ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বিষ দিয়ে পাখি শিকার, হুমকিতে জীব বৈচিত্র্য

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০২২
বিষ দিয়ে পাখি শিকার, হুমকিতে জীব বৈচিত্র্য

বাগেরহাট: বাগেরহাটের রামপালে পুঁটি মাছের পেটে বিষ দিয়ে নির্বিচারে বক, পান কৌড়িসহ বিভিন্ন ধরনের পাখি শিকার করা হচ্ছে।  

উপজেলার রাজনগর, হুড়কা, গৌরম্বাসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রতিনিয়ত এ ধরনের কার্যক্রম চলছে।

 

শিকারিরা এসব পাখি নিজেরা খাওয়ার পাশাপাশি চড়ামূল্যে বিক্রিও করছেন।  

বিষ দিয়ে শিকার করা পাখি খাওয়ায় শরীরে দীর্ঘস্থায়ী নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সেই সঙ্গে বিষযুক্ত মাছ খেয়ে শিকারির হাতে ধরা না পড়া মৃত পাখিরা পরিবেশ ও অন্যান্য প্রাণির জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে দেখা দিচ্ছে। কঠোর আইন প্রয়োগের মাধ্যমে পাখি শিকার বন্ধের দাবি জানিয়েছেন পরিবেশকর্মীরা।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রামপাল উপজেলার রাজনগর, হুড়কা, গৌরম্বা, উজুলকুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার খোলা মাঠে শীত মৌসুমে অল্প পানিতে মাছ শিকারের জন্য প্রচুর পরিমাণে পাখি আসে। পুঁটি ও ছোট চ্যালা মাছের পেটে ফুরাডান বা সানফুরান জাতীয় বিষ ঢুকিয়ে ভোর হওয়ার পর পর এই মাঠে দেওয়া হয়।  

বক, পান কৌড়ি, বুনোহাস, চিল, কাক, ডগমখুর, শামুকভাঙ্গাসহ বিভিন্ন ধরনের পাখি এসে এসব মাছ খায়। মাছ খেয়েই অসুস্থ হয়ে নেতিয়ে পড়ে পাখিরা। তখন দূরে অপেক্ষারত শিকারি এসে অসুস্থ পাখিকে জবাই করেন। পরবর্তীতে এই পাখি তারা খায় এবং বিক্রিও করে থাকেন চড়া দামে।

এছাড়া লাইলোনের সুতো দিয়ে তৈরি ফাঁদে পাখি শিকারের ঘটনা ঘটছে হরহামেশাই।

রামপাল উপজেলার রাজনগর ইউনিয়নের কালেখারবেড় এলাকার মিকাইল শেখ বলেন, এলাকায় কিছু মানুষ রয়েছে যারা দীর্ঘদিন ধরে বিষযুক্ত মাছ দিয়ে পাখি শিকার করেন। এই পাখি বিক্রিও করেন তারা। স্থানীয় প্রভাবশালী ও অর্থবিত্তের মালিকরা এই পাখি ক্রয় করে থাকেন। অনেক সময় দূরদুরান্ত থেকেও মানুষ এসে পাখি কিনে নেয়।

নুরুল ইসলাম নুরু নামের এক স্থানীয় পরিবেশকর্মী বলেন, বেশিরভাগ পাখি মাছ খেতে ভালবাসে। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অসাধু মানুষেরা পাখি শিকার করে। এসব শিকারীদের আইনের আওতায় এনে পাখি শিকার বন্ধ করা উচিত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কালেখারবের এলাকার এক শিকারি বলেন, প্রায় ৫ বছর ধরে পাখি ধরি। প্রথমে শখের বসে ধরতাম। এখন বছরের প্রায় ৬মাস এই পাখি বিক্রির করেই সংসার চলে। আকার ভেদে ৩শ' থেকে ১৫ শ' টাকা পর্যন্ত একেকটি পাখি বিক্রি হয়। এই সময়টা ভালোই চলে আমাদের। তবে একটু গোপনে করতে হয়।

পাখি বিশেষজ্ঞ শরীফ খান বলেন, পাখি শিকারের জন্য দেওয়া বিষযুক্ত মাছ অন্যান্য মাছ এবং মাংসাশী প্রাণিরাও খেয়ে থাকে। এছাড়া বিষযুক্ত মাছ খেয়ে সব পাখি সঙ্গে সঙ্গে অসুস্থ হয় না, অনেক পাখি আছে যারা কিছুদিন যন্ত্রণা ভোগের পর মারা যায়। বিষ খাওয়া পাখি শিকারিদের হাতে ধরা না পড়াটাও বেশ বিপদজনক। ওই পাখি যখন মারা যায় তখন, সাপ, ইঁদুর, শেয়াল, চিল, কাকসহ মাংসাশী প্রাণিরা খেয়ে অসুস্থ হয়ে থাকে। এক কথায় বিষ যুক্ত মাছ দিয়ে পাখি শিকারের ফলে শুধু অতিথি পাখি বা দেশি পাখি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা নয়; পুরো জীব বৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার ফলে পরিবেশের উপর একটি বড় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন এলাকায় যারা পাখি শিকার করে তাদের সংখ্যা খুব বেশি নয়। এদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে হবে। সেই সাথে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষদের সচেতন করতে হবে পাখি রক্ষায়। সব শ্রেণির নাগরিকদের সচেতন করলে পাখি শিকার বন্ধ হবে। প্রকৃতিতে আগের মত পাখির দেখা মিলবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বাগেরহাটের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, বিষ দিয়ে শিকার করা পাখি বা কোন প্রাণি বার বার খেলে মানুষের শরীরে নানা ধরণের দীর্ঘস্থায়ী জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। এমনকি কিডনি, লিভারসহ দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বিকল হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।

রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজিবুল আলম বলেন, পাখি শিকারের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের সঙ্গে কথা বলেছি। বিভিন্ন এলাকার শিকারিদের তালিকা করা হচ্ছে। খুব দ্রুত শিকারিদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে। এছাড়াও বিভিন্ন ভাবে পাখি শিকার বন্ধে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।

বাংলাদেশ  সময়:  ০৭২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০২২
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।