পাবনা: কোনো নীতিমালা ও আইনের তোয়াক্কা না করেই পাবনা জেলা পরিষদের আওতাধীন বিভিন্ন সড়ক ও ডাকবাংলোর মূল্যবান গাছ কেটে ফেলার অভিযোগ উঠেছে।
নিজেদের খেয়াল-খুশিতে এসব গাছ কাটতে বনবিভাগসহ সংশ্লিষ্ট করোর অনুমতিও নেওয়া হয়নি।
সরেজমিন দেখা গেছে, পাবনা শহরের নূরপুরস্থ জেলা পরিষদের ভেতরে গাছ কাটছেন শ্রমিকরা। গাছগুলো খণ্ড খণ্ড করে দ্রুতই সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। গাছগুলো কাটার পরপরই এক্সকাভেটর (ভেকু যন্ত্র) দিয়ে মাটি তুলে গর্তগুলো ঢেকে দেওয়া হচ্ছে। গাছগুলো করাত কলে নিয়ে চিড়ে কাঠ বানিয়ে ডাকবাংলোতে নিয়ে তৈরি করা হচ্ছে আসবাবপত্র।
ডাকবাংলোর কেয়ারটেকার ও মিস্ত্রির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এরই মধ্যে জেলার বেড়া, সাঁথিয়া, ঈশ্বরদী ও চাটমোহর ডাকবাংলোতে অন্তত ৬০-৭০টি খাট, ৩০-৪০টি দরজা, ৪০-৬০টি আলমারিসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র তৈরি করা হয়েছে। এগুলো তৈরি করতে অন্তত অর্ধশতাধিক গাছ লেগেছে।
বনবিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের তথ্য মতে, আইন অনুযায়ী উন্নয়নমূলক কাজের জন্য প্রয়োজনে কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানের ঝড়ে পড়া, ঝুঁকিপূর্ণ, পুরোনো গাছ কেটে ফেলার প্রয়োজন হলে জেলা প্রশাসকের সমন্বয়ে কমিটি হবে। কমিটির অনুমতির পর বনবিভাগকে মূল্য নির্ধারণের চিঠি পাঠানো হবে, বনবিভাগ সরেজমিন যাচাই-বাছাই করে গাছগুলোর মার্কিং ও মূল্য নির্ধারণ করে দেবে। পরে টেন্ডার ও নিলামসহ অন্যান্য নীতিমালা মেনে গাছগুলো কাটতে হবে। কিন্তু জেলা পরিষদের এ গাছগুলো কাটতে কোনো নীতিমালা মানা হয়নি।
পরিষদের গাছগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ও কাটাসহ যাবতীয় বিষয়ে দেখভালোর দায়িত্বে রয়েছেন পরিষদের সার্ভেয়ার মো. রিয়াজুল ইসলাম। এ বিষয়ে তিনি বলেন, বনবিভাগের অনুমতি, উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির রেজুলেশন ও পেপার পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমেই কাটা হয়েছে। কিন্তু যেগুলো মরাধরা বা পড়েছিল, সেগুলো বিনা টেন্ডারে কেটে রাখা আছে। কিন্তু আসবাবপত্র কোন কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে, সে সম্পর্কে আমি জানি না, আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলতে পারবেন।
বিষয়টি স্বীকার করে পাবনা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (উপ-সচিব) কাজী আতিয়ুর রহমান বলেন, কিছু গাছ নষ্ট হয়ে পড়ে থাকায় সেগুলো কাটা হয়েছে। কোনো দাঁড়ানো গাছ কাটা হয়নি। এজন্য পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছিল। কিন্তু টেন্ডার করলে অন্যরা লাভবান হয়, এজন্য টেন্ডার করা হয়নি।
তবে তিনি গাছ দিয়ে বানানো কিছু আসবাবপত্র প্রভাবশালী মহল ও কর্মকর্তাদের বাড়িতে নেওয়ার বিষয়টি নাকচ করে দেন।
এ বিষয়ে সামাজিক বনবিভাগ, পাবনার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাশ্যপী বিকাশ চন্দ্র বলেন, আমরা শুধু গাছের মূল্য নির্ধারণ করে দিই, বাকিটা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান করে। জেলা পরিষদের গাছ কাটার বিষয়টি জানি না, আপনাদের কাছে থেকে প্রথম শুনলাম। চিঠি এলে তো আমি জানতাম।
পাবনা জেলা পরিষদের বিদায়ী চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল রহিম লাল বলে, আমি কিছু জানি না। আপনি এ বিষয়ে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেস করেন। তিনি বিস্তারিত বলতে পারবেন। গাছ কাটা প্রশ্নে আমি কোনো ফাইলে স্বাক্ষরও করিনি, কিছু জানিও না। আমি এসবের ভেতরে নাই।
এ ব্যাপারে জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আ.স.ম আব্দুর রহিম পাকন বলেন, এমন সংবাদে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলাম। পরে আমি নিজেই জেলা পরিষদের ডাকবাংলোতে গিয়ে দেখেছি, সেখানে কিছু গাছ কাটা হয়েছে। ডাকবাংলোর কেয়ারটেকারকে জোরালোভাবে জিজ্ঞাসা করায় তিনিও স্বীকার করেছেন।
তিনি আরও বলেন, এ ধরনের দুর্নীতি যারা করেছেন, সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন, তাদের প্রতিহত করবো এবং জেলা পরিষদের সুফলটা একেবারে গ্রাম ও তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দেব ইনশাআল্লাহ। এজন্য আমার জীবন দিয়ে হলেও চেষ্টা করবো।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০২২
এসআই