বেশিরভাগ নেতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ‘স্বৈরাচারী কর্মকাণ্ডের’ প্রতিবাদ করে জাপা ছেড়ে এনডিএম গঠনের উদ্যোগ নেন। ‘শিগগির’ আত্মপ্রকাশ করতে যাওয়া দলটির চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের পর প্রথম দফায় গত ১১ জানুয়ারি বিভিন্ন পদে ১৬ জনের তালিকা প্রকাশ করা হয়।
কথা ছিল পর্যায়ক্রমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে আত্মপ্রকাশ করবে এনডিএম। কিন্তু সেই তালিকা প্রকাশের একমাস না পেরোতেই পাল্টাপাল্টি বহিষ্কারের ঘটনা ঘটেছে দলটিতে। প্রথমে ৩ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠাতা সহ-সভাপতি আবু সৈয়দ ও মহাসচিব এটিএম গোলাম মওলা চৌধুরীকে বহিষ্কার করেন পার্টির চেয়ারম্যান (এরশাদের একসময়ের ব্যক্তিগত সহকারী ও মুখপাত্র দাবিদার) ববি হাজ্জাজ।
তার ঠিক তিন দিনের মাথায় সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ঘোষিত কমিটির ১৬ সদস্যের মধ্যে ১০ জনের উপস্থিতিতে এক সভায় খোদ চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজকেই বহিষ্কার করা হয়। তাকে বহিষ্কারের ঘটনা বাংলানিউজকে জানিয়েছেন এনডিএম মহাসচিব এটিএম গোলাম মওলা চৌধুরী। ভাইস চেয়ারম্যান আবু সৈয়দের সভাপতিত্বে পল্টনের অস্থায়ী কার্যালয় এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
দলীয় সূত্রের তথ্য, এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজের স্বৈরতান্ত্রিক ক্ষমতা প্রয়োগ, বিশেষ সহকারীর (চেয়ারম্যানের ক্ষমতা ব্যবহারের ক্ষমতা প্রদান) নামে ববির চাপিয়ে দেওয়া খসড়া গঠনতন্ত্রে অগণতান্ত্রিক পদ সৃষ্টির কারণেই এনডিএমে এ দ্বন্দ্বের সূত্রপাত।
এছাড়া কারও মতামত ছাড়া ববির একার সিদ্ধান্তে দলীয় মূল চার নীতিতে পরিবর্তন আনা, কায়দা করে ঘন ঘন মত পাল্টে আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা, ব্যক্তিগত সহকারীকে দিয়ে নেতাকর্মীদের হুমকি-ধামকির স্বরে কথা বলা, কানকথা আমলে নেওয়া, রাজনৈতিক কর্মীদের সঙ্গে কর্মচারীর মতো আচরণ করাও দ্বন্দ্বকে উস্কে দিয়েছে।
এসব ছাড়াও ববি হাজ্জাজের বহিষ্কৃত হওয়ার কারণ হিসেবে তার জমিদারী শাসনামলের মতো অফিসে শাহজাদার পাদুকা ব্যবহার আর বাকিদের প্রজাদের মতো খালি পায়ে হাটার জন্য বাধ্য করা, দল গঠনের আগেই কর্মীদের অনুদান সংগ্রহে বাধ্য করা, দলে আসতে প্রাথমিক উৎসাহীদের জোর করে সদস্যপত্র পূরণ করা, দেশ নামে নাগরিক ক্ষমতায়নের ব্যানারে বিদেশ হতে অবৈধ অর্থ বাগিয়ে আনার পাঁয়তারা এবং বিনা নোটিশে ভাইস চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে বহিষ্কার করাকে দায়ী করছেন নেতাকর্মীরা।
এনডিএম সূত্র বলছে, ২ ফেব্রুয়ারি ছিল ভাইস চেয়ারম্যান আবু সৈয়দের জন্ম দিন। ওই দিন অফিসে কেক কেটে ধুমধামের সঙ্গে ভাইস চেয়ারম্যানের জন্মদিন পালন করেন ববি হাজ্জাজ। এরপর মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সাংগঠনিক কাজে ভাইস চেয়ারম্যান ও মহাসচিব কক্সবাজার সফরে যান। আর সফরে থাকাবস্থায় গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তাদের বহিষ্কার করা হয়।
স্বাধীনতাযুদ্ধে বির্তকিত ভূমিকা রাখা ব্যবসায়ী মূসা বিন শমসের ছেলে ববি হাজ্জাজ দীর্ঘদিন দেশের বাইরে ছিলেন। সেখান থেকে দেশে ফিরে এরশাদের অর্থায়নে জাতীয় পার্টির গবেষণা কাউন্সিল (জেপিআরএস) গঠন করেন। পরবর্তীতে এরশাদের ব্যক্তিগত সহকারী ও উপদেষ্টা হিসেবে যোগ দেন।
বিগত নির্বাচনের আগে নানা-রকম বক্তৃতা দিয়ে আলোচনায় আসেন। কিন্তু হঠাৎ একটি ঘটনায় সবকিছু গুটিয়ে লন্ডন চলে যান ববি হাজ্জাজ। বেশ কিছুদিন পর দেশে ফিরে আবার রাজনীতি শুরু করেন। সর্বশেষ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাপা থেকে মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হন। আর তখনই এরশাদ তাকে জাপা থেকে বহিষ্কার করেন। এরপর জাপা থেকে পদত্যাগী গোলাম মওলা ও আবু সৈয়দকে নিয়ে এনডিএম গঠন কার্যক্রম শুরু করেন ববি হাজ্জাজ।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৭
এসআই/এইচএ/