ব পালন করছিলেন। সেদিন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ব্যাংকের টাকা লুটের উদ্দেশে পুলিশ সদস্যদের হত্যা করে।

পরে ৬ এপ্রিল এসব শহীদকে পুলিশ লাইন্সে গণকবর দেওয়া হয়। এর বাইরে শহরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ অনেককেও এখানে কবর দেওয়া হয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ২৩৫৬ ঘণ্টা, আগস্ট ০৭, ২০২২
এনইউ/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।