ময়মনসিংহ: ১১ বছর আগে প্রেমের টানে ফিলিপাইন থেকে বাংলাদেশে এসে ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার রাধাকানাই ইউনিয়নের অজপাড়াগাঁয়ে বসত গড়েন জীন ক্যাটামিন পেট্রিয়াকা ওরফে জেসমিন আক্তার। সেখানে প্রেমিক জুলহাস উদ্দিনকে বিয়ে করে সুখের সংসার রচনা করেন জীন ক্যাটামিন পেট্রিয়াকা।
এভাবেই প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুন্দর আচার-আচরণে টানা ১০ বছর স্বামীর সংসারেই সময় কেটেছে পেট্রিয়াকার। ২০২১ সালের ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সংরক্ষিত মহিলা আসনে সদস্য পদে প্রার্থী হয়ে সবাইকে চমকে দেন এই বিদেশিনী।
বিষয়টি তখন এলাকার ভোটারদের মাঝে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। ফলে ফিলিপাইন নারী জীন ক্যাটামিন পেট্রিয়াকা ওরফে জেসমিন আক্তার সুন্দর ব্যবহারে ভোটারদের মন জয় করে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে দ্বিগুণ ভোট বেশি পেয়ে ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন।
এরপর থেকেই এলাকার মানুষের সেবায় মনোনিবেশ করেন এই নারী। ফলে এলাকার মানুষের প্রত্যাশিত সেবা দেওয়ার মাধ্যমে পেট্রিয়াকা এখন স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে নন্দিত জনসেবক। তাঁর কর্মগুনে মুগ্ধ এলাকার ভোটারসহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধিরাও।
তবে ভাষাগত সমস্যার কারণে বেশ বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে এই বিদেশিনী ইউপি সদস্যকে। এক্ষেত্রে পেট্রিয়াকার পাশে থেকে সব সময় সহযোগিতা করে আসছেন তাঁর স্বামী জুলহাস উদ্দিন ও অন্য ইউপি সদস্যরাও।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জিন ক্যাটামিন পেট্রিয়াকা বলেন, ভালো আছি, তবে অত্যন্ত ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে সময় কাটছে। কারণ আগে ছিলাম শুধু গৃহিণী, এখন হয়েছি জনপ্রতিনিধিও। ফলে দুইটা দায়িত্বই আমি ভালোভাবে পালন করার চেষ্টা করছি।
তবে ভাষাগত কারণে কিছু সমস্যা হচ্ছে। এক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা নিয়েই কাজ করছি। সেইসঙ্গে চেষ্টা করছি বাংলা ভাষা ভালোভাবে আয়ত্ব করতে। খুব দ্রুত তা পারব বলেও আশা করছি।
ইউপি কার্যালয় সূত্র জানায়, গত ছয় মাসে স্থানীয় কুদালিয়া পাড় ও চৌরঙ্গীপাড় এলাকায় দুটি রাস্তায় দুই লাখ টাকা ব্যয়ে স্বচ্ছতার সঙ্গে মাটি ফেলার কাজ করিয়েছেন পেট্রিয়াকা। এছাড়াও ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে ১৯০ জনকে ১০ কেজি করে চাল এবং ১০ জনকে টিসিবি কার্ড বিতরণ করে এলাকার মানুষদের সেবা দিচ্ছেন তিনি।
পেট্রিয়াকার স্বামী জুলহাস উদ্দিন বলেন, পেট্রিয়াকা জনপ্রতিনিধি হওয়ার পর কাজের চাপ বেড়ে গেছে। বেশ পরিশ্রমে সময় কাটে তার। দিনের বেশির ভাগ সময় সে জনসেবায় কাটায়। কখনো তাকে অসন্তুষ্ট হতে দেখি না। নিয়মিত সে এলাকার সালিশ-বৈঠকে উপস্থিত থাকে। তবে অনেক ক্ষেত্রে সে বাংলা কথা ও লেখা বুঝতে পারে না। তখন আমি তাকে বুঝিয়ে দেই। এ সময় সে কি বলছে সেটিও অন্যকে বুঝিয়ে দেই আমি।
পেট্রিয়াকার সহকর্মীরা জানান, সবার সঙ্গে মিলেমিশেই কাজ করছেন পেট্রিয়াকা, এলাকার মানুষও তাকে সব সময় পাশে পায়। অফিসের সময় শেষে বাসায় গেলেও সে বিরক্ত হয় না, এটি তার ভালো গুণ।
রাধাকানাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া শিমুল তরফদার বলেন, তিনি ভালো কাজ করছেন। তবে ভাষাগত সমস্যা রয়েছে তার, এ জন্য সে তার স্বামীকে জিজ্ঞাসা করেই সব কাজ করে থাকে। আমরাও তাকে সহযোগিতা করি সব সময়।
প্রসঙ্গত, জীন ক্যাটামিন পেট্রিয়াকা পড়াশোনা করেছেন ফিলিপাইনের নামি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিশারিজ বিভাগে। সেখান থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে সিঙ্গাপুরে চাকরি করতে গিয়ে পরিচয় হয় বাংলাদেশি তরুণ জুলহাস উদ্দিনের সঙ্গে। সেই পরিচয় থেকেই তাদের প্রেম ও বিয়ে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০২২
আরএ
