ঢাকা, রবিবার, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ১২ মে ২০২৪, ০৩ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বৈধভাবে সিম দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২২
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বৈধভাবে সিম দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি

ঢাকা: রোহিঙ্গাদের সহজ শর্তে ও সুলভ মূল্যে মোবাইল ফোনের সিম দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন জাতীয় সংগ্রাম কমিটি এই দাবি জানিয়েছে।

বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধন ও সমাবেশ থেকে এই দাবি জানানো হয়েছে।

মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, দীর্ঘ পাঁচ বছর যাবত শরণার্থী হিসেবে আশ্রিত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকরা বাংলাদেশের নেটওয়ার্ক ব্যবহারের পাশাপাশি মিয়ানমারের এমটিএমসির টেলিকম নেটওয়ার্কও ব্যবহার করে আসছে যা সম্পূর্ণভাবে অবৈধ এবং অসাংবিধানিক। আমরা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে মাঝে মাঝে বিটিআরসির কিছু কর্মকর্তাদের পরিদর্শনে পাঠানো হয়। কিন্তু বাস্তবে এখন পর্যন্ত কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

তিনি বলেন, ২০১৫ সালে সরকার দেশে যখন বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন প্রক্রিয়া চালু করে তখন সেই নীতিমালায় বলা হয় বাংলাদেশের কোনো বৈধ নাগরিক যার বয়স ১৮ বছর তিনি জাতীয় পরিচয় পত্র বা তার পাসপোর্ট দিয়ে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন করতে পারবে। অথচ মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকরা আমাদের দেশের নাগরিকদের নামে ব্যবহৃত সিম অবৈধভাবে ব্যবহারের পাশাপাশি মিয়ানমারের টেলিকম নেটওয়ার্ক ব্যবহার করছে দেদারসে। এর মাধ্যমে মিয়ানমারে টেলিকম প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ও ব্যবসা পরিচালনা করছে। টেলিকম সেবা ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা মিয়ানমারে চলে গেছে।

তিনি আরও বলেন, কার্যত বর্তমান টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী এবং বিটিআরসি চেয়ারম্যান প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে। সেই ব্যর্থতার দায়ভার ঘোঁচাতে তারা রোহিঙ্গাদের বৈধ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পাঁচটি করে সিম দেওয়ার পাঁয়তারা করেছে। এর মাধ্যমে হয়তো অপারেটরদের মোটা দাগে কিছু ব্যবসা পরিচালনা হবে। কিন্তু দেশের অভ্যন্তরে অরাজকতা, সন্ত্রাস মাদক ও এইডস এর মতো মহামারি ব্যাপকতা সৃষ্টি করতে পারে। এর সুষ্ঠু সমাধানের জন্য আমাদের মতামত হচ্ছে সবার আগে অবৈধ নেটওয়ার্ক বন্ধ ও সব অবৈধ সিম জব্দ করা। দ্বিতীয়ত, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সঙ্গে বসে স্থানীয় প্রতিনিধি এবং বিশেষজ্ঞদের মতামতের প্রেক্ষিতেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।

সভাপতির বক্তব্যে আতাউল্লাহ খান বলেন, আমরা বাংলাদেশি নাগরিকরা আজ মহা বিপদে। মানবিক বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে যে মানবতা দেখিয়েছেন তা যে আমাদের জন্য এত বড় কাল হয়ে দাঁড়াবে তা বুঝতে পারিনি। আমরা দেখেছি মহিবুল্লাহ এই অবৈধ মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে কীভাবে লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে নিয়ে সমাবেশ করেছিল। এই রোহিঙ্গারা অবৈধ নেটওয়ার্ক ও সিম ব্যবহার করে মাদক পাচার, অর্থ পাচার, চোরা চালান এবং অসামাজিক কার্যে জড়িত হয়ে হাজারের মতো এইডস রোগী আজ শুধু কক্সবাজার জেলা নয়, সারা বাংলাদেশের জন্য আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।

তিনি বলেন, টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মানবতার আড়ালে ব্যবসায়ীদের সুবিধা করে দেওয়ার যে পাঁয়তারা তা আমরা বুঝি। কোনভাবেই রোহিঙ্গাদের বৈধভাবে পাঁচটি করে সিম দেওয়া যাবে না। তার মানে আমরা অমানবিক এ কথা বলা যাবে না। আমরা তাদের আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার্থে সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী যেভাবে টেলিফোন বুথ তৈরি করে সেখানে গিয়ে কথা বলার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন বিনামূল্যে সেটি কেন বন্ধ হল? সব সিম উদ্ধার করে সঠিক মালিকদের কাছে সেই সিম বুঝিয়ে দিতে হবে। সেই সঙ্গে টেলিফোন বুথের মাধ্যমে তাদের যোগাযোগের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। রোহিঙ্গাদের অবৈধ কারবারের ফলে স্থানীয় জনগোষ্ঠী যে সব মামলা-হামলার শিকার হয়েছে তার যথাযথ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

উখিয়া পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সংগঠনের সদস্য সচিব এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমরা যারা স্থানীয় অধিবাসী, তারা আজ মহা বিপদে। রোহিঙ্গারা মিয়ানমার এবং বাংলাদেশ উভয় নেটওয়ার্ক ব্যবহার করছে। এমনিতেই তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ। বর্তমানে তাদের ব্যবহৃত সব সিম জব্দ না করে টেলিযোগাযোগ  মন্ত্রণালয় ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছে। তারা বলছে বৈধভাবে দিলে অবৈধ ব্যবহার বন্ধ হবে- এটা হাস্যকর কথা। সরকারের উচিত হবে তাদেরকে অবৈধ সব নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেওয়া। তা না করে নতুন করে বৈধভাবে সিম দিয়ে সিদ্ধান্ত হবে আত্মঘাতীমূলক। আমরা এ সিদ্ধান্ত মানি না।

সমাবেশে পুলিশের সাবেক ডিআইজি বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি রোহিঙ্গাদের নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত কাজ করছি। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলতে চাই রোহিঙ্গাদের নতুন করে বৈধভাবে সিম দেওয়ার সিদ্ধান্ত একদিকে যেমন সংবিধান পরিপন্থী, তেমনিভাবে ভুল সিদ্ধান্ত।

সমাবেশের আরও বক্তব্য রাখেন লেবার পার্টির মহাসচিব আব্দুল্লাহ মামুন, সাধারণ নাগরিক সমাজের কো-অর্ডিনেটর শেখ ফরিদ, উখিয়ার স্থানীয় সাংবাদিক জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন স্তরের নাগরিকরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২২
এমআইএইচ/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।