ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

উচ্চশিক্ষার জন্য সহযোগিতার প্রয়োজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মেহেদীর

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০২২
উচ্চশিক্ষার জন্য সহযোগিতার প্রয়োজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মেহেদীর

ঢাকা: খুব ছোট বেলায় এলার্জিজনিত কারণে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন কুড়িগ্রাম জেলা সদর উপজেলার কাজীপাড়া গ্রামের মেহেদী হাসান। তবে দৃষ্টি শক্তি হারালেও দমে যাননি তিনি।

বরং নিজের যোগ্যতায় এগিয়ে নিয়েছেন নিজেকেই। ব্রেইল পদ্ধতির মাধ্যমে লেখাপড়া করে মাধ্যমিক স্কুল পরীক্ষায় (এসএসসি) ২০২১ সালে হয়েছেন ঢাকা বোর্ডে নবম। আর এখন এইচএসসি শেষ করে স্বপ্ন দেখছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের।

বর্তমানে ঢাকা কলেজে একাদশ শ্রেণীর মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মেহেদী হাসান জানান, উচ্চ শিক্ষার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা ফুল-ফ্রি স্কলারশিপ নিয়ে দেশের বাইরে যাওয়ার স্বপ্ন তার। তবে এই পথচলায় প্রয়োজন সাহায্যের। বিশেষ করে শিক্ষা ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে ও তার পরিবারকে।

মেহেদী জানান, পিএসসি, জেএসসি ও এসএসসি ঢাকা বোর্ড থেকেই পাশ করেছেন তিনি। জেএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছেন। এসএসসিতে পুরো ঢাকা বোর্ডে হয়েছেন নবম এবং পেয়েছেন ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি। এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চান তিনি আগামীতেও।

মেহেদী বলেন, লেখাপড়া করতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। আমি দেশের অন্যতম একটা নামকরা কলেজে পড়ছি। আমার পরিবার এবং গ্রামের মানুষ আমাকে মূল্যায়ন করে। আমার স্বপ্ন অনেকদূর এগিয়ে যাওয়ার। আমার পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। একটা উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্রের লেখাপড়ার ব্যয়ভার কিন্তু অনেক। হলে থাকা খাওয়ার একটা বিষয় আছে। আমার পরিবারের অবস্থাও খুব ভালো নয়। আমি বর্তমানে খুবই হতাশার মধ্যে আছি।

তিনি বলেন, উচ্চ মাধ্যমিকে আমরা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী যারা আছি, এখানে ব্রেইল বই পাওয়াটা অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার। আমার পরিবার নিম্নবিত্ত; আমি একটি গরীব পরিবারের সন্তান। সাধারণ শিক্ষার্থী যারা আছে, তারা সবাই মিলে গ্রুপ স্টাডি করতে পারে বা অনেকজন মিলে একটা শিক্ষকের কাছে পড়তে পারে। শিক্ষক ব্ল্যাকবোর্ডে লিখে দিলে তারা খাতায় তুলে নিতে পারে। কিন্তু আমি যেহেতু দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী, সেহেতু আমি সেটি পারি না। সেক্ষেত্রে আমার ব্যক্তিগত শিক্ষক প্রয়োজন, যে আমাকে হাতে কলমে শেখাবেন। এরপর আমার বিভিন্ন বাইরের বই পড়ার ইচ্ছে। যেমন আমার ইচ্ছে আছে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবো বা আইইএলটিএস দিতে চাই। ফুল ফ্রি স্কলারশিপ পেলে দেশের বাইরে যেতে চাই। সেক্ষেত্রে অ্যাডমিশন বা আইইএলটিএস’র বইয়ের ব্রেইলকপির একটা বিষয় আছে। সেদিক থেকে আমার সাহায্য প্রয়োজন।

মেহেদী হাসান বলেন, আমার কুড়িগ্রাম জেলা থেকে আমি ঢাকা কলেজে একাই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী হিসেবে পড়ালেখা করছি। আর কেউ নেই এরকম। আমাদের জেলা থেকেও আর কোনো দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী নেই। দুই চোখের দৃষ্টিই হারানোর পর কুড়িগ্রাম প্রতিবন্ধী কল্যাণ সংস্থার মাধ্যমে এর নির্বাহী পরিচালক আসাদুজ্জামান স্যারের তত্ত্বাবধানে আমি ঢাকা আসি। এরপর থেকে আমি ঢাকাতে। আমি চাই আমার যে সফলতা আল্লাহ দিয়েছেন, এটা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চাই। যারা অসচেতন আছেন তাদের সচেতন করতে। আমার বাবা একজন ট্রাক ড্রাইভার ছিলেন। এখন অবসরে আছেন এবং বয়সের ভারে তিনি আর কর্মক্ষম নন। আমার বড় ভাইয়ের ছোট একটা ফার্মেসি আছে, সেটা দিয়েই আমাদের সংসার চলে। একটা ছোট বোন আছে বাসায়। বাকি বোনদের বিয়ে হয়ে তারা শ্বশুরবাড়ি। মা গৃহিনী। আমি সবার ছোট।

মেহেদী হাসানের মতে, সমাজের এই মানুষগুলোকে অন্ধ না বলে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বলাটাই উত্তম। অনেকে আবার দৃষ্টি জয়ীও বলেন। এছাড়া দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সন্তানের বাবা-মায়েরা ভাবেন পড়তে দিলে কীভাবে পড়বে, কোথায় থাকবে, কী খাবে ইত্যাদি। কিন্তু তাদের লেখাপড়া করালে, সমাজ সবাই পাশে এসে দাঁড়ালে গঠিত হবে সমৃদ্ধ একটি দেশ।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০২২
এইচএমএস/কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।