ঢাকা, সোমবার, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০৮ জুলাই ২০২৪, ০০ মহররম ১৪৪৬

জাতীয়

ড্রেনে প্লাস্টিকের বোতল কুড়িয়ে ক্ষুধা মেটে শিশু রাসেল ও মায়ের

আবাদুজ্জামান শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২২
ড্রেনে প্লাস্টিকের বোতল কুড়িয়ে ক্ষুধা মেটে শিশু রাসেল ও মায়ের

ঢাকা: পথশিশু রাসেল (১১) তার মা মোমেনা খাতুনের সঙ্গে রাজধানীর একটি এলাকায় ঝুপড়ি ঘরে রাত্রিযাপন করে। তবে, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় পরিত্যক্ত বোতল কুড়িয়ে সেগুলো কেজি দরে বিক্রি করে যে টাকা পায়, তা দিয়ে পেটের ক্ষুধা মিটায়।

এই কাজে মাও তাকে সহযোগিতা করেন। প্রতিদিন সকাল হলেই  রাসেল ঝুপড়ি ঘর থেকে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে জীবন সংগ্রামে। সবাই যখন যার যার কর্মস্থলে ও অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকে, তখন এই শিশুর দুটি চোখ খুঁজতে থাকে পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল। যেভাবেই হোক তাকে পরিত্যক্ত বোতল পেতেই হবে, তা না হলে সারাদিন অভুক্ত থাকতে হবে মা ও তাকে ।

যেখানে সেখানে এখন আর তেমন প্লাস্টিকের বোতল  ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে না। এই শিশু বয়সেই সেই বোতল সংগ্রহের জন্য তাকে হাড় ভাঙা পরিশ্রম করতে হয়। অলিতে-গলিতে সে খুঁজতে থাকে কোথায় পড়ে আছে পরিত্যক্ত বোতল।

শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরের দিকে পথশিশু রাসেলকে শারীরিক ঝুঁকি নিয়ে কুড়িল বিশ্বরোড ও কোকাকোলা বাসস্টপেজের মধ্যবর্তী স্থানে ফুটপাতের পাশে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ঢাকনা যুক্ত ড্রেন থেকে সেই বোতল সংগ্রহ করতে দেখা যায়।

ড্রেনের ঢাকনাটা সরিয়ে ফেলার কোনো ব্যবস্থা নেই। তবে ঢাকনার ওপরে ফাঁকা অংশ দিয়ে হাত ঢুকিয়ে তারের মাধ্যমে একটি একটি করে পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল  ওঠাচ্ছিল সে।

লক্ষ্য করা যায় শিশু রাসেল ড্রেনের ঢাকনার সামান্য ফাঁক দিয়ে মনোযোগ সহকারে বোতল ওঠানোর কাজ করে যাচ্ছে। তার এই জীবন সংগ্রামের চিত্র দেখলেই বোঝা যায়, বোতলগুলো ওঠাতে না পারলে মাকে নিয়ে তার সারাদিন না খেয়ে থাকতে হবে। রাতে একটি ঝুপড়ি ঘরে শুধু রাত্রি যাপন করলেও সারাদিন থাকে সে পথে পথে। রাসেলের সঙ্গে কাজের ফাঁকে ফাঁকে কথা হয় বাংলানিউজের।

সে জানায়, মায়ের সঙ্গে বসুমতি এলাকার একটি বস্তিতে ২৫০০ টাকায় ঘর ভাড়া করে থাকে। মা মোমেনা খাতুন তাকে এই কাজে সহযোগিতা করেন।   মা গেছেন পাশের এক গলিতে বোতল টোকাতে। আর সে এই ড্রেন থেকে বোতল সংগ্রহ করছে। দুই জনের সংগ্রহ করা বোতল একত্রে করে দোকানে বিক্রি করবে।

সে জানায়, তার বাবা আদম আলী  ছোট দুই ভাইকে নিয়ে নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় গ্রামের বাড়িতে থাকেন। আর সে মায়ের সঙ্গে ঢাকায় থাকে।

ড্রেন থেকে বোতল ওঠাতে ওঠাতে শিশু রাসেল জানায়, প্রতিদিন মা, আর সে মিলে ২০০ থেকে ৩০০ টাকার বোতলসহ পরিত্যাক্ত অন্যান্য জিনিস বিক্রি করে। বোতলের প্রতি কেজির মূল্য ৩০ টাকা। এই বোতলগুলো সংগ্রহ করতে গিয়ে তাদের হারভাঙা পরিশ্রম করতে হয়।

একপর্যায়ে সে বলে, এই বোতলগুলো বিক্রি করে মাকে নিয়ে ভাত খামু। শুধু পেটের ক্ষুধা মিটানোর জন্যই শিশু রাসেল হারভাঙা পরিশ্রম করে।

সে আরও জানায়,‘সারাদিন বোতল টোকাই মা আর আমি। আগের মত রাস্তাঘাটে প্লাস্টিকের বোতল এখন আর ছড়িয়ে থাকে না। তাই পরিত্যক্ত বোতল খুঁজে খুঁজে বের করতে হয়। আর এগুলি ড্রেনে থাকে সবচেয়ে বেশি। ’

শিশু রাসেলের স্বাস্থ্য ঝুঁকির ব্যাপারে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক ডা. মজিবর রহমান বলেন, ড্রেনের ভেতরে ব্যাকটেরিয়াসহ বিভিন্ন রকম ভাইরাস থাকে। এতে ডায়রিয়াসহ নানা রকম রোগে সে আক্রান্ত হতে পারে। এছাড়া অবশ্যই শিশুদের এসব কাজে শারীরিক ঝুঁকিসহ অন্যান্য ঝুঁকিও থাকে।

এমনিতেই আমাদের দেশে শিশুরা অবহেলিত। দরিদ্র শিশুরা এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২২
এজেডএস/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।