ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

জলোচ্ছ্বাস থেকে হাজারো মহিষকে সুরক্ষা দিল আধুনিক কিল্লা

ছোটন সাহা, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২২
জলোচ্ছ্বাস থেকে হাজারো মহিষকে সুরক্ষা দিল আধুনিক কিল্লা আধুনিক কিল্লা।

ভোলা: টানা পাঁচ দিনের জোয়ারে উপকূলের বিস্তীর্ণ জনপদ প্লাবিত হলেও জলোচ্ছ্বাস থেকে ভোলার চরাঞ্চলের হাজার হাজার মহিষকে সুরক্ষা দিয়েছে আধুনিক কিল্লা। এ কিল্লা থাকায় স্বস্তি ফিরে এসেছে বাথানিদের।

জানা গেছে, গত দুই মাসে ৮ দফা বন্যায় উপকূল প্লাবিত হলেও জোয়ারে ভেসে যায়নি কোনো মহিষ, মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেনি। এতে বড় ধরনের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন কৃষকরা। বজ্রপাতেও নিহত হয়নি বাথানের মহিষ।

ভলুমিয়ার চন্দ্র প্রসাদ ও ভেতুরিয়ার চর চটকিমারাসহ বিভিন্ন চরাঞ্চল ঘুরে বাথানিদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। এ সময় বাথানিরা (মহিষ পালনকারী) চরাঞ্চলে আরও আধুনিক কিল্লা নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।



খোঁজ নিয়ে জানা গেল, প্রতি বছরই মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঝড় জলোচ্ছ্বাস বয়ে যায় ভোলার উপকূলের ওপর দিয়ে। এতে জোয়ারের পানিতে ভেসে যায় শত শত মহিষ। কখনও বজ্রপাত বা পানিতে ডুবেই মারা যায় এসব মহিষ। এতে লোকসানের মুখে পড়তেন বাথানিরা।  

ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা, মহাসেন ও ইয়াসের প্রভাবে উপকূলে ৪-৫ ফুট জলোচ্ছ্বাস হয়ে মারা গেছে কয়েক হাজার মহিষ। এছাড়াও শুষ্ক মৌসুম বাদে সারা বছরই উপকূলে অমাবস্যা এবং পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে প্লাবিত হয় উপকূল। তখন জোয়ারে ভেসে যায় মহিষ, এমনকি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। যদিও মাটির কিল্লা রয়েছে কিন্তু সেগুলো টেকসই না থাকায় দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা পায় না মহিষগুলো।

এ অবস্থায় মহিষের পরিবেশগত ও টেকসই উন্নয়ন এবং মহিষের মৃত্যু ও ক্ষতি এড়াতে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) সাসটেইনেবল এন্টারপ্রাইজ প্রজেক্ট বাংলাদেশে প্রথমবারের মত নির্মিত করেছে আধুনিক কিল্লা।

গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে গত বছর এবং এ বছর আধুনিক সুবিধার তিন কিল্লা ভোলার চর চটকিমারা, ভেলুমিয়ার চন্দ্র প্রসাদ ও মাঝের চরে নির্মাণ করা হয়।

নদীর মাঝে দুর্গম চরে পাকা ভবন, বজ্রনিরোধ দণ্ড, সুপেয় পানির ব্যবস্থা ও সৌর বিদ্যুৎতায়ন সুবিধাসহ আধুনিক এ কিল্লা থাকায় প্রাকৃতিক যেকোন দুর্যোগে এখন রক্ষা পাচ্ছে মহিষ। এখানে মহিষের চিকিৎসার সংস্থান, পরিচ্ছন্ন পরিবেশে দুধ দোহানোর ব্যবস্থা বাথানিদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা। এতে একদিকে যেমন মহিষ পালনে বাথানিদের আগ্রহ বেড়েছে অন্যদিকে বিপুল পরিমাণ সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে। যে কারণে খুশি বাথানিরা।

বাথানিরা বলছেন, এ মাসে গত কয়েকদিনের লঘু চাপে উপকূল প্লাবিত হলেও ভেসে যায়নি কোনো মহিষ। সুরক্ষিত ছিলো তাদের মহিষ।
চন্দ্র প্রসাদ গ্রামের বাথানি রেজিউল হাওলাদার বলেন, আমার ৪০টি মহিষ রয়েছে, আগের সেসব মহিষ মাটির বিল্লায় রাখতাম। সেই কিল্লাও পানিতে ডুবে যেত, ভেসে যেত মহিষ, আবার জলাবদ্ধতায় মহিষের ওষুখ হতো। এতে প্রতি বছরই আমাদর লোকসান গুনতে হত। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হতাম। কিন্তু এখন আধুনিক কিল্লা নির্মাণ করায় আমাদের মহিষ অনেক নিরাপদ এবং সুরক্ষিত।

বাথানি বশার মাঝি বলেন, আমার ৩৫টি মহিষ থাকলেও ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সময় সেগুলো কোথায় রাখবো তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতাম, এখন আমরা চিন্তামুক্ত। আমাদের চরে আধুনিক কিল্লা হয়েছে।

একই কথা বলেন, কামরুল, মাইনুদ্দিন, ইব্রাহিমসহ অন্য বাথানরা। তাদের দাবি এ ধরনের আধুনিক কিল্লা যেন আরও নির্মাণ হয়।

জানা গেছে, ভোলার অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে মহিষ। বিশেষ করে মহিষের উৎপাদিত দুধ বিক্রির টাকায় বাথানিদের জীবিকা চলে।

চরাঞ্চলের বিপুল পরিমাণ জনগোষ্ঠীর জীবিকা নিশ্চিতে ভবিষ্যতে আরও আধুনিক কিল্লা নির্মাণের কথা ভাছে জিজেইউস এর সহকারী পরিচালক
ডা. তরুন কুমার পাল।  

তিনি বলেন, বাংলাদেশে এই প্রথম আধুনিক কিল্লা নির্মাণ হয়েছে। এটি উপকূলের সব স্থানে নির্মিত হলে বাথানিরা উপকৃত হবে। মহিষ পালন আরও সম্প্রসারণ হবে, সম্ভাবনা তৈরি হবে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে।

জানতে চাইলে জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ইন্দ্রজিৎ কুমার মণ্ডল বলেন, গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা ভোলার তিনটি চরে যে আধুনিক কিল্লা নির্মাণ করেছে, তা মহিষ পালনের সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছে। এসব কিল্লা অনেকটাই নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত। যে কারণে দুর্যোগের সময় মহিষ ভেসে যাওয়া, রোগে আক্রান্ত বা মহিষের মৃত্যু কমে যাবে।

এদিকে দ্বীপজেলা ভোলায় ২৫টি চরে এক লাখের বেশি মহিষ রয়েছে। যা থেকে প্রতি বছরই ১৬ হাজার মেট্রিক টন দুধ উৎপাদন হয়ে থাকে।
  
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।