ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

কয়রায় সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০২২
কয়রায় সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি

খুলনা: খুলনার কয়রা উপজেলার সুন্দরবন ঘেঁষা দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নদীশাসনের মাধ্যমে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণসহ ৭ দফা দাবি তুলেছেন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী। বুধবার (১৭আগস্ট)  দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এসব দাবি জানানো হয়।

এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসীর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গোলখালী গ্রামের টিএম আমিরুল ইসলামের ছেলে সাংবাদিক আশরাফুল ইসলাম নূর।

তিনি প্রতিবছর বেড়িবাঁধ ভাঙনের ফলে মানচিত্র থেকে ওই এলাকা হারিয়ে যাবার শঙ্কা প্রকাশ করে অবিলম্বে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

তাদের দাবিগুলো হচ্ছে-  অবিলম্বে কয়রার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের তিন পাশের নদী শাখবাড়িয়া, আড়পাঙ্গাশিয়া এবং কপোতাক্ষ নদীশাসনের মাধ্যমে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ, উপকূলের ক্ষতিগ্রস্ত সব বেড়িবাঁধ সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে নদীশাসনের মাধ্যমে টেকসই করে নির্মাণ, ক্ষতিগ্রস্তদের জলবায়ু ও পুনর্বাসন তহবিলে থেকে বিশেষ বরাদ্দে গৃহনির্মাণ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা, সাতক্ষীরা পওর ১৩, ১৪/১ ও ১৪/২নং পোল্ডার খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি রাস্তা-ঘাট সংস্কার ও পাকাকরণ, স্কুল-মাদরাসা ও ক্ষতিগ্রস্ত ধর্মীয় উপাসনালয় মেরামত করা, প্রতিটি বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ এবং প্রকল্পের সার্বিক বিবরণী টাঙানো বাধ্যতামূলক করা, বেড়িবাঁধ নির্মাণে ঠিকাদার ও জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে চরম অবহেলা এবং আর্থিক অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগ উঠলে বিচার বিভাগীয় তদন্ত সাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, আড়পাঙ্গাশিয়া ও শাকবাড়িয়া নদী এবং কপোতাক্ষ নদ বেষ্টিত প্রায় ব-দ্বীপ ভূখন্ডণ্ডদক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়ন। পাকা রাস্তাবিহীন (সমগ্র এলাকায় একটিও পিচের রাস্তা নেই) অবহেলিত এ জনপদে বসবাসরত প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ লোনাপানিতে নিমজ্জিত। সর্বশেষ গত ১৪ আগস্ট চরামুখায় কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তৃর্ণ এলাকা তলিয়ে গেছে; এখনো চলছে জোয়ার-ভাটা। মাসখানেক আগেও একই স্থানে বেড়িবাঁধটির প্রায় তিনশ মিটার ভেঙেছিল, যা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে মেরামত করেছেন স্থানীয়রা। বেড়িবাঁধটি ভাঙনের পর প্রায় একমাস পেরিয়ে গেলেও বিপুল জনগোষ্ঠীর সুরক্ষায় তা সংস্কার বা মেরামতে এগিয়ে আসেনি সাতক্ষীরা পাউবো। খুলনার অন্তর্গত কয়রা উপজেলাধীন দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নটি সাতক্ষীরা পাউবোর আওতাধীন। ফলে সেই ষাটের দশক থেকেই বিমাতাসুলভ আচরণে টেকসই বেড়িবাঁধ নিরাপত্তা বঞ্চিত এলাকাবাসী। তাই অবিলম্বে নদীশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার মধ্যদিয়ে ব-দ্বীপ ভূখন্ডণ্ড দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। অতিদ্রুত নদীশাসন ব্যবস্থাসহ টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা না গেলে, ‘বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে মুছে যেতে পারে আমাদের জন্মস্থান প্রিয় দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়ন। একই সঙ্গে সাতক্ষীরা পওর’১৩, ১৪/১ ও ১৪/২নং পোল্ডারটি খুলনা পাউবোর আওতায় আনতে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, খুলনা-৬ আসনের  এমপি মো. আক্তারুজ্জামান বাবু, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার, খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, গত ১৪ আগস্ট সকালে চরামুখা খালেরগোড়া নামক স্থানে কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধ ভেঙে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়। এরপর ১৫, ১৬ ও ১৭ আগস্ট ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত বিপুল সংখ্যক অনাহারী মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে প্রাণপণ চেষ্টা করে রিং বাঁধ দিয়ে জোয়ার-ভাটা আটকাতে পেরেছে। এর আগে গত ১৭ জুলাই কপোতাক্ষ নদের একই স্থানে বেড়িবাঁধের প্রায় তিনশ মিটার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে অন্তত পাঁচটি গ্রাম লোনা পানিতে ডুবে যায়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হন ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ, ভেঙে যায় বহু বসতঘর, ভেসে যায় মাছের ঘের-পুকুর, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইউনিয়নের সব রাস্তা-ঘাট। পরদিন ১৮ জুলাই পাঁচ সহস্রাধিক মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে ভাঙন কবলিত বেড়িবাঁধের ভেতরে রিং বাঁধ নির্মাণ করে লোকালয়ে জোয়ার-ভাটা বন্ধ করতে সক্ষম হন। আর বর্তমান অবস্থা আরও শোচনীয়। মাছের ঘের- পুকুর সব  ভেসে গেছে, তলিয়ে যায় অধিকাংশ গভীর নলকূপ ও মিঠাপানির পুকুর, বসত ঘর-বাড়িতে জোয়ার-ভাটা চলছে, অপেক্ষাকৃত উঁচুস্থান ও আশ্রয় কেন্দ্রে থেকে কোনোমতে দু’বেলা, দু’মুঠো খেয়ে, না খেয়ে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে দিন পার করছেন দক্ষিণ বেদকাশিবাসী। ইউনিয়নের ৫ হাজার ৯৭১ একর আয়তনের সম্পূর্ণ এখন লোনাপানিতে বিষাক্ত হয়ে পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে। এরই মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় গৃহপালিত পশু-পাখির মরদেহ ও মাছ পঁচা দুর্গন্ধে নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে। দেখা দিয়েছে চর্মরোগসহ নানা ব্যাধি।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন মামুনুর রশীদ সোহেল, আলহাজ্ব মো. কবিরুল ইসলাম, মো. আসমাউল হোসাইন সোহাগ, মো. জামাল হোসেন, মো. মাকসুদ আলম, মো. ইমরান খান, মো. আমীর হামজা, আলমগীর হোসেন মুন্না, আসাদুল ইসলাম ও সোহেল হোসেন প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭ , ২০২২
এমআরএম/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad