ঢাকা: মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি দীর্ঘদিন নিয়ন্ত্রিত থাকলেও গত কয়েকদিন থেকেই ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। করোনার এমন প্রবণতার জন্য ওমিক্রনের নতুন দুটি সাব-ভ্যারিয়েন্টকে (উপ-ধরন) দায়ী করছে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান।
মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা আক্রান্ত হয়ে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত দেশে করোনায় মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৩৪৫ জনের। এদিন নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৬১৪ জন। সব মিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ১৮ হাজার ৮২৯ জন।
এর আগে গত শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর)আইসিডিডিআরবির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক তথ্য থেকে জানা যায়, করোনার সংক্রমণের গতি প্রকৃতি নির্ণয়ে গত ২৩ জুলাই থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইসিডিডিআরবি ৩৮টি জিনোম সিকোয়েন্স করেছে।
এতে রাজধানী ঢাকায় ওমিক্রনের দুটি নতুন উপ-ধরনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ঢাকায় পরিচালিত জিনোম সিকোয়েন্সে পাওয়া তথ্য দেখা যায়, শুধু ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টগুলোর মাধ্যে ২৬টি ওমিক্রন বিএ.৫ এবং ১২টি ওমিক্রন বিএ.২ পাওয়া গেছে।
এতে আরও বলা হয়, প্রাথমিকভাবে রাজধানীসহ সারাদেশে ওমিক্রনের বিএ.৫ সাব-ভ্যারিয়েন্ট সবচেয়ে বেশি প্রচলিত ছিল। তবে, গত তিন সপ্তাহে তা বিএ.৫ থেকে বিএ.২ -তে স্থানান্তরিত হয়েছে, যা একটি বড় পরিবর্তন। একই সময়ে বিএ.২.৭৫ (n=6) ও বিজে.১ (n=1) (যা মূলত বিএ.২ থেকে উৎপন্ন হয়েছে) নামে নতুন দুটি সাব-ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির প্রাপ্ত তথ্য মতে সারা দেশে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য নতুন এই সাব-ভ্যারিয়েন্টগুলোই দায়ী।
অপরদিকে ইনস্টিটিউট ফর ডেভেলপিং সায়েন্স অ্যান্ড হেলথ ইনিশিয়েটিভের (আইডিইএসএইচআই) এক প্রতিবেদনেও একই চিত্র উঠে এসেছে। তারা ঢাকা শহরে ওমিক্রন বিএ.২.৭৫ এবং বিজে.১ উভয় উপ-ধরন শনাক্ত করেছে।
ওমিক্রনের নতুন উপ-ধরনের বিষয়ে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও জিনোম সেন্টারের সহযোগী পরিচালক অধ্যাপক ড. ইকবাল কবীর জাহিদ বাংলানিউজকে বলেন, ভাইরাসের সাধারণত দুটি বিষয় থাকে, একটি রোগ তৈরি করার ক্ষমতা, আরেকটি সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষমতা। সাম্প্রতিককালে আমরা দেখেছি দেশে বিএ৪৫ এবং বিএ২.৭৫ এ দুটোই পাওয়া গিয়েছে। ওমিক্রনের নতুন দুই উপ-ধরনের স্পাইক প্রোটিনে মিউটেশনের ফলে রোগের তীব্রতা না থাকলেও সংক্রমণ ক্ষমতা বেশি। বিএ২.৭৫ ভারত থেকে আমাদের দেশে ছড়িয়েছে।
এ গবেষক আরও বলেন, বাংলাদেশে এখন যে সংক্রমণ বাড়ছে, সেটা বিএ৪৫ এবং বিএ২.৭৫ কারণে। এর মধ্যে আবার বিএ২.৭৫ বেশি সংক্রামক। ফলে এখন যে সংক্রমণ বাড়ছে সেটার জন্য মূলত বিএ২.৭৫ দায়ী। আরও বেশি পরিমাণে জিনোম সিকোনসিং করলে বোঝা যেত, মূলত এটার কারণেই দেশে সংক্রমণ বাড়ছে। করোনার এ ধরণে কেউ আক্রান্ত হলে, সে হয়তো বুঝতেও পারবে না, কিন্তু সংক্রমণ ছড়াবে। এই ধরণে রোগের তীব্রতা কম, তবে সংক্রমণ ক্ষমতা অনেক বেশি। আমাদের কাছে যদি সারা বাংলাদেশের অনেক বেশি স্যাম্পল এবং সিকোনসিংয়ের তথ্য থাকতো, তাহলে এটা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারতাম। তবে আমাদের যে তথ্য আছে, তাতে দেখা যাচ্ছে বর্তমানে বিএ২.৭৫ সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। এর পাশাপাশি বিএ৪৫ রয়েছে কিছুটা।
ওমিক্রনের নতুন এ দুই ধরনের মানুষের শরীরের অ্যান্টিবডি বা টিকাকে ফাঁকি দিতে পারে বলেও তিনি জানান।
করোনা থেকে সুরক্ষিত থাকতে মাস্ক পড়ার বিষয়ে গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে যবিপ্রবির জিনোম সেন্টারের এ সহযোগী পরিচালক বলেন, এখন মানুষের মধ্য থেকে করোনার ভীতি চলে গিয়েছে, তাই মাস্ক পড়ার বিষয়ে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি না। স্বাস্থ্যবিধিও প্রায় সব ক্ষেত্রে প্রচণ্ডভাবে উপেক্ষিত। আমাদের মনে রাখা দরকার করোনার যে ধরনই হোক না কেন, মাস্ক প্রায় ৯০ শতাংশ সুরক্ষা দেয়। মাস্ক শুধু করোনা ভাইরাস নয়, অন্যান্য রোগ জীবাণু থেকেও সুরক্ষা দেয়, তাই আমাদের মাস্ক পড়ার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে, পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধিও মানতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২২
আরকেআর/এমএমজেড