ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সচিবালয়ে প্রবেশে ফি নিতে চায় সরকার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০২২
সচিবালয়ে প্রবেশে ফি নিতে চায় সরকার

ঢাকা: প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দপ্তর-সংস্থার প্রাধিকারভুক্ত ব্যক্তি ছাড়া অন্যদের প্রবেশ ফি আরোপ করতে যাচ্ছে সরকার। জেলা-উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও পৌরসভার মেয়রদেরও দিতে হবে এই ফি।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে গত মাসে অর্থ মন্ত্রণালয়ে এমন প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রস্তাব অনুযায়ী, সচিবালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দপ্তর-সংস্থার প্রাধিকারভুক্ত ব্যক্তি ছাড়া অন্যদের প্রবেশ ফি আরোপ করার প্রস্তাব করেছে জননিরাপত্তা বিভাগ। সচিবালয়ে প্রবেশে প্রত্যেককে একটি কার্ড দেওয়া হবে। কার্ডের মেয়াদ হবে এক বছর। মূলত ফি নির্ধারণ করা হবে এক বছরের জন্য।

মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দপ্তর-সংস্থার প্রাধিকারভুক্ত ব্যক্তিদের প্রবেশ ফি না লাগলেও অন্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সচিবালয়ে প্রবেশে বছরে তিন হাজার টাকা ফি দিতে হবে। জেলা-উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও পৌরসভার মেয়রদের প্রবেশ ফি বছরে আড়াই হাজার টাকা, বেসরকারি ব্যক্তিদের প্রবেশ ফি বছরে পাঁচ হাজার টাকা আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে।

অন্যদিকে, সচিবালয়ে বেসরকারি গাড়ি প্রবেশে বছরে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা ফি আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। কার্ড হারিয়ে গেলে নতুন করে নিতেও লাগবে ফি। এক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তাদের দুই হাজার টাকা এবং বেসরকারি ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই ফি পাঁচ হাজার টাকা নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সচিবালয় নিরাপত্তা শাখার দায়িত্বে থাকা জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্মসচিব মো. ফিরোজ উদ্দিন খলিফা কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

জননিরাপত্তা বিভাগের তথ্যানুযায়ী, সচিবালয়ে মাত্র ১৭ দশমিক ৫৩ একর জমিতে ১১টি ছোট-বড় ভবন ও ছয়টি ক্যান্টিন রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও বিভিন্ন সভায় অংশ নেওয়া সদস্য ও দর্শনার্থীসহ প্রায় ২৫ হাজার মানুষ প্রতিদিন সচিবালয়ে আসা-যাওয়া করেন। এছাড়া প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় হাজার গাড়ি প্রবেশ করে এবং বেরিয়ে যায়। এ কারণে সচিবালয়ে প্রায়ই গাড়ির জট লেগে থাকে। গাড়ি ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হিমশিম খেতেও দেখা যায়। সচিবালয়ে পার্কিং না করতে পেরে অনেকে সচিবালয়ের সামনের ভিআইপি সড়কে গাড়ি রাখেন। ব্যস্ত এ সড়কে পার্কিং করার কারণে প্রায়ই লেগে যায় যানজট।

অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি হিসেবে জননিরাপত্তা বিভাগ বলছে, সচিবালয় হচ্ছে দেশের প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র। এটি সংরক্ষিত, স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সিনিয়র সচিব, সচিবদের কার্যালয় এখানে অবস্থিত। সচিবালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বেসরকারি ব্যক্তিরা বিভিন্ন মেয়াদের প্রবেশ পাস নিয়ে সচিবালয়ে প্রবেশ করেন। এছাড়া সচিবালয়ে অনুষ্ঠেয় বিভিন্ন সভায় অংশগ্রহণকারী ও দর্শনার্থীরা দৈনিক পাস নিয়ে প্রবেশ করেন। সচিবালয়ে নিরাপত্তা বাড়াতে দর্শনার্থী গেটে আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে। প্রবেশপথে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ডিজিটাল কার্ড, ভেহিক্যাল স্ক্যানারের মাধ্যমে আইডেনটিফিকেশন, ভেহিক্যাল স্টিকার, নজরদারি, ব্যাক-আপ রুম তৈরিতে প্রচুর টাকা খরচ হয়েছে। এই ব্যয় তুলে আনার পাশাপাশি পরিচালনা-রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ফি নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সচিবালয়ের ওপর চাপ কমাতে মূলত ফি নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। ঢাকার গণি রোডে ১৭ একর জায়গার ওপর সচিবালয় প্রতিষ্ঠিত। এখানে ১১টি ভবন ও ৬টি ক্যানটিন রয়েছে। সচিবালয়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষ আসা-যাওয়া করেন। বিপুলসংখ্যক যানবাহন সচিবালয়ে প্রবেশ করে। কিন্তু এখানে গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য পর্যাপ্ত সুবিধা নেই। ফলে প্রতিদিন সচিবালয়ে তীব্র যানজট দেখা দেয়। সচিবালয়ে মানুষ ও যানবাহনের নিয়ন্ত্রণেই ফি নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

কর্মকর্তারা আরও বলেন, সচিবালয়ে মানুষের সমাগম এবং গাড়ির জট কমাতে এ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রবেশ ফি থাকলে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ সচিবালয়ে প্রবেশ করবেন না। এতে মানুষের সমাগম কমানো যাবে এবং গাড়ির জটও অনেক কমে আসবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, সচিবালয়ে প্রবেশপত্রটি বিষয়ে অনেকেই আরও স্মার্ট, যুগপোযোগী এবং আরও নিরাপত্তা সম্বলিত বিষয়গুলো যেন থাকে সেজন্য সাজেশন আসছিল। এ বিষয়গুলো করতে আমাদের কিছু অর্থের প্রয়োজন হয়ে যায়। যেমন এখানে ছবি থাকবে তার সঙ্গে চোখের আইরিশ, ফিঙ্গার প্রিন্ট দেওয়া থাকবে। এসবগুলো যখন করবো তখন আমাদের টাকার প্রয়োজন হবে। যারা নেবেন তারাই এ অর্থ দেবেন আমরা এরকমই মনে করছি। সে জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে এটা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা তাদের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০২২
জিসিজি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।