ঢাকা, বুধবার, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ জুন ২০২৪, ১৮ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

২ মাস অফিস করেন না ‘বড় বাবু’, গড়েছেন কোটি টাকার সম্পদ!

হারুন-অর-রশীদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০২২
২ মাস অফিস করেন না ‘বড় বাবু’, গড়েছেন কোটি টাকার সম্পদ!

ফরিদপুর: দুই মাস আগে বদলি হওয়া ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান সহকারি মো. সামছুর রহমান 'বড় বাবু' নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন। এক সময় তার ইশারায় এ হাসপাতালটি চলতো এমন অভিযোগ অহরহ।

সরকারি চাকরি বিধিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে এক প্রতিষ্ঠানেই কর্মজীবন কাটিয়েছেন ২৭ বছর। অবশেষে অভিযোগের চাপে গত ১৭ আগস্ট তাকে বদলি করা হয় ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। কিন্তু তারপরেও যেন তাকে আগের প্রতিষ্ঠান থেকে সরানোই যায় না। নিজের অফিস না করে নানা অজুহাত দেখিয়ে দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে সেখানেই তিনি বীর দর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

বদলির আদেশের পাঁচ দিনের মধ্যে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করেছিলেন। কিন্তু এরপর থেকে তার আর দেখা মেলেনা এ প্রতিষ্ঠানে।

এছাড়া সামছুর বিরুদ্ধে চাকরির ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টেন্ডার বাণিজ্য, হাসপাতালটির বিভিন্ন কেনাকাটায় অনিয়ম, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে জনবল নিয়োগে অর্থ বাণিজ্যের বিস্তর অভিযোগ ছিল।

আর টানা ২৭ বছর একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার সুবাদে সেখানে তার একটি সিন্ডিকেটের বলয় তৈরি হয়। এ হাসপাতালে থেকে বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে অর্জিত টাকা দিয়ে ফরিদপুর জেলা ও জেলার বাইরেও নামে-বেনামে কয়েক কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন তিনি। এর বাইরে নামে-বেনামে ব্যাংক ব্যালেন্সেও রয়েছে টাকার পাহাড়। তবে, হয়রানি ও তার ক্ষমতার ভয়ে কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস দেখান না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এমনটাই বলছিলেন হাসপাতালের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

বিষয়গুলো জানতে সামছুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার ছেলে অসুস্থ। তাই মাঝে-মধ্যে হাসপাতালে থাকতে হচ্ছে। এছাড়া ফরিদপুর মেডিকেল হাসপাতালের প্রধান সহকারী হিসেবে টানা ২৭ বছর চাকরি করায় অনেক কাজই নতুন যোগদানকৃত প্রধান সহকারীকে বুঝিয়ে দিতে হচ্ছে। তাই এখানে একটু সময় দিতে হয়।

কিন্তু কাজ বুঝিয়ে দিতে দুই মাস সময় লাগাটা স্বাভাবিক কিনা তা জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। আর টানা ২৭ বছর এক প্রতিষ্ঠানে কাজ করার বিধি আছে কিনা তা নিয়ে তিনি বলেন, এটি কর্তৃপক্ষ ভালো জানে। এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারবো না, কর্তৃপক্ষই ভালো বলতে পারবে।

এছাড়া তার বিরুদ্ধে আনা বিভিন্ন অনিয়মের ব্যাপারে তিনি বলেন, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমি কোনো অনিয়ম করিনি। এসব বানোয়াট কথাবার্তা। আমার বিরুদ্ধে কেউ অনিয়মের প্রমাণ দিতে পারলে স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দেবো।

ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মহসিন উদ্দিন ফকির বলেন, সামছুর রহমান নামে এক ব্যক্তি ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রধান সহকারী হিসেবে যোগদান করেছেন। তিনি একটি ট্রেনিংয়ে ফরিদপুরে আছেন বলে জানিয়েছেন।

কিন্তু এখনও তাকে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়মিত দেখা মিলছে কেন এমন প্রশ্নের জবাবে এ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, সেখানে নতুন যোগ দেওয়া প্রধান সহকারীকে কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য তাকে বলা হয়েছিল।

এদিকে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এনামুল হক বলেন, সামছু নামের কাউকে আমি চিনি না। হয়তো আমার যোগদানের আগেই তাকে বদলি করা হয়েছে।

কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানেই তিনি নিয়মিত অফিস করছেন এমন অভিযোগের বিষয়ে পরিচালক বলেন, তিনি এখন আমাদের অধীনে চাকরি করেন না। তিনি সিভিল সার্জনের অধীনে চাকরি করেন। তাই এ বিষয়ে জানতে সিভিল সার্জনকে প্রশ্ন করুন।

শামছুর বিরুদ্ধে ওঠা নানা অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে সদ্য অবসরে যাওয়া পরিচালক ডা. সাইফুর রহমান বলেন, আমি হাসপাতলটিতে কর্মরত থাকাকালীন সময়ে কোনো আউটসোর্সিংয়ে জনবল নিয়োগ কিংবা ট্রেন্ডারের কাজ হয়নি। তবে, এ সংক্রান্ত যেটুকু কাজ হওয়ার কথা ছিল তা পরবর্তীতে বাতিল করা হয়েছিল। তাই, তার (সামছু) ব্যাপারে কিছু বলতে পারছি না।

জেলা সিভিল সার্জন অফিসের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. শাহ মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা বলেন, অভিযোগুলোর বিষয়ে আমাদের জানা নেই। তবে সিভিল সার্জনকে বিষয়টি জানিয়ে সামছুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হবে।

এ বিষয়ে ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. ছিদ্দীকুর রহমান বলেন, এক স্থান থেকে আরেক স্থানে বদলি করা হলে সেখানে যোগদান করার পর কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কারও অনুপস্থিত থাকার সুযোগ নেই। আর সেটি যদি কেউ করে থাকেন তবে তিনি অপরাধ করেছেন।

তিনি আরও বলেন, সামছুর রহমান ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কেন অফিস করছেন না তা আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০২২
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।