নিউইয়র্ক: যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ ৫০ লাখ অভিবাসীকে বৈধতা দেওয়ার ঘোষণা আসছে আগামী সপ্তাহে।
বৃহস্পতিবার নিউইয়র্ক টাইমসকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার এই পদক্ষেপ সম্পর্কে জানিয়েছেন হোয়াউট হাউজের এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা।
তিনি জানান, পূর্ব এশিয়া সফর শেষে রোববার দেশে ফিরে রিপাবলিকানদের বিরোধিতাকে উপেক্ষা করেই প্রেসিডেন্ট ওবামা আগামী সপ্তাহেই ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে ঢেলে সাজানোর ঘোষণা দেবেন।
প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশ বলে সাজাপ্রাপ্ত অপরাধী, দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকিদায়ক এমন বিদেশি নাগরিক এবং অতিসম্প্রতি সীমান্ত অতিক্রমকারীদের ডিপোর্ট করার সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা আরও জানান, প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশের চূড়ান্তকরণে এখনো কাজ চলছে। এতে আরও পরিবর্তন আসতে পারে। এছাড়া প্রেসিডেন্টের ঘোষণা পিছিয়ে ডিসেম্বরেও যেতে পারে। তবে অবশ্যই তা জানুয়ারির আগেই হবে।
প্রেসিডেন্টের একটি আদেশই যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী সন্তানদের অনেক বাবা-মা ওয়ার্ক পারমিট পাবেন। তাদের গ্রেফতার হওয়ার ভয় দূর হবে, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হবে না বলেও জানান হোয়াইট হাউজের ওই কর্মকর্তা।
তিনি আরও জানান, দেশের আইন প্রয়োগে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাবলে নিয়মের পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নেবেন ওবামা। যেখানে ১২ হাজার ইমিগ্রেশন এজেন্টের কার্যক্রমে পরিবর্তন আনা হবে।
এদিকে, ওয়াশিংটন ভিত্তিক অভিবাসী বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘মাইগ্রেশন পলিসি ইনস্টিটিউট’র এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, অন্তত ৫ বছর যাবত যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাস করছে এমন ৩৩ লাখ মানুষ ওবামার পরিকল্পনার আংশিক এ উদ্যোগেই সুবিধা পেতে পারেন।
আরো ২৫ লাখ মানুষ যারা যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ১০ বছর যাবত বসবাস করেছে তাদের এ সুবিধার আওতায় আনার কথাও ভাবছে হোয়াইট হাউজ। এছাড়াও কাগজপত্রহীন অভিবাসী যারা শিশু বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছে এবং তাদের বাবা মাসহ অতিরিক্ত আরও ১০ লাখ মানুষের নিরাপত্তা প্রসঙ্গও প্রেসিডেন্টের চূড়ান্ত পরিকল্পনার ঘোষণায় নিয়ে আসার ভাবনা চলছে।
পর্যালোচনায় আরও বলা হয়, কয়েক লাখ কৃষি শ্রমিক, যারা অবৈধভাবে এদেশে প্রবেশ করেছে এবং দীর্ঘদিন যাবত কৃষি খামারে কাজ করছে, তাদের বিষয়টি নিয়েও হোয়াইট হাউজে আভ্যন্তরীণ বিতর্ক চলছে। ওবামার পদক্ষেপ বৈধ অভিবাসনের ক্ষেত্রে সুযোগ নিয়ে আসবে।
হাইটেক প্রযুক্তিতে দক্ষ অবৈধ অভিবাসী, দক্ষিণের সীমান্তে অতিরিক্ত নিরাপত্তা প্রহরা জোরদার, বিতর্কিত আইন প্রয়োগ কর্মসূচি ‘সিকিউর কমিউনিটি’ পুনরায় চালু, কাদের ডিপোর্ট করা হবে আর কাদের ডিপোর্ট করা হবে না, বিশেষ করে যাদের শক্ত পারিবারিক বন্ধন রয়েছে এবং যাদের বিরুদ্ধে অপরাধের খতিয়ান রয়েছে- তাদের ব্যাপারে স্বচ্ছ নির্দশনা থাকবে প্রেসিডেন্টে ঘোষণায়।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই পদক্ষেপ প্রেসিডেন্ট ওবামার সমালোচনাকারী এবং ইমিগ্রেশন অ্যাক্টিভিস্টদের তীব্র সমালোচনার সুযোগ করে দেবে। ডিসেম্বরে বাজেট পাস হলেই ইমিগ্রেশন নিয়ে আগুন জ্বালানোর অপেক্ষায় রয়েছে তারা।
উল্লেখ্য, মধ্যবর্তী নির্বাচনের পর গত সপ্তাহে সংবাদ সেম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ওবামা স্পষ্টভাবে বলেছিলেন, এ বছরের মধ্যেই ইমিগ্রেশন ব্যবস্থাকে কার্যকরী করবে আইনসম্মত এমন পদক্ষেপ আমরা নিতে যাচ্ছি। শুধু অপেক্ষা করে দেখুন আমি কী করি।
এ সপ্তাহে কংগ্রেস অধিবেশন শুরু হলেই ওবামা মনোনীত এটর্নি জেনারেল প্রার্থী লরেটা লিঞ্চকে নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে। হাউজ স্পিকার জন বোয়েনার ইতোমধ্যেই সংবাদ মাধ্যমে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ওবামা নিজে নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমারা প্রেসিডেন্টকে সাঁড়াশি (‘টুথ অ্যান্ড নেইল’) আক্রমণ করবো।
২০১৭ সালের নির্বাচনে নতুন প্রেসিডেন্ট রিপাবলিকান দলীয় হলে, বারাক ওবামার এই নির্বাহী আদেশ তুলে নিতে পারবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৪