ঢাকা, রবিবার, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৯ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

বরিশাল মহাসড়কে নামমাত্র দায়িত্বে হাইওয়ে পুলিশ!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২২
বরিশাল মহাসড়কে নামমাত্র দায়িত্বে হাইওয়ে পুলিশ!

বরিশাল: পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক-মহাসড়কগুলোয় বেড়েছে বিভিন্ন ধরণের যানবাহনের চাপ। মহাসড়কে স্বল্প ও উচ্চ গতির যানবাহন চলাচলে সমন্বয়হীনতা ও থ্রি-হুইলারসহ অবৈধ যানবাহনের কারণে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।

নানা উদ্যোগেও নজরদারী নেই; তাই বছরের পর বছর ধরে মহাসড়ক থেকে সরানো যাচ্ছে না এসব অবৈধ যানবাহন। নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি এ অঞ্চলের যানবাহনের বেপরোয়া গতি ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলাচল। অভিযোগ উঠেছে হাইওয়ে পুলিশের নামমাত্র দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে।

পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গোটা বরিশাল বিভাগে হাইওয়ে থানা পুলিশের বিস্তার ও সক্ষমতা কম থাকায় মহাসড়কের সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। কারণ, হাইওয়ে পুলিশ বর্তমানে বিভাগের ১ হাজার কিলোমিটার জাতীয়, আঞ্চলিক ও জেলা মহাসড়কের মধ্যে মাত্র অর্ধশত কিলোমিটারের মতো সড়কের দেখভাল করে। অবৈধ যানবাহন ও দুর্ঘটনা রোধে হাইওয়েতে পুলিশি নজরদারী বাড়ানোর দাবি পরিবহন চালক-শ্রমিকদের।  

অভিযোগ থাকলেও এ ব্যাপারে বরিশালের হাইওয়ে পুলিশ কিছু বলেনি। তবে, অল্প সময়ের মধ্যে তাদের সক্ষমতা বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের বিভাগের ২০২০-২০২১ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বরিশাল সড়ক জোনের আওতায় দুটি সার্কেল রয়েছে। যার মধ্যে বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর ও ভোলা সড়ক বিভাগের সমন্বয়ে বরিশাল সড়ক সার্কেল এবং পটুয়াখালী ও বরগুনা সড়ক বিভাগের সমন্বয়ে পটুয়াখালী সড়ক সার্কেল গঠিত।

বরিশাল জোনের আওতায় ৬১ জেলা মহাসড়ক, ৭টি আঞ্চলিক মহাসড়ক ও তিনটি জাতীয় মহাসড়ক রয়েছে। যার আওতাধীন মোট মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৬০৩ দশমিক ৯৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে বরগুনা ও পিরোজপুর ব্যতীত ৪ জেলায় মোট জাতীয় মহাসড়ক রয়েছে ১২৭ দশমিক ৯৮ কিলোমিটার। এছাড়া ৬ জেলায় আঞ্চলিক মহাসড়ক রয়েছে ২৯০ দশমিক ৯ কিলোমিটার এবং জেলা মহাসড়ক রয়েছে ১ হাজার ১৮৫ দশমিক ৯১ কিলোমিটার।

এর মধ্য মাদারীপুর জোনের আওতায় গৌরনদী উপজেলার ভুরঘাটা থেকে বাবুগঞ্জের রাকুদিয়ার নতুনহাট পর্যন্ত (প্রায় ৩৩ কিলোমিটার ) মহাসড়কের দেখভাল করে
গৌরনদী হাইওয়ে থানা। বিষয়টি নিশ্চিত করে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ বেলাল হোসেন বলেন, পরের অংশে স্ব স্ব থানা পুলিশ দায়িত্ব পালন করে। তবে পিরোজপুর জেলার মহাসড়কের কিছু অংশ কাটাখালী হাইওয়ে পুলিশ দেখভাল করে বলে জানান তিনি।

বাগেরহাটের কাটাখালী হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী বলেন, আমরা পিরোজপুর জেলার মধ্যে আনুমানিক ৭-৮ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়ক দেখভাল করি, বাকিটা জেলার স্ব-স্ব থানা পুলিশ দেখভাল করেন।

সে হিসেবে জেলা মহাসড়কের হাজার কিলোমিটার পথ বাদ দিয়ে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক মিলিয়ে ১২ ভাগের একভাগ পথের দেখভাল করে হাইওয়ে পুলিশ।

অপরদিকে বরিশালের ৬ জেলার মধ্যে থাকা একটি সিটি করপোরেশন, ২৬টি পৌরসভা ও ৪২টি উপজেলার বিভিন্ন সড়কের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় কাজ করছে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ ও রেঞ্জ পুলিশের আওতাধীন ৬ জেলা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। আর এই কাজের সঙ্গে স্ব-স্ব অধিক্ষেত্রে থাকা বিভিন্ন ক্যাটাগরির মহাসড়কেও কার্যক্রম পরিচালনা করছে ট্রাফিক বিভাগের সদস্যরা।

উভয় ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমান জনবল দিয়ে সিটি করপোরেশন, পৌরশহর, উপজেলা সদরগুলোর ট্রাফিক ব্যবস্থা দেখভাল করতেই হিমশিম খেতে হয় তাদের। সেখানে মহাসড়কের দেখভাল করাটা অনেকটাই কঠিন হয়ে পড়ে তাদের। তারপরও সমন্বয় করে মহাসড়কে নিয়মিত চেকপোস্ট বসিয়ে অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়। তবে তা অপ্রতুল হওয়ায় অবৈধ যানবাহন রোধ, গতি নিয়ন্ত্রণে শতভাগ কার্যকর ভূমিকা রাখা সম্ভব হচ্ছে না।

এ বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শেখ মো. সেলিম বলেন, দিনে দিনে বরিশাল নগরে যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে, তবে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর এর সংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে। এখন বরিশাল শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে প্রায়ই যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে নতুন নতুন পয়েন্টে ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু করতে হচ্ছে। তার ওপর গোটা মেট্রোপলিটন এলাকার মধ্য দিয়ে যাওয়া জাতীয়, আঞ্চলিক ও জেলা মহাসড়কের দায়িত্বও আমাদের পালন করতে হচ্ছে। জনবল সংকটের মধ্যে বর্তমানে ট্রাফিক ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখাটাই আমাদের সদস্যদের জন্য কষ্টকর হয়ে পরেছে। সেক্ষেত্রে হাইওয়ে পুলিশ গোটা মহাসড়কের দায়িত্বে থাকলে কাজের সুবিধা হবে বলে মনে করেন এ কর্মকর্তা।

যদিও হাইওয়ে পুলিশের মাদারীপুর জোনে সদ্য যোগদানকৃত পুলিশ সুপার মো. মাহাবুবুল আলম বলেন, গোটা দেশের সাথে বরিশাল অঞ্চলেও দ্রুত হাইওয়ে পুলিশের সক্ষমতা বাড়ানো হবে। আমরা আশা করি এতে করে মহাসড়কে চলাচলকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি সার্বিক বিষয়ে নজরদারী বাড়বে।

তিনি আরও বলেন, দুর্ঘটনার বিষয়টি আমাদের কারও হাতে নেই। তবে এটি রোধে প্রতিনিয়ত আমরা সুবিধাভোগীদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভা-সেমিনার করছি। প্রয়োজনে মহাসড়কে নজরদারী বাড়ানোর পাশাপাশি সচেতনতামূলক প্রচারণার কার্যক্রম বাড়ানো হবে।

এদিকে একটি সূত্র বলছে, শিগগির হাইওয়ে পুলিশে বড় ধরণের পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। যেখানে হাইওয়ে অঞ্চল বা রিজিওনের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি থানা, যানবাহন ও সদস্যদের সংখ্যাও বাড়ানো হবে। প্রস্তাবে থাকা নতুন ৭২ থানার মধ্যে বরিশাল বিভাগে রয়েছে ৯টি। এগুলোর মধ্যে পটুয়াখালীর পায়রা, লেবুখালী ও কুয়াকাটা, ঝালকাঠির গাবখান ও দপদপিয়া, পিরোজপুর সদর, বরগুনার আমতলী, ভোলার বাংলাবাজার ও চরফ্যাশনে হাইওয়ে থানা করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২২
এমএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।