ঢাকা, শুক্রবার, ৫ পৌষ ১৪৩১, ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

৭০ কোটি টাকা হাতিয়ে লাপাত্তা ছিলেন আজাদ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০২২
৭০ কোটি টাকা হাতিয়ে লাপাত্তা ছিলেন আজাদ গ্রেফতার প্রতারক খন্দকার আবুল কালাম আজাদ

ঢাকা: ছাত্রাবস্থায় একটি স্থানীয় পত্রিকায় কাজের পাশাপাশি একটি জাতীয় পত্রিকার আঞ্চলিক প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন খন্দকার আবুল কালাম আজাদ (৫৩)। ২০০৩ সালে নিজ এলাকায় ‘জনতা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি’ নামে প্রতিষ্ঠান খুলে ব্যবসা শুরু করেন তিনি।

এরপর ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠানের নাম পাল্টে ‘জনতা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেড’ নামে বৃহৎ পরিসরে কার্যক্রম শুরু করেন। এক পর্যায়ে ২০১৭ সালে গ্রাহকদের জমা দেওয়া প্রায় ৭০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে পালিয়ে যান আজাদ।

প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার নামে একটি পারিবারিক প্রতারণার বলয় গড়ে তুলেছিলেন তিনি। নিজে সভাপতি, দুই ভাই ও তাদের স্ত্রীদের পরিচালনা পর্ষদে বসিয়ে জনসাধারণের এই বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেন।

দেশের বিভিন্ন থানায় অন্তত ৬০টি মামলা ও ৩৬টি পরোয়ানা নিয়ে প্রায় ৫ বছর পলাতক থাকার পর অবশেষে খন্দকার আবুল কালাম আজাদকে (৫৩) গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৩।

মঙ্গলবার দিনগত রাতে রাজধানীর কল্যাণপুরের একটি আবাসিক হোটেল থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

বুধবার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

গ্রেফতার আজাদকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি বলেন, ২০০৩ সালে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে খন্দকার আবুল কালাম আজাদ ‘জনতা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি’ নামে প্রতিষ্ঠানটি চালু করেন। ২০০৫ সালে মেহেরপুরে তাদের কার্যক্রম শুরু করেন। পরে ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তন করে ‘জনতা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেড’ নামে কুষ্টিয়া, খুলনা, মাগুরা, ঝিনাইদহ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও রাজশাহী জেলার বিভিন্ন উপজেলায় কার্যক্রম শুরু করেন তিনি।

প্রতিষ্ঠানটি অতি সুকৌশলে উচ্চ মুনাফায় মানুষকে প্রলুব্ধ করে বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা জামানত সংগ্রহ করে। উচ্চ মুনাফায় মাসিক ভিত্তিতে ডিপিএসের মাধ্যমে এই অর্থ সংগ্রহ করা হয়। তাদের প্রধান টার্গেট ছিল দিনমজুর, চায়ের দোকানদার, মুদি দোকানদার, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন শ্রেণির পেশাজীবী মানুষ। গ্রাহক বৃদ্ধির জন্য আজাদ বিভিন্ন সময়ে বিশেষ প্যাকেজ ও প্রণোদনা ঘোষণার মাধ্যমে আকৃষ্ট করতেন।

র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, ২০১৭ সালে সমিতির গ্রাহক সংখ্যা ৭-৮ হাজার হয় এবং গ্রাহকরা ১০ হাজার থেকে শুরু করে ১৩ লাখ টাকা পর্যন্ত জামানত রাখে। ২০১৭ সালে গ্রাহকদের সঞ্চয়-আমানতের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৫০-৭০ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের ঈদুল ফিতরে আঞ্চলিক সকল অফিস গুটিয়ে এবং সকল ফোন নম্বর বন্ধ করে ঢাকায় এসে গা ঢাকা দেন আজাদ।

মাঠ পর্যায়ে গ্রাহক ও অর্থ সংগ্রহের জন্য প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় আট শতাধিক কর্মী নিয়োজিত ছিলেন, যাদের কোনো বেতন দেওয়া হতো না। গ্রাহকদের বিনিয়োগের মাধ্যমে তাদের বার্ষিক ১৮-২০ শতাংশ মুনাফার প্রলোভন দেখানো হতো।

এমনকি বিভিন্ন জেলায় ভাড়া নেওয়া প্রতিষ্ঠানটির অভিজাত কার্যালয়ের মালিকদেরও কোনো ভাড়া পরিশোধ করেননি আজাদ। ভাড়ার টাকা তার প্রতিষ্ঠানে জমা করলে নির্ধারিত সময় পর তিনগুণ ফেরত দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে টাকা না দিয়েই অফিসের কার্যক্রম চালিয়ে যান তিনি।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আজাদের নামে দেশের বিভিন্ন থানায় চেক জালিয়াতি ও প্রতারণাসহ মোট ৬০টি মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে ৩৬টি মামলায় ওয়ারেন্ট রয়েছে।

প্রতারণার টাকায় কুষ্টিয়াতে ১৫ বিঘা জমি, ১টি ৬ তলা ভবন, ১টি ইটের ভাটা এবং রাজশাহীতে ১১ বিঘা জমি কেনেন প্রতারক আজাদ। এছাড়া ঢাকার উত্তরায় বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ও গাড়ি কেনেন তিনি। তার স্ত্রীর নামে পোস্ট অফিসে ২০ লাখ টাকা ফিক্সড ডিপোজিট রয়েছে। একটি ব্যাংকে তার ২ কোটি টাকার ঋণ রয়েছে বলেও জানা গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০২২
পিএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।