নিউইয়র্ক: অভিবাসীদেরই জয়জয়কার নিউইয়র্কে। যুক্তরাষ্ট্রের অন্তঃবর্তী মধ্যবর্তী নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা পরাজয়ের রেকর্ড গড়লেও নিউইয়র্ককে ডেমোক্র্যাটদের দখলেই রেখেছে অভিবাসীরা।
আর তাই দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হয়েই ‘ড্রিম অ্যাক্ট’ পাস করার ঘোষণা দিয়েছেন নিউইয়র্কের গভর্নর এন্ড্রু কোমো।
মঙ্গলবার মধ্যরাতে শেরাটন হোটেলের বলরুমে বিজয়ী হিসেবে বক্তব্যে তিনি অঙ্গীকার করেন, আমরা কর্মজীবী পরিবারের ন্যূনতম মজুরি বাড়াবো, নারীদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিল পাস করবো, সরকারি সহযোগিতা বৃদ্ধিতে আইন পাস করাবো এবং ‘ড্রিম অ্যাক্ট পাস’ করবো। ’
কাগজপত্রহীন ও অবৈধ অভিবাসীর সন্তানদের বৈধতা ও নাগরিকত্ব দিতে এই ‘ড্রিম অ্যাক্ট’ ব্যাপক আলোচিত। প্রস্তাবনাটি বিল আকারে কংগ্রেসে উত্থাপনও করা হয়েছিল। কিন্তু, রিপাবলিকানদের কঠোর বিরোধিতার মুখে বিলটি পরিত্যক্ত হিসেবে হয়।
অভিবাসীদের ‘স্বর্গরাজ্য’ খ্যাত নিউইয়র্কে শুধু গভর্নর পদেই নয়, কংগ্রেসের আসনগুলো ধরে রেখেছে ডেমোক্র্যাট। আর বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে বাংলাদেশ ককাসের সব সদস্যরাই এই অন্তঃবর্তী মধ্যবর্তী নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন। ডেমোক্র্যাটদের রাজনীতির প্রতীক নীল রঙেই উদ্ভাসিত হয়ে আবারও নিউইয়র্ক।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের অন্যতম ব্যয়বহুল নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের ভরাডুবিতে যুক্তরাষ্ট্র সিনেটও রিপাবলিকানদের দখলে চলে গেছে এবার।
বর্তমান কংগ্রেসে সংখ্যাগরিষ্ঠ রিপাবলিকানরা এবার আরো ১৩টি আসনে বিজয়ী হয়ে মোট ৬৭টি আসনের সংখ্যাগরিষ্ঠতায় কংগ্রেসকে নিয়ন্ত্রণ করবে। ডেমোক্র্যাটদের আসন সংখ্যা ১৭৪ আর রিপাবলিকান আসন ২৪১।
যুক্তরাষ্ট্র সিনেটেও ডেমোক্র্যাটদের গুরুত্বপূর্ণ ৬টি আসন ছিনিয়ে নিয়ে এবং অতিরিক্ত আরেকটি আসনে বিজয়ী হয়ে রিপাবলিকানরা ইতোমধ্যেই সিনেটের নেতৃত্ব দখলের সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ৫২টি আসন নিশ্চিত করেছে।
এদিকে, এবারের নির্বাচনে ভোটারদের আগ্রহে ব্যাপক ঘাটতি দেখা গেছে। বিশেষ করে কর্মসংস্থান, অর্থনীতি, চিকিৎসা ব্যয় বিষয়গুলোতে নাগরিকদের মনে ব্যাপক ক্ষোভের কারণেই এই অনীহা বলে ধারণা করছেন পর্যবেক্ষকরা।
এদিকে, বাংলাদেশি আমেরিকান ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে দেখা গেলেও নির্বাচনকে ঘিরে অন্যবারের মতো ভোটকেন্দ্রে তাদের সক্রিয়তা চোখে পড়েনি। অথচ নিউইয়র্কে সরকারি হিসাব মতে, বাংলাদেশিদের সংখ্যা প্রায় এক লাখের কাছাকাছি হলেও ভোটার হিসেবে রেজিস্ট্রশনে অনীহার কারণে ইতোমধ্যেই মূল ধারার রাজনীতিতে সমালোচিত তারা।
সংশ্লিষ্ট সিটি কর্তৃপক্ষের সূত্রমতে, বিগত নির্বাচনে রেজিস্ট্রেশনে বাংলাদেশি ভোটারদের সংখ্যা মিলেছিল মাত্র ২২ হাজারের কাছাকাছি।
নিউইয়র্কে বোর্ড অব ইলেকশন গত নির্বাচন থেকেই ব্যালট পেপারে বাংলা সংযুক্তিসহ পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়াতে বাংলা ভাষা চালু করে। সরকারি নির্বাচনী প্রচারপত্র, নির্বাচনী নির্দেশিকাতেও বাংলা ভাষা চালু করা হয়েছে।
এছাড়া নির্বাচন কেন্দ্রে ভোটারদের সহায়তায় বাংলা দোভাষীও দেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এবারের এই মধ্যবর্তী নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের পরাজয়ের পর বিশ্লেষকেরা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ দিয়েছেন- অর্থনৈতিক উন্নয়নে ওবামা প্রশাসনের ব্যর্থতায় হতাশ আমেরিকানরা।
তবে তারা নতুন জনমত জরিপের উদ্ধৃতি দিয়ে এটাও বলেছেন, রিপাবলিকান বা ডেমোক্র্যাট কারো প্রতিই সন্তুষ্ট নয় বরং তারা দলগুলোর প্রতি আরো বিরূপ। জনগণের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন ও ভাগ্যোন্নয়ে জরুরি করণীয়ের তাগিদ দিতেই এ রায় দিয়েছেন জনগণ, এমনটিই মন্তব্য তাদের।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০১৪