ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ই-টিকিটেও বসুমতি পরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়

নিশাত বিজয়, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২২
ই-টিকিটেও বসুমতি পরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়

ঢাকা: রাজধানীর গণ-পরিবহনে নতুন করে চালু হওয়া ই-টিকিটে স্বস্তি ফিরলেও বিচ্ছিন্ন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। নতুন পদ্ধতি চালু করা হলেও বন্ধ হয়নি অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, রাস্তা থেকে যত্রতত্র যাত্রী ওঠা-নামা।

নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়ার টিকিট না দিয়ে কয়েক স্টপেজ দূরের টিকিট কাটানোর অভিযোগও করেছেন অনেক যাত্রী।

শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন পরিবহনে ভ্রমণ করে এ চিত্র দেখা গেছে। মিরপুর-১ থেকে উঠে খিলক্ষেতে যাওয়ার সময় দেখা গেছে নাজমুস সাকিব সাকিল নামে এক যাত্রীকে বসুমতি বাস থেকে জসিমউদদীন অ্যাভিনিউর ই-টিকিট কেটে দেওয়া হয়েছে। এজন্য তাকে ভাড়া দিতে হয়েছে ৩৯ টাকা। যদিও তার গন্তব্যের মূল ভাড়া ২৯ টাকা।

জানতে চাইলে সাকিল বলেন, কোম্পানির নাকি এটাই নিয়ম; খিলক্ষেতের টিকিট নেই। জসিমউদ্দীনের টিকিট নিতে হবে।

বসুমতি বাস কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করেন মুহাম্মদ আবুল হোসেন নামে এক যাত্রী। তিনি জানান, ১৫ দশমিক ২ কিলোমিটারের ভাড়া ৩৭ টাকা; অথচ টিকিটের দাম নেওয়া হয়েছে ৪২ টাকা।

বাংলানিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক মিরাজ মাহবুব ইফতিও জানান বসুমতি বাসে তার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা। তিনি কালশী মোড় থেকে মিরপুর-১ গিয়েছিলেন। পথের দূরত্ব ৫ কিলোমিটার, ভাড়া ১২ টাকা। কিন্তু তার কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ১৫ টাকা। ইফতি বলেন, বসুমতি বাস অধিকাংশ যাত্রীর কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এসব ভোগান্তি থাকলেও সার্বিকভাবে যাত্রী খুশি বলে জানা গেছে। শিক্ষার্থীদের হাফ-ভাড়া নিয়ে কোনো সমস্যা হচ্ছে ই-টিকিটে।

বসুমতি ছাড়া ই-টিকেট চালু হওয়া অন্য বাসগুলোর বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ নেই। তবে আছে যত্রতত্র যাত্রী তোলা-নামানোর অভিযোগ।

ট্রান্স সিলভা বাসে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা জানিয়ে মুহাম্মদ ইউসুফ খান নামে একজন বলেন, যাত্রাবাড়ী থেকে বাসে ওঠার সময় যাত্রাবাড়ী থেকে মিরপুর-১ টিকিট কাটার কিছু পরে বাস আসলো। বাসের সিট পরিপূর্ণ ছিল। কাউকে টিকিট ছাড়া উঠতে দেয়নি, যারা টিকিট ছাড়া ছিল তাদেরকেও টিকিট কেটে দিল। গুলিস্তান পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। এরপর শুরু হয় অনিয়ম। পল্টন পার হওয়ার পর দেখলাম দুজনকে টিকিট ছাড়া তুলে নিলো হেলপার। এভাবে আসাদগেট পর্যন্ত চললো। অনেকেই এ ব্যাপারে প্রতিবাদ জানালো। কিন্তু হেলপারের কোনো বিকার দেখা যায়নি। টেকনিক্যাল আসার আগে তাড়াতাড়ি ভাড়া কেটে কয়েকজনকে নামিয়ে দেওয়া হয়।

মাঝপথে যাত্রী না তুললে বাস মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন এমন আশঙ্কাও দেখছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।

শৃঙ্খলা না ফিরলে সুফল পাওয়া যাবে না
সেভ দ্য রোডের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মোমিন মেহেদী বলেন, শুধু ই-টিকিটিং ব্যবস্থা চালু করলেই হবে না। কঠোর মনিটরিং করা প্রয়োজন। বিআরটিএ থেকে যে অভিযান পরিচালনা হয়, সেগুলো সবসময় করতে হবে। শুধুমাত্র নির্দিষ্ট ঘটনার সময় করলে গণ-পরিবহনের সুফল পাওয়া যাবে না।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. হাদিউজ্জামান বলেন, সড়কে ই-টিকিটিং ব্যবস্থায় ফিরলে যাত্রীর কাছ থেকে যে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হতো সেটা থাকবে না। এটি খুবই ভালো উদ্যোগ। কিন্তু সড়কে বাসের মানগুলোর পরিবর্তন আনা উচিত। যে বাসগুলো চলে তার অধিকাংশই লক্কড়-ঝক্কড়। তাই শুধু ই-টিকিটিং ব্যবস্থায় সীমবাদ্ধ থাকলে হবে না, বাকি দিকগুলোতেও নজর দেওয়া উচিত।

ধীরে ধীরে পুরো সিস্টেমে ই-টিকিটিং ব্যবস্থা চালু করা হবে। এতে সড়কে পুরো শৃঙ্খলা চলে আসবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ।

রোববার থেকে আরও ৫ রুটে ই-টিকিটিং
আগামীকাল রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) থেকে পরীক্ষামূলক ই-টিকিটিং চালু করার কথা ভাবছে বেসরকারি আরও ৫টি পরিবহন। এনায়েত উল্যাহ এ ব্যাপারে বলেন, ঢাকার যে ৫টি কোম্পানির কথা বলা হয়েছিল তারা ই-টিকিটিং ব্যবস্থায় চালু করবে; সেগুলোর কয়েকটি চালু হয়েছে। বাকিগুলো রোববারের মধ্যে চালু হবে।

এর আগে থেকেই বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির উদ্যোগে পরীক্ষামূলকভাবে ঢাকা নগর পরিবহনের বাসগুলোয় ই-টিকিটিং ব্যবস্থা চালু আছে। এসব বাসে পদ্ধতিটির মাধ্যমে মানুষ সরকারের নির্ধারিত ভাড়ায় যাতায়াত করছিল।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২২
এনবি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।