ঢাকা, মঙ্গলবার, ২ পৌষ ১৪৩১, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

দেশি প্রযুক্তিতে সচল ডেমু, বাস-ট্রাকের মতই ছুটবে রেললাইনে 

মো. আমিরুজ্জামান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০২২
দেশি প্রযুক্তিতে সচল ডেমু, বাস-ট্রাকের মতই ছুটবে রেললাইনে 

নীলফামারী: এবার বাস ট্রাকের মতই রেলওয়ে ট্র্যাকে (রেলপথ) ছুটবে ডিজেল-ইলেক্ট্রিক মাল্টিপল ইউনিট অর্থাৎ ডেমু ট্রেন। চীন থেকে আমদানি করা এসব ট্রেন দীর্ঘদিন অকেজো হয়ে পড়েছিল।

দেশের প্রকৌশলীরা চীনের লুকিয়ে রাখা প্রযুক্তি হটিয়ে নিজেদের প্রযুক্তি ব্যবহার করে দিনাজপুরের পার্বতীপুর ডিজেল ওয়ার্কশপে সচল করেছে ৫টি ডেমু ট্রেন। বাকি ১৫টিও মেরামত করা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০ সেট ডেমু ট্রেন আমদানি করা হয় ২০১৩ সালে। উদ্দেশ্য ছিল ওই ট্রেনের মাধ্যমে কাছাকাছি দূরত্বে ব্যাপক যাত্রী পরিবহন করা। চীনের তানসন ইন্টারন্যাশনাল ও ডানিয়াল টেকনিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট ওই ডেমু ট্রেনের নির্মাতা। ট্রেনগুলো বিশ্বমানের ও আধুনিক। কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত ওই ট্রেনগুলো এক ধরনের বিশেষ সফটওয়্যার দিয়ে পরিচালিত। যে প্রযুক্তি কখনোই সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশকে হস্তান্তর করেনি। এর মডিউল বিকল হলে নতুন মডিউলের সঙ্গে সফটওয়্যার সেটআপ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিত। এর জন্য ধর্ণা দিতে হত চীনা প্রকৌশলীদের কাছে। যা ছিল অনেক ব্যয়বহুল। একটি ডেমুতে ৪০টি মডিউল রয়েছে। যার এক একটির দাম প্রায় ৭ লাখ টাকা। চীনা প্রকৌশলীরা প্রযুক্তি হস্তান্তর না করায় একটার পর একটা ট্রেন বিকল হতে থাকে।  
সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (ডিএস) মো. সাদেকুর রহমান জানান, দেশে দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল ওই ট্রেনগুলো। স্বল্প দূরত্বের হলেও দীর্ঘ দূরত্বেও চালানো হয়েছে ট্রেনগুলো। ২০২০ সালে মেরামতের অভাবে ট্রেনগুলো বিকল হয়ে যায়। এসব সচল করতে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রোলিং স্টক) মো. মঞ্জুর উল আলম চৌধুরী। তিনি দেশি প্রকৌশলীদের সহযোগিতা নিয়ে ডেমু ট্রেন মেরামতে দেশীয় প্রযুক্তি উদ্ভাবনে উদ্যোগী হন।  

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক শিক্ষার্থী ও আনবিক শক্তি কমিশনের সাবেক কর্মকর্তা প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামানের সহযোগিতা চাওয়া হয়। আসাদুজ্জামান ডেমু নিয়ে ইতোমধ্যে গবেষণা শুরু করেন। গবেষণাগার হিসেবে তিনি বেছে নেন সৈয়দপুর রেলওয়ে অফিসার্স ক্লাবের একটি কক্ষ। ৭২ দিনের প্রচেষ্টায় তিনি উদ্ভাবন করে ফেলেন বাস ট্রাকের মতই ডেমু চালানোর প্রযুক্তি। ব্যয়বহুল মডিউল হটিয়ে দেন তিনি। সেক্ষেত্রে বসানো হয় মাত্র ২টি কন্ট্রোলার। আর চালু হয়ে যায় অচল ট্রেন।

মো. আসাদুজ্জামান বলেন, দেশি প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা ৫ সেট ডেমু সচল করতে সক্ষম হয়েছি। দু’মুখে দুটি ইঞ্জিন মাঝখানে একটি কোচ। এসব আধুনিক ট্রেনে পর্যায়ক্রমে লোড বাড়িয়ে ট্রায়ালরান (পরীক্ষামূলক চলাচল) সম্পন্ন করা হয়েছে। ৮টি ট্রায়ালরানে প্রতিটিতে আমরা সাফল্য পেয়েছি। আমাদের এ কাজে সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (আরএস)।
তিনি বলেন, একটি ডেমু ট্রেন মেরামতে ব্যয় হয়েছে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা। যা আমদানি করা হলে কয়েক গুন বেশি টাকা ব্যয় হত।  

পার্বতীপুরে কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানার (কেলোকা) প্রধান নির্বাহী (সিএক্স) মো. রফিকুল ইসলাম জানান, দেশি প্রযুক্তিতে ডেমু মেরামত আমাদের বিশাল অর্জন। একে বড় সাফল্য বলা যেতে পারে। এ প্রযুক্তিতে ট্রেন মেরামত করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হয়েছে। তবে এ ধরনের ডেমু মেরামতের জন্য আমাদের ডেডিকেটেড রেলওয়ে কারখানা প্রয়োজন।

এ ব্যাপারে কথা হয় বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (আরএস) মো. মঞ্জুর উল আলম চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, অকেজো ডেমু মেরামত করে আমাদের প্রকৌশলীরা যুগান্তকারী সাফল্য দেখিয়েছেন। এ নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট (পরীক্ষা-নিরীক্ষা) করতে গিয়ে আমাদের জনবল দক্ষ হয়েছেন। তাদের মাধ্যমে পরবর্তী মেরামত কাজ সহজ হবে। আমরা সবকটি ডেমু ট্রেন মেরামত করে ফেলবো। যা দিয়ে বাড়ানো হবে গণপরিবহন সেবা। ভবিষ্যতে রেলওয়েতে নতুন লোকবল নিয়োগ ও বিভিন্নমুখি প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪২০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।