ঢাকা: ঢাকাস্থ সৌদি দূতাবাসে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে কর্মীদের পাসপোর্ট জমা নেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রোববার (১৬ অক্টোবর) থেকে দূতাবাসটিতে পাসপোর্ট জমা না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ (বায়রা)।
সৌদিগামী কর্মীদের পাসপোর্ট গ্রহণ ও ভিসা স্ট্যাম্পিংয়ের দায়িত্ব সৌদি দূতাবাস সম্প্রতি ‘শাপলা সেন্টার’ নামের একটি বেসরকারি ফার্মকে দিয়েছে।
শাপলা সেন্টারের মাধ্যমে বাংলাদেশি কর্মীদের পাসপোর্ট জমা নেওয়া ও ভিসা প্রক্রিয়া বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে বায়রা। শনিবার (১৫ আক্টোবর) হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের বল রুমে শাপলা সেন্টারের মাধ্যমে সৌদিগামী কর্মীদের পাসপোর্ট গ্রহণ ও ভিসা স্ট্যাম্পিংয়ের সিদ্ধান্তের বিষয়ে সদস্যদের নিয়ে জরুরি সভা করে সংগঠনটি।
সভায় বায়রার সভাপতি আবুল বাশার বলেন, তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে কর্মীদের পাসপোর্ট জমা নেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত কেউ পাসপোর্ট জমা দেবে না। শাপলা সেন্টার নামের একটি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করে আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা চলছে। এখানে কারো না কারো কিছু উদ্দেশ্য আছে। না হলে সৌদি দূতাবাসের মাথায় এটা ঢুকতে পারে না। যদি মানুষের জট সংক্রান্ত সমস্যা হয় তাহলে আমাদের বায়রার ওপর ছেড়ে দেন।
বায়রা সভাপতি আরও বলেন, আমরা আপনাদের পছন্দমতো জায়গায় নিজেদের খরচে জায়গা তৈরি করে আমাদের সদস্যদের জন্য কাজটি করতে চাই। এই প্রস্তাব আমরা দূতাবাসের কাউন্সিলরের কাছে দিয়েছি। তিনি কোনো জবাব দেননি। পরে তারা আমলে না নিয়ে সবার কাছে শাপলা সেন্টারের মাধ্যমে পাসপোর্ট জমা নেওয়ার নোটিশ পাঠিয়েছে।
আবুল বাশার বলেন, সৌদি আরব শুধু বাংলাদেশ থেকে লোক নেয় না। ভারত, ইন্দোনেশিয়া থেকেও লোক নেয়। ভারতে এই একই নিয়ম করতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের সব রিক্রুটিং মালিক একসঙ্গে হয়ে তাদের কাছ থেকেই পাসপোর্ট নিতে বাধ্য করেছিল। যদি ভারত পারে বাংলাদেশ কেন নয়? আমরা আগামীকাল থেকে সৌদি আরব দূতাবাসে কোনো পাসপোর্ট জমা দেব না। যতদিন পর্যন্ত তারা সিদ্ধান্ত বাতিল না করে, ততদিন আমরা পাসপোর্ট দেব না। আমাদের কাছে থাকা ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও পাসপোর্ট জমা দেব না।
তিনি বলেন, যদি বায়রার কোনো সদস্য এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকার প্রমাণ মেলে তাহলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জন্য বায়রা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা আশা করি এ সপ্তাহের মধ্যে সৌদি দূতাবাসের সাথে সভা করবো। তাদের বলবো, সার্ভিস সেন্টার বাদ দিয়ে আমাদেরকে সুযোগ দিতে হবে। আমাদের না দিলে বাংলাদেশ জনশক্তি রপ্তানি ব্যুরোকে (বিএমইটি) সার্ভিস সেন্টারের দায়িত্ব দিলেও আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না। আমরা কোনো শাপলা সেন্টারের মাধ্যমে ব্যবসা করবো না। তাদের বন্ধ করে বায়রা, বিএমইটি বা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সৌদিগামী কর্মীদের পাসপোর্ট, ভিসা প্রসেসিংয়ের কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। এক্ষেত্রে বায়রা সব ধরনের সহায়তা করবে।
সভায় বক্তারা বলেন, সৌদিগামী কর্মীদের জন্য কোনো সার্ভিস সেন্টার প্রয়োজন হলে বায়রা সেটি করবে। আমরা সুস্থ ব্যবসা করতে চাই। সৌদি আরব এখন আমাদের সবচেয়ে বড় বাজার। এটা কোনোভাবে বন্ধ করা যাবে না। দূতাবাসের আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধান করতে হবে। সৌদি আরবকে যারা শাপলা সেন্টারের পরিচয় করিয়ে দিয়েছে, তাদের খুঁজে বের করতে হবে। সকল সিন্ডিকেট বন্ধ করতে হবে। তা না হলে ব্যবসা করতে পারবো না। এজন্য বায়রাকে আইনি সংস্থা নিয়োগ করে প্রতিবাদ জানাতে হবে।
সৌদি দূতাবাসের এক নোটিশে বলা হয়, রোববার (১৫ অক্টোবর) থেকে শাপলা সেন্টার নামের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কর্মীদের পাসপোর্ট জমা নেওয়া হবে। এদিন থেকে রিক্রুটিং এজেন্টের কাছ থেকে সরাসরি কোনো পাসপোর্ট নেওয়া হবে না।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আবুল বাশারের সভাপতিত্বে জরুরি সভায় বায়রার সহ-সভাপতি নোমান চৌধুরী, রিয়াজুল ইসলাম, মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমানসহ বায়রার কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০২২
জিসিজি/এমজেএফ