ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

অধ্যক্ষকে ‘ঘুষ না দেওয়ায়’ জ্যেষ্ঠতার স্কেলপ্রাপ্তির ফাইল আটকা!

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০২২
অধ্যক্ষকে ‘ঘুষ না দেওয়ায়’ জ্যেষ্ঠতার স্কেলপ্রাপ্তির ফাইল আটকা!

ঢাকা : জয়পুরহাটের নান্দাইল দীঘি কলেজের অধ্যক্ষকে ‘ঘুষ না দেওয়ায়’ পাঁচ শিক্ষক-কর্মকর্তার জ্যেষ্ঠতার স্কেলপ্রাপ্তির ফাইল আটকে আছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি তদন্ত করবে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।

এ জন্য একজন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

নান্দাইল দীঘি কলেজটি জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় অবস্থিত। জ্যেষ্ঠতার স্কেলপ্রাপ্তির ফাইল আটকা পড়েছে কলেজের চার প্রভাষক ও এক প্রদর্শকের। এ ঘটনায় গত ১৪ জুন তারা মাউশি মহাপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।

জানা গেছে, লিখিত অভিযোগে তারা নিজ প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মো. সামছুল আলম ফকিরের বিরুদ্ধে জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছেন। এ ছাড়া তাদের জ্যেষ্ঠতার স্কেলপ্রাপ্তির ফাইল ছাড়করণে লাখ টাকা ঘুষ চাওয়ার অভিযোগও তোলা হয় অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে।

অভিযোগে যা আছে
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা লঙ্ঘন করে জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ও প্রদর্শকদের নাম অন্তর্ভুক্ত না করে দ্বিতীয় সিনিয়র স্কেলপ্রাপ্তির ফাইল অগ্রায়ন করেন অধ্যক্ষ। তিনি ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে ফাইল পাঠাতে এক লাখ টাকা করে ঘুষ দাবি করেছেন। এ বিষয়টি তদন্ত পূর্বক সুষ্ঠু পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয় চিঠিতে।

অভিযোগের অনুলিপি দেওয়া হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব, রাজশাহী অঞ্চলের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার পরিচালক, জয়পুরহাটের জেলা প্রশাসক, জয়পুরহাটের জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, কলাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং কলাই উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে।

ভুক্তভোগীরা হলেন- নান্দাইল দীঘি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক মো. জায়েদুল ইসলাম, ইসলাম শিক্ষার প্রভাষক মো. আজিবুর রহমান, অর্থনীতির প্রভাষক আবু সাদত মো. আব্দুল আউয়াল, সমাজকর্মের প্রভাষক রোজিনা আক্তার ও প্রদর্শক মো. ফিরোজ হোসেন মণ্ডল।

তাদের অভিযোগ, সামছুল আলম ফকির তাদের বাদ দিয়ে কলেজের অন্য ১৪ শিক্ষক-কর্মকর্তার নাম অন্তর্ভুক্ত করে দ্বিতীয় সিনিয়র স্কেলপ্রাপ্তির ফাইল মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার রাজশাহী অঞ্চল প্রধানের কাছে পাঠিয়েছেন।

কলেজের ১৯ শিক্ষক-কর্মকর্তা দ্বিতীয় সিনিয়র স্কেল পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন। তাদের মধ্যে পাঁচজনের নাম বাদ দিয়ে ১৪ জুন ফাইল অগ্রায়ন করেন অধ্যক্ষ মো. সামছুল আলম ফকির। যারা টাকা দেননি তাদেরকে তাদের নাম পাঠানো হয়নি।

এসব অভিযোগের ভিত্তিতে গত ৩ আগস্ট রাজশাহী অঞ্চলের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার উপপরিচালক (কলেজ) মো. মাহবুবুর রহমান শাহকে তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয় মাউশি। অভিযোগের বিষয়টি সরেজমিন তদন্ত করে তাকে মতামতসহ প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

কিন্তু মাহবুবুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, তিনি এখনও বিষয়টি নিয়ে মাউশি থেকে কোনো চিঠি পাননি। আগামী সপ্তাহে চিঠি পাওয়ার আশা করছেন তিনি। সেটি হাতে পেলেই তদন্ত শুরু করবেন বলেও জানান মাহবুবুর।

এ ব্যাপারে কথা বলে কলেজের শিক্ষক-কর্মকর্তার কাছ থেকে ঘুষ দাবির বিষয়টি অস্বীকার করেন নান্দাইল দীঘি কলেজের অধ্যক্ষ। সামছুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, পরিচালনা পর্ষদের লিখিত রেজুলেশনের ভিত্তিতে পাঁচজন শিক্ষক-কর্মকর্তার নাম দ্বিতীয় সিনিয়র স্কেলপ্রাপ্তির ফাইলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তারা অনিয়মিত হওয়ার পাশাপাশি কলেজে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করায় পরিচালনা পর্ষদ এ সিদ্ধান্ত নেয়।

দাবি করে অধ্যক্ষ সামছুল বলেন, আমি অধ্যক্ষের চেয়ারে বসে পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত এড়িয়ে যেতে পারি না। অভিযোগকারীরা কলেজে বিধি বহির্ভূতভাবে চলাফেরা, গ্রুপিং করেন। এ ব্যক্তির বিরুদ্ধে তারা অপহরণ মামলাও করেছিল। পরবর্তীতে সেটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়।

কলেজে নিয়মিত পরিচালনা পর্ষদ নেই। তাই অ্যাডহক কমিটি ডেকে পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে নিষেধাজ্ঞার এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নতুন পরিচালনা পর্ষদ এলে ওই পাঁচ শিক্ষক-কর্মকর্তার জ্যেষ্ঠতার স্কেলপ্রাপ্তির বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলেও জানান অধ্যক্ষ সামছুল আলম ফকির।

বাংলাদেশ সময় : ১৭২০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০২২
এমআইএইচ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।