ঢাকা: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন আলোচনা সভার আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে জাতিসংঘে বাংলাদেশে স্থায়ী প্রতিনিধি ডঃ এ. কে. আব্দুল মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ এক ও অভিন্ন সত্ত্বা।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে আমরা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ পেতাম কিনা সে বিষয়ে সংশয় রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর দেশাত্মবোধের মানসচিত্তে নতুন প্রজন্ম গড়ে উঠলে দেশ সোনার মানুষে ভরে উঠবে এবং সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশ সোনার বাংলা হয়ে উঠবে।
ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন তাঁর স্বাগত বক্তব্যে আরো বলেন, টুঙ্গীপাড়ার খোকা শৈশব-কৈশোর থেকেই নিজেকে গরীব-দুঃখী মানুষের বন্ধু হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি জনগণের মনের কথা বুঝতেন।
মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর ত্যাগের মানসিকতা এবং জনগণের প্রতি তাঁর দৃঢ় প্রত্যয় যুগযুগান্তরের দর্শন হিসাবে আমাদের সামনে কাজ করবে। তার দর্শনের পথই আমাদের সোনার বাংলা বিনির্মাণের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশিষ্ট সাংবাদিক আর্নল্ড জাইটলিন বলেন, বাংলাদেশ আজ বিশ্বব্যাপী অর্জন, অগ্রগতি এবং গর্বের বিষয়। আপনারাও ‘জয় বাংলা’ বলুন। কখনো জয় তারেক বলবেন না।
লরেন্স লিফসুলজ বলেন, ‘৭৫’-এ জাতির জনকের হত্যাকান্ড এবং কয়েকটি সেনা অভ্যুত্থানের নেপথ্যে বড় হোতা ছিলেন জেনারেল জিয়া এবং এর পেছনে আমেরিকারও হাত ছিল। যা আমাকে ৭৫’র ঘাতক কর্নেল রশিদ লন্ডনে বলে গেছেন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৫তম জন্মদিন এবং জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন, নিউইয়র্ক অর্ধ দিবসব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষন ছিল আর্নল্ড জাইটলিন যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে পাকিস্থানি বাহিনীর আক্রমনের শুরু ২৫ মার্চ থেকে ধারাবাহিক রিপোর্টিং করেন।
আরেকজন বরেণ্য অতিথি লরেন্স লিফসুলজ ১৯৭৫ এ বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর বাংলাদেশের পর পর কয়েকটি সেনা অভ্যুত্থান নিয়ে ব্যাপক লেখালেখি করেন। এই দু’জন বরেণ্য ব্যক্তি এবার মিশনের আয়োজনে উপস্থিত থেকে প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন। বিশিষ্ট সাংবাদিক ও লেখকদ্বয়কে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। তাঁরা প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। বিদেশি সাংবাদিকদের প্রশ্ন-উত্তর পর্ব সঞ্চালনা করেন ডঃ এ.কে. আব্দুল মোমেন।
এদিন বিকেল চারটায় শিশুদের জন্য চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে রচনা ‘শৈশব-কৈশোরের খোকা’ শীর্ষক রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
এতে ৬ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশুরা অংশ গ্রহণ করে। রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরন করেন মিশনের স্থায়ী প্রতিনিধি ডঃ এ.কে আব্দুল মোমেন।
অনুষ্ঠানে জাতির জনকের জন্মদিবসের কেক কাটেন স্থায়ী প্রতিনিধি ও আগত বিশেষ অতিথিদ্বয়। গোটা অনুষ্ঠানের সার্বিক পরিকল্পনায় এবং উপস্থাপনায় ছিলেন মিশনের প্রথম সচিব (প্রেস) মামুন-অর-রশিদ।
দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়। রাষ্ট্রপতির বাণী পাঠ করেন মিশনের মোঃ মুস্তাফিজুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন প্রথম সচিব (প্রেস রেন ইকনোমিক মিনিস্টার বরুন দেব মিত্র এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন ডিফেন্স অ্যাডভাইজর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একএম আখতারুজ্জামান।
গোলাম সারোয়ার হারুনের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু ভিত্তিক সঙ্গীত পরিবেশন করেন শাহ মাহবুব। কবিতা আবৃতি করেন মিজানুর রহমান বিপ্লব।
আলোচনা পর্বে স্থায়ী প্রতিনিধি ডঃ এ.কে আব্দুল মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে হলে আজকের শিশুদের আগামী দিনের সৎ ও যোগ্য নাগরিক হিসাবে গড়ে তুলতে হবে।
শিশু উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন কর্মকান্ড তুলে ধরে তিনি বলেন, আজকের শিশু আগামী দিনের নেতৃত্ব দেবে। সেই লক্ষ্য বিবেচনায় রেখে বর্তমান সরকার শিশুর শিক্ষা ও মানবিকতা বিকাশের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ করতে হলে নতুন প্রজন্মকে গড়ে তোলার বিকল্প নেই। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে আমাদের শপথ নিতে হবে সোনার বাংলা গড়ে তুলতে সবাইকে দৃঢ় প্রত্যয়ী হতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪২ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৪