ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

কক্সবাজারে পর্যটন ব্যবসার আড়ালে নানা অপরাধ!

সুনীল বড়ুয়া,স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ৯, ২০২২
কক্সবাজারে পর্যটন ব্যবসার আড়ালে নানা অপরাধ!

কক্সবাজার: কক্সবাজার শহরের হোটেল-মোটেল জোনে পর্যটন ব্যবসার আড়ালে চলছে নানা অপরাধ। অপহরণ এবং জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়সহ নানা অপরাধ চলছে এখানে।



সোমবার (৮ আগস্ট) শিউলি নামের একটি কটেজে আবিষ্কার করে সে রকম অপরাধের আস্তানা ‘টর্চার সেল’। এ সময় সেখানে আটকে রাখা চারজনকে জিম্মিদশা থেকে উদ্ধার করে টুরিস্ট পুলিশ এবং সংঘবদ্ধ চক্রের ১১ জন দালালকে আটক করা হয়। এ অভিযানে পর বেরিয়ে আসছে অপরাধ চক্রের নানা তথ্য।

অভিযানে জিম্মিদশা থেকে উদ্ধারকৃতরা হলেন- কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের দক্ষিণ ডিককূল এলাকার ইফাজ উদ্দিন ইমন (১৭), একই এলাকার আব্দুল্লাহ আল মামুন (১৫) এবং টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ এলাকার দীল মোহাম্মদ (১৭) ও চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া উপজেলার মো. ইমরান (১৯)।

এ সময় ঘটনাস্থলের আশপাশে অভিযান চালিয়ে সংঘবদ্ধ চক্রের ১১ জনকে আটক করেছে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয়েছে দেশীয় অস্ত্রসহ অপকর্মে ব্যবহৃত নানা উপকরণ।

আটক দালালরা হলেন- মো. আলমগীর (৪৫), সেলিম (২০), আকাশ দাস (২৩), জোবায়ের (২৮), মামুন (২২), নাজির হোসেন (২৮), সেকান্দর আলী (২৮), সোহেল (৩০), জাহাঙ্গীর আলম (৩৩), জসিম (২৭), ও পারভেজ (২৫)।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম বাংলানিউজকে জানান, হোটেল-মোটেল জোনে পর্যটন ব্যবসার আড়ালে নানা পর্যটক এবং স্থানীয় নিরীহ লোকজনের সঙ্গে প্রতারণ, অপহরণ, ফাঁদে ফেলে টাকা আদায়সহ নানা অপরাধ করে চলেছে কিছু চক্র। আমাদের কাছে এমন অপরাধের আরও তথ্য আছে। যেখানে আমরা নজরদারিতে রেখেছি।

তিনি জানান, জিম্মিদশা থেকে উদ্ধার হওয়া দীল মোহাম্মদ ও ইমরান মূরত উখিয়া উপজেলার পালংখালী স্টেশনের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী। তারা রোববার সকালে কক্সবাজার বেড়াতে এসে রাত্রিযাপনের জন্য ‘শিউলি’ নামের কথিত এই আবাসিক কটেজে ওঠেন। উদ্ধার হওয়া অপর দুইজন মায়ের চিকিৎসা করাতে এসে রাত্রিযাপনের জন্য ওই কটেজে ওঠেন।

টুরিস্ট পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানান, রোববার মধ্যরাত শহরে কক্সবাজার শহরের লাইট হাউজ এলাকায় শিউলি নামের কথিত যে কটেজে অভিযান চালানো হয়, মূলত এটি ছিল অপরাধীদের একটি আস্তানা। সামনে থেকে দরজা বন্ধ রেখে, পেছনের গোপন দরজা দিয়ে আসা-যাওয়া করতেন অপরাধীরা। এমনকি অভিযানের সময় তালা ভেঙে ভেতরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে অপরাধীরা পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যায়।

রেজাউর করিম আরও বলেন, এখানে বিভিন্ন এলাকা থেকে নারীদের এনে যৌন ব্যবসার পাশাপাশি ব্ল্যাকমেইলিং করে নারীদের নগ্ন ছবি ও ভিডিও করে প্রতারণা করা হতো। অভিযানের সময় ওই কটেজের কক্ষ থেকে নির্যাতন করার নানা উপকরণও জব্দ করা হয়।

উদ্ধারকৃতদের বরাত দিয়ে রেজাউল করিম জানান, দালালের মাধ্যমে তাদের পৃথকভাবে ওই কটেজে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে যাওয়ার পর দেখেন ৫-৬ জন পুরুষ ও ৩ জন নারী সেখানে আছে। কিছুক্ষণ পর একটি কক্ষে নারীদের সঙ্গে তাদের আপত্তিকর ছবি তুলেন। এর মধ্যে তাদের হাতে থাকা সব টাকা পয়সা হাতিয়ে নেওয়া হয়।

ওই কর্মকর্তা জানান, আবদুর রহিম নামের উখিয়ার এক ব্যক্তি এবং লোকমান নামের মহেশখালীর এক ব্যক্তির নেতৃত্বে কথিত এই শিউলি কটেজ নামের এই টর্চার সেলে নানা অপরাধ সংঘটিত করে আসছেন।

তাদের ধরতে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, আটক ১১ দালাল ছাড়াও এ চক্রের কিশোর গ্যাংয়ের শতাধিক সদস্য রয়েছেন। যারা মাদক সরবরাহসহ নানা অপকর্মে জড়িত থাকার তথ্য পুলিশের কাছে রয়েছেন।

তবে যেকোনোভাবে পর্যটন জোনকে পর্যটকদের জন্য নিরাপদ করা হবে বলে জানান টুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম।

বাংলাদেশ সময়: ১১১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ০৯, ২০২২
এসবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।