ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

বঙ্গবন্ধুর ২ খুনি যুক্তরাষ্ট্র-কানাডায়, ৩ খুনির হদিস নেই

তৌহিদুর রহমান, ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০২২
বঙ্গবন্ধুর ২ খুনি যুক্তরাষ্ট্র-কানাডায়, ৩ খুনির হদিস নেই ফাইল ছবি

ঢাকা: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাঁচ খুনিকে এখনও ফিরিয়ে আনতে পারেনি সরকার। এই পাঁচ খুনির মধ্যে দুজনের অবস্থান জানতে পারলেও বাকি তিনজনের অবস্থান এখনো শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।

তাদের শনাক্ত করতে প্রবাসীদেরও সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছে সরকার।

বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মধ্যে এখন বিদেশে পালিয়ে রয়েছে— খন্দকার আবদুর রশিদ, এম রাশেদ চৌধুরী, শরিফুল হক ডালিম, এসএইচএমবি নূর চৌধুরী ও রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন খান। পালিয়ে থাকা খুনিদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছে এম রাশেদ চৌধুরী। আর কানাডায় অবস্থান করছে খুনি নূর চৌধুরী। বাকি তিন খুনির কোনো হদিস নেই।

বঙ্গবন্ধুর খুনি এম রাশেদ চৌধুরী বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছে। তাকে ফিরিয়ে আনতে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে সরকার।

চলতি বছর ৪ এপ্রিল ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টোনিও ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানান। একই সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিষয়টির গুরুত্ব মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেলকে বোঝানোর জন্য অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকেও অনুরোধ করেন। এছাড়া চলতি বছর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটি মার্কিন সিনেটরদের সঙ্গে বৈঠক করে খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে।

এর আগে ২০১৯ সালের ১৭ জুন খুনি এম রাশেদ চৌধুরীর রাজনৈতিক আশ্রয়ের সব নথি তলব করেছিলেন মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার। এম রাশেদ চৌধুরীর নথি তলবের বিষয়টি পর্যালোচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। সে দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় বাতিল হলে তাকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হতে পারে। তবে এ বিষয়ে খুব একটা অগ্রগতি হয়নি।

বঙ্গবন্ধুর অন্যতম আত্মস্বীকৃত খুনি  নূর চৌধুরী অবস্থান করছে কানাডায়। তাকে ফেরাতে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে সরকার। নূর চৌধুরী ও তার স্ত্রী ১৯৯৬ সালে কানাডায় যায় ভিজিট ভিসায়। সেখানে গিয়ে তারা শরণার্থী হিসেবে কানাডা সরকারের কাছে আবেদন করে। তখন থেকেই তারা কানাডায় অবস্থান করছে। নূর চৌধুরীকে ফেরত দেওয়ার জন্য বিভিন্ন সময়ে কানাডা সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৮ সালের ১১ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কানাডা সফর করেন। সে সময় কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে বৈঠকে শেখ হাসিনা নূর চৌধুরীকে ফেরত দেওয়ার অনুরোধও করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন জানিয়েছিলেন, খুনি নূর চৌধুরীকে ফেরত পেতে কানাডার আদালতে লড়বে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর কানাডার ফেডারেল আদালত খুনি নূর চৌধুরীর অভিবাসন সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশের পক্ষে রায় দেন। সে অনুযায়ী নূর চৌধুরীর বিষয়ে তথ্য প্রকাশে কানাডা সরকারের পক্ষ থেকে আর কোনো বাধা নেই বলেও জানিয়ে দেন আদালত। কানাডার আদালত থেকে আইনি জটিলতা মীমাংসা করা গেলে নূর চৌধুরীকে ফেরানো সম্ভব হতে পারে।

বঙ্গবন্ধুর অন্যতম খুনি শরিফুল হক ডালিম বিভিন্ন সময়ে লিবিয়া, কেনিয়া, জিম্বাবুয়ে ও পাকিস্তানে অবস্থান করেছে। একটি সূত্র জানায়, ডালিম পাকিস্তানের পাসপোর্ট নিয়ে সে দেশে অবস্থান করছে। এছাড়া সে কেনিয়ায় যাতায়াতও করে।

খন্দকার আব্দুর রশিদ বিভিন্ন সময়ে লিবিয়া ও পাকিস্তানে অবস্থান করেছে। পাকিস্তানে তার অবস্থান জানতে পেরে পাকিস্তান সরকারের কাছে তার বিষয়ে তথ্য দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। তবে পাকিস্তানের কাছ থেকে এখনো কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

বঙ্গবন্ধুর খুনি রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন খানকে সর্বশেষ জার্মানিতে দেখা গেছে। তার বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য জার্মান সরকারকে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ। তিনি বিভিন্ন সময়ে ভারত ও পাকিস্তানে পালিয়ে ছিল।

বঙ্গবন্ধুর খুনি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আব্দুল মাজেদ দীর্ঘ ২০ বছর ভারতে পালিয়ে ছিল। ২০২০ সালে দেশে ফিরে আসার পর ঢাকায় গ্রেফতার হয় সে। একই বছর ১২ এপ্রিল তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর হয়।

বঙ্গবন্ধুর সাজাপ্রাপ্ত খুনি আবদুল আজিজ পাশা ২০০১ সালের জুন মাসে জিম্বাবুয়েতে পলাতক অবস্থায় মারা যায়। তবে তার মৃত্যুর বিষয়ে প্রকৃত তথ্য এখনও জানা সম্ভব হয়নি।

বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বাংলানিউজকে বলেন, বঙ্গবন্ধু খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। দুই খুনির অবস্থান আমরা জানি। তবে বাকি তিনজনের অবস্থান আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। এ ক্ষেত্রে প্রবাসীরা আমাদের সহায়তা করতে পারে। তিন খুনির অবস্থান জানানোর জন্য আমরা পুরস্কারও ঘোষণা করেছি।

উচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর ১২ খুনির মধ্যে ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। এই ৫ জন হলো— সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, মহিউদ্দিন আহমদ, এ কে বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিন। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ১২ এপ্রিল খুনি মাজেদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০২২
টিআর/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।