দুর্গাপুরের ক্ষিদ্র কাশিপুর (রাজশাহী) থেকে ফিরে: রিদমিক জিমন্যাস্টিকে রিও অলিম্পিক কাঁপানো ‘বাংলার বাঘিনী’ মার্গারিটা মামুন সবশেষ গ্রামে এসেছিলেন ২০০৯ সালে। জন্মের পর মার্গারিটা গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুরে এসেছেন তিনবার।
মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) দরাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার ক্ষিদ্র কাশিপুরে থাকা মার্গারিটারের ফুপু বীণা জহুরা বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে জানাচ্ছিলেন এমনটাই।
মার্গারিটার বাবা সম্পর্কে জহুরা বলেন, দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করে রাজশাহী কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হন মামুন। এখান থেকে উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে ডাক্তারি পড়ার জন্য ভর্তি হন রাজশাহী মেডিকেল কলেজে। কিন্তু তিন মাস না যেতেই মন উঠে যায় তার। এরপর ভর্তি হন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। ১৯৮৩ সালে শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে চলে যান রাশিয়ায়। সেখানে গিয়ে রাশিয়ান বংশোদ্ভূত অ্যানাকে বিয়ে করেন। অ্যানাও পেশাদার রিদমিক জিমন্যাস্ট।
‘১৯৯৫ সালের ১ নভেম্বর মামুন-অ্যানা দম্পতির ঘরে জন্ম হয় ফুটফুটে মেয়ে মার্গারিটার। পরে জন্ম নেয় তাদের ছোট ছেলে ফিলিপ আল মামুন। মায়ের দেখানো পথে মাত্র সাত বছর বয়স থেকে রিদমিক জিমন্যাস্টিক্স চর্চা শুরু করেন মার্গারিটা। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে মার্গারিটা রৌপ্য পদক লাভ করেন। তখন থেকেই স্বর্ণ পদকের দিকে চোখ ছিল মার্গারিটার। সেখানকার মিডিয়াতেই ‘বাংলার বাঘিনী’র তকমা লাগে স্বর্ণকন্যার গায়ে। রিটা ভাঙা ভাঙা বাংলা বলতে পারেন। মামুন রাশিয়া থেকে ফিরে বাবার সময়কার পুরনো মাটির বাড়ি পাশেই একতলা ভবন তৈরি করেন। সবশেষ ২০০৯ সালে বেড়াতে এসেছিল গ্রামের বাড়িতে। সুযোগ পেলেই পুকুরের বাঁধানো ঘাটে বসে মিউজিক শুনতো রিটা। ’
জীবনধারার কথা জানিয়ে বীণা জহুরা বলেন, গ্রামে এলে এই বাড়িতে তারা থাকেন। চলে গেলে তালা দিয়ে রাখা হয়। গরম সহ্য করতে না পারায় মার্গারিটার জন্য বাড়িতে এসি লাগানো হয়েছে। কিন্তু মা-মেয়ে দেশি খাবার খেতে পারে না। তাই তাদের খাবারের তালিকায় রাখা হতো- মসলা ছাড়া লবণসেদ্ধ মাংস, চিংড়ি, ব্রেড, কফি ও জুস। মোবাইলে কথা হলেও মনের ভেতর তাদের স্মৃতি সবসময় ভেসে বেড়ায়। শেষবার আসার পর রিটাকে জড়িয়ে ছবি তোলেন ফুপু।
এক প্রশ্নের জবাবে মামুনের বড় বোন জহুরা বলেন, তিনি পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরে চাকরি করতেন। তাদের বাবা মৃত আব্দুল খালেক ছিলেন একজন নামকরা কাপড় ব্যবসায়ী। মা মেহেরুন নেসা ছিলেন গৃহিণী। ২০১২ সালে তিনি মারা যান।
তাদের সাত ভাই-বোনের মধ্যে মার্গারিটার বাবা মামুন সবার ছোট। মামুনের বড় ভাই এএসএম খসরু, মেজভাই আব্দুল মোতালিব, সেজ ভাই ডা. আবদুল মান্নান, সেজ বোন জিনাত ও ছোট বোন ফজিলা।
তিনি জানান, এবার তাদের আসার কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আসতে পারছে না। তার শরীরে ক্যানসার বাসা বেঁধেছে। খুব অসুস্থ। কয়েক মাস আগে বাথরুমে পড়ে যায়। ভাইয়ের কথা বলতে গিয়ে পানিতে চোখ ঝাপসা হয়ে আসে তার।
এবার অলিম্পিক অ্যারেনায় রিদমিক জিমন্যাস্টিক্সেই অংশ নেন মার্গারিটা মামুন। রাশিয়ায় জন্ম নিয়ে পড়া-লেখা, বেড়ে ওঠা সবই সেখানে। কিন্তু শিকড়টা গেঁথে আছে এই বাংলার মাটিতেই। নিজের চার ইভেন্ট হুপে ১৮.৮৩৩, বলে ১৯.০০০, ক্লাবে ১৭.৫০০ ও রিবনে ১৯.০৫০ একক অলরাউন্ডে ৭৪.৩৮৩ পয়েন্ট নিয়ে বাজিমাত করে শীর্ষে থেকেই শেষ করেন এই জিমন্যাস্ট।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১৬
এসএস/জিসিপি/এএ
** মার্গারিটার স্বর্ণ জয়ে গর্বিত স্বজনরা
** অলিম্পিকে ‘বাংলার বাঘিনী’র স্বর্ণ জয়
** রিওতে ‘বাংলার বাঘিনী’ নিজের হিটে প্রথম
** ‘বাংলার বাঘিনী’ রিটা অলিম্পিক মাতাচ্ছেন রাশিয়ার হয়ে (ভিডিও)