ঢাকা: রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজ কেন্দ্রে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় বাঙলা কলেজের এক ছাত্রীকে জিম্মি করে তিন হাজার টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত ইমাম হাসান শুভ সরকারি তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগের উপ-মানব উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক।
বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) তিতুমীর ক্যাম্পাস কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে গিয়ে বাঙলা কলেজের ওই নারী শিক্ষার্থী হয়রানির শিকার হন।
অভিযুক্ত শুভ বনানী থানা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি বলেও জানা গেছে। শিক্ষার্থীকে হয়রানি এবং টাকা হাতিয়ে নেয়ার একটি ভিডিও বাংলানিউজের হাতে এসেছে।
শুক্রবার (২১ আক্টোবর) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে বাঙলা কলেজর অনার্স ২য় বর্ষের ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বিচার দাবি করেন।
ভুক্তভোগী ছাত্রী বাংলানিউজকে বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে সরকারি তিতুমীর কলেজে দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা শেষে কিছুক্ষণ আমি আর আমার এক বান্ধবী কলেজ মাঠে বসে ছবি তুলছিলাম। এ সময় তিতুমীর কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইমাম হাসান শুভ মাঠের মধ্যে অকারণেই আমাদের উত্যক্ত করেন। তিনি বাজে ভাষায় টিজ করতে থাকেন। তিনি একাধিকবার আমাকে প্রপোজ (প্রেম নিবেদন) করেন। বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়িয়ে যেতে তিতুমীর ক্যাম্পাস ছেড়ে আসছিলাম, সেসময় অভিযুক্ত শুভ আবারও প্রেম নিবেদন করেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, ধৈর্য্য ধরে রাখতে না পেরে প্রতিবাদ জানিয়ে একটা ছোট ইটের টুকরো তাদের বাইকের দিকে ছুঁড়ে মারি। এরপর তারা আমার বন্ধুদের বেধড়ক মারতে থাকে। বিনা কারণে কেন মারছেন জিজ্ঞেসে করলে তারা বলে, আপনি অপরাধ করেছেন তাই আমরা আপনার বন্ধুকে মারছি। মাইর থামাবো যদি বাইক ভাঙ্গার ক্ষতিপূরণ দেন। ‘আমাকে বিরক্ত করছেন কেন’ প্রশ্নে তারা বলেন, এটা বিরক্ত কোথায়? আপনাকে ভালো লেগেছে তাই প্রপোজ করেছি।
‘বাইকের কোনো ক্ষতি না হলেও তারা আমার কাছে ১০ হাজার টাকা দাবি করে। দিতে রাজি না হওয়ায় এক পর্যায়ে ২০-২৫ জন মিলেই আমাদের হেনস্তা করে। এসময় আমি অজ্ঞান হয়ে মাঠের মধ্যে পড়ে যাই। আমার বান্ধবীরা পানি দিয়ে জ্ঞান ফেরানোর পর তারা আবারো হেনস্তা করে। টাকা না দিলে আমার সহপাঠীদের আবার মারধর করবে বলে জানায় শুভ। এক পর্যায়ে তিন হাজার টাকা দিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছে। ’ বলেন ভুক্তভোগী। 
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত ইমাম হোসেন শুভর সঙ্গে যোগোযোগ করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
তিুতমীর কলেজ ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক জুয়েল মোড়ল বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি আমি ফেসবুকে দেখেছি। শুভ তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগের নেতা হলেও তাকে পোস্ট দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতার সুপারিশে। কমিটি হওয়ার পরে আমরা তার নাম দেখতে পেয়েছি। শুনেছি সে রাজনীতি করে বনানী থানায়। ক্যাম্পাসে তার কোনো কার্যক্রম নাই।
এক প্রশ্নের জবাবে জুয়েল বলেন, প্রয়োজনে সভাপতিকে নিয়ে ভুক্তভোগী মেয়ের সঙ্গে কথা বলা হবে। অভিযোগ প্রমাণীত হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নাই।
তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ মো. মহিউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় বৃহস্পতিবার ছুটিতে ছিলাম। রোববার ক্যাম্পাসে গিয়ে বিষয়টি দেখব। শুনেছি একটি মেয়ের সঙ্গে বাজে ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের ঘটনা কোনভাবেই কাম্য নয়। অভিযুক্ত ছাত্রের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে কলেজ প্রশাসন থেকে প্রাশাসনিক ব্যবস্থান নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০২২
এমএমআই/এসএ
