ঢাকা, শনিবার, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০১ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

পুলিশ দেখে মানুষ যেন আশ্বস্ত হয়: বিদায়ী ডিএমপি কমিশনার 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০২২
পুলিশ দেখে মানুষ যেন আশ্বস্ত হয়: বিদায়ী ডিএমপি কমিশনার  মোহা. শফিকুল ইসলাম

ঢাকা: মানুষ যেন পুলিশ দেখে আতঙ্কিত না হয়, মানুষ যেন পুলিশ দেখে আশ্বস্ত হয় এমনভাবে কাজ করেছি। আমরা এমনভাবে কাজ করবো যেন, মানুষ অত্যাচারিত হয়ে পুলিশের কাছে আসার পর, তাদের অত্যাচারের বোঝা আমরা আরো বাড়িয়ে না দেই।

 

বিদায় বেলায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সকল সদস্যের প্রতি এই অনুরোধ জানিয়েছেন বিদায়ী ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম।
 
দীর্ঘ ৩৩ বছরের চাকরি জীবনের ইতি টানলেন তিনি। শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজারবাগে ঘটিকায় বাংলাদেশ পুলিশ অডিটরিয়ামে এক আড়ম্বর সংবর্ধনার মধ্য দিয়ে তাকে বিদায় জানান টিম ডিএমপির সকল স্তরের পুলিশ সদস্য।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিদায়ী কমিশনারের সঙ্গে দীর্ঘ কর্মজীবন অতিবাহিত করার স্মৃতিচারণ করেন টিম ডিএমপির সদস্যরা।

সকলের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বিদায়ী কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, যখন মানুষের জন্য ভালো কিছু করার সুযোগ থাকে, সময় থাকতে এ সময়টা কাজে লাগাতে হবে। কেন না আমরা কেউই এক সময় থাকবো না। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে যে সমস্ত পুলিশ সদস্য ছিলেন, তারা ট্যাঙ্কের বিরুদ্ধে থ্রি নট থ্রি রাইফেল দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। যারা দেশের জন্য রক্ত দিয়েছেন তাদের জন্য যেন আমরা কিছু করতে পারি। তাদের অবদান যেন ভুলে না যাই।

তিনি বলেন, ভালো কাজের জন্য কারো কাছে জবাবদিহিতা করতে হয় না, জবাবদিহিতা করতে হয় মন্দ কাজের জন্য। আমরা মানুষের ভালো কাজের প্রশংসা করতে জানি না। তবে আমি সহকর্মীদের ওপর নিজের বীরত্ব জাহির করিনি। যার যার কাজের জন্য তাকে প্রশংসিত করেছি। আরেকজনের অর্জনকে নিজের অর্জন বলে ছিনিয়ে নেইনি। চাকরি জীবনে কারো জন্য দুঃখ-কষ্টের কারণ হই নাই।

বিদায়ী কমিশনার আরো বলেন, আমরা রাতের পর রাত ঘুমাই না, রাস্তায় পাহারা দেই। আমরা যদি এমনিভাবে পাহারা না দিতাম তাহলে হাজার হাজার অপরাধ সংগঠিত হতো। চাকরি জীবনের সব সময় চেষ্টা করেছি যাতে মানুষের কাছ থেকে শুনতে পারি পুলিশ আমার জন্য চেষ্টা করেছে। আপনাদের সবার কাছে আমার অনুরোধ রইল আপনারা আপনাদের চাকরি জীবনে এমনভাবে কাজ করবেন যাতে মানুষ বলে যে পুলিশ আমাদের জন্য চেষ্টা করেছে। আমরা যদি দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করি, মানুষের জন্য কাজ করি তাহলে জাতির পিতার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের কথা শুনবেন, আমাদের উন্নয়নের জন্য কাজ করবেন।

তিনি বলেন, আপনারা চাকরি জীবনে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর দিকে তাকিয়ে আমাকে যে সহযোগিতা করেছেন আমি ও আমার পরিবার আপনাদের কাছে চির কৃতজ্ঞ। দেশের প্রয়োজনে, পুলিশের প্রয়োজনে যেকোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হলে আমি দিতে প্রস্তুত থাকবো। সহকর্মীদের বলবো আপনাদের যদি সহযোগিতার প্রয়োজন হয়, নিঃসংকোচে আমাকে জানাবেন। আমার সাহায্যের দ্বার আপনাদের জন্য খোলা রইলো।

সবশেষে বিদায়ী কমিশনার বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সবাইকে আমি অত্যন্ত ভালোবাসি। এ ভালোবাসা যেন আমার সঙ্গে করে নিয়ে যেতে পারি। আমার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন) মীর রেজাউল আলম, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) এ কে এম হাফিজ আক্তার, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মুনিবুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম, পিপিএম সহ যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার, উপ-পুলিশ কমিশনারসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম ১৯৮৯ সালে ৮ম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেন। গত ২০১৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ৩৪তম কমিশনার হিসেবে তিনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি এএসপি হিসেবে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ, খাগড়াছড়ি জেলা ও মৌলভীবাজার জেলায় সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। পদোন্নতিক্রমে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে খাগড়াছড়ি জেলা ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। এরপর তিনি পুলিশ সুপার হিসেবে ৭ এপিবিএন-পটুয়াখালী জেলা, ২ এপিবিএন-সুনামগঞ্জ জেলা, কুমিল্লা জেলায় দায়িত্ব পালন করেন।  

তিনি অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এবং পুলিশ কমিশনার হিসেবে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তিনি অত্যন্ত দক্ষতা ও সুনামের সঙ্গে ডিআইজি, চট্টগ্রাম রেঞ্জ এবং ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর তিনি পদন্নোতি প্রাপ্ত হয়ে অ্যাডিশনাল আইজিপি হিসেবে অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট, ঢাকায় যোগদান করেন। ২০১৮ সালের ২০ নভেম্বর অ্যাডিশনাল আইজিপি হিসেবে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে এবং সর্বশেষ তিনি ২০১৯ সালের ১৬ মে অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) প্রধান হিসেবে যোগদান করেন।

শফিকুল ইসলাম চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা থানার নওদাবণ্ড বিল দোয়ারপাড়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৬২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম মো. শওকত আলী ও মায়ের নাম বেগম সুফিয়া খাতুন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দুই কন্যা সন্তানের জনক।

ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম গত বছরের ২৯ অক্টোবর অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। সরকার তাঁর চাকরির মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধি করায় তিনি চলতি বছরেন ২৯ অক্টোবর অবসরে গেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০২২
এসজেএ/এসআইএস 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।