বরিশাল: জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার পর লঞ্চের ভাড়া বাড়ানোর আবেদন করা হয়। এরপর নৌযানের যাত্রীভাড়া ৩০ শতাংশ সমন্বয় (বৃদ্ধি) করে পুনর্নির্ধারণ করেছে সরকার।
ইতোমধ্যে নতুন ভাড়া কার্যকর করেছে লঞ্চ মালিকরা। তবে ঢাকা-বরিশাল রুটের লঞ্চের ডেকের বাড়লেও কেবিনের ভাড়া বাড়ানো হয়নি। এ ভাড়া নিয়ে বরিশাল অঞ্চলের যাত্রীদের মধ্যে বেশ অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
বরিশাল থেকে ঢাকাগামী ‘পারাবত-১১’ লঞ্চের ডেকের যাত্রী হোসেন মিয়া বুধবার (১৭ আগস্ট) বলেন, দুই সপ্তাহ আগেও লঞ্চে আড়াইশত টাকায় ঢাকায় গিয়েছি, আবার একই ভাড়ায় বরিশালে এসেছি। কিন্তু আজ ঘাটে কোনো লঞ্চেই ডেকের ভাড়া ৪শত টাকার কম নেওয়া হচ্ছে না। এটা নিম্ন ও মাঝারি আয়ের সব মানুষের জন্যই বোঝা।
লঞ্চের স্টাফরা জানায়, সিঙ্গেল এসি/নন এসি কেবিন লঞ্চ ভেদে ১ হাজার থেকে ১২ টাকা এবং ডাবল কেবিনও সেই হিসেবে ২ হাজার থেকে ২৪ শত টাকা রাখা হচ্ছে। অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে সোফা ও ভিআইপি কেবিনের ভাড়াও।
এদিকে আভ্যন্তরীন রুটে চলাচলকারী লঞ্চের যাত্রী ও মেহেন্দীগঞ্জের শ্রীপুরের বাসিন্দা তারেক খান বলেন, ভাড়া বাড়ার আগে প্রতিদিন ক্লাশ করার জন্য শ্রীপুর থেকে লঞ্চে করে বরিশাল আসতাম। তখন ৬০ টাকার ভাড়া শিক্ষার্থী হওয়ার কারণে ৪০ টাকা রাখতো। লঞ্চের ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণার পর আজ সে ভাড়া ৮০ টাকাই রাখলো। এখন মনে হয় আর প্রতিদিন ক্লাশ করা সম্ভব হবে না।
ভোলা-বরিশাল রুটের যাত্রী করিম হাওলাদার বলেন, ৯০ টাকার ভাড়া ১২০ টাকা আর ১২০ টাকার ভাড়া দেড়শত টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। তেলের দাম বাড়ার অযুহাতে একরাতের মধ্যে এতো টাকা ভাড়া বাড়লো, এতে তো যাত্রীদের কোনো লাভ হলো না। লাভ তো লঞ্চ মালিকদেরই।
তবে লঞ্চচালক ও স্টাফরা বলেন, ভাড়া বাড়লেও যাত্রী না হলে লোকসানই গুনতে হবে লঞ্চ মালিকদের। বাসের থেকে লঞ্চের ভাড়া কিছুটা কম থাকলেও সড়ক পথে সময় কম লাগায় নৌপথে যাত্রীর সঙ্কট নিরসন এখনই হচ্ছে না বলে মনে করছেন লঞ্চ মালিকরা।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল যাত্রী পরিবহন সংস্থার সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সড়ক পথের উন্নয়ন ঘটায় নৌপথে যাত্রী অনেক কমে গেছে। এখন মানুষ সড়ক পথে চলাচল করছে। এরপর এখন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা এর মতো অবস্থা হয়েছে বাড়তি ভাড়া। কারণ বিশ্ববাজার অর্থনীতির সঙ্গে সমন্বয় করতে গিয়ে সরকারকে বাধ্য হয়ে তেলের দাম বাড়াতে হয়েছে। তাতে প্রতিলিটার ডিজেলের দাম ৩৪ টাকা বেড়েছে। এটা বাড়ার ফলে আমাদের খরচ সাড়ে ৪২ শতাংশ বেড়ে গেছে। নৌ-মন্ত্রণালয় দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে ৩০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করেছে। এটা দিয়েই আমাদের ভাড়া সমন্বয় করে চলতে হবে।
তিনি বলেন, যখন তেলের দাম ৮০ টাকা লিটার ছিলো তখন ঢাকা বরিশাল রুটে আমাদের ভাড়া ছিলো ৩৫২ টাকা। এখন ৩০ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় ৪৫৮ টাকা ভাড়া আসে কিন্তু আমরা ৪৫০ টাকার বেশি ভাড়া নেবো না।
তিনি বলেন, কেবিনের ক্ষেত্রে আমাদের একটা সার্কুলার রয়েছে, যে ডেকের ভাড়ার চারগুন পর্যন্ত আমরা ভাড়া বৃদ্ধি করতে পারবো। সেক্ষেত্রে সিঙ্গেল কেবিনের ভাড়া ১৮ শত টাকায় দাঁড়াবে এবং ডাবল কেবিনের ভাড়া তিন হাজার ৬০০ টাকা হবে। তবে এতে মানুষের সমস্যা হয়ে যাবে। তাই আমরা মালিক সমিতি বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।
সড়ক পথের ভাড়ার সঙ্গে সমন্বয় করে আমাদের বেঁচে থাকার তাগিদে আমরা সিঙ্গেল ও ডাবল কেবিনের ভাড়া কিছু কমিয়ে নিয়ে নির্ধারণ করবো।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০২২
এমএস/এসএ