দল দুটির নেতারা বলেছেন, নতুন যে ঐক্য গড়ে তোলা হয়েছে সেটা নিয়ে আমরা একটু সন্দিহান। কারণ, ওই জোটের লক্ষ্যটাই আমরা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারছি না।
মঙ্গলবার (১৬ অক্টোবর) বিকেলে ইমানুয়েলস ব্যাংকুয়েট হলে সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে জোট ছাড়ার ঘোষণা দেয় দল দু’টি। ঘোষণাপত্র পাঠ করেন ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি।
২০ দলীয় জোটে ভাঙন, বেরিয়ে গেলো ন্যাপ-এনডিপি
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, এনডিপির চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্তজা, ন্যাপের মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া, এনডিপি মহাসচিব মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা প্রমুখ। দল দু’টি যৌথভাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
জোট ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জেবেল রহমান গানি বলেন, আমরা সাংবিধানিক ও নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী। সেই বিশ্বাস থেকেই আজকের এই সিদ্ধান্ত। আমরা যে লক্ষ্য নিয়ে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে যোগ দিয়েছিলাম আজকে আমরা মনে করছি বিএনপি সেই অবস্থানে নেই। তাই আমরা তাদের সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছি।
তিনি বলেন, বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিয়ে ২০ দলীয় জোট বিলুপ্ত করল কি না সেই বিষয়ে তাদের কোনো স্পষ্ট ঘোষণা নাই। তাই আমরা বেরিয়ে এসে নতুনভাবে পথচলার প্রয়াস নিয়েছি এবং এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। আজ যে নতুন ঐক্য গড়ে তোলা হয়েছে সেটা নিয়ে আমরা একটু সন্দিহান। আসলে ওই জোটের লক্ষ্যটাই আমরা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারছি না। তবে তাদের জন্য আমাদের শুভকামনা রয়েছে।
জোট ছাড়ার কারণ ব্যাখা করে গানি বলেন, প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের নিজস্ব কিছু স্বপ্ন, নিজস্ব গুণ থাকে। আজকে জোটের রাজনীতিতে যে লক্ষ্যে আমরা ২০ দলীয় জোটের সাথে ঐক্য করেছিলাম। আমরা মনে করছি বর্তমানে বিএনপি সেখানে অবস্থান করছে না। তাছাড়া আমরা খালেদা জিয়ার নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রেখে ২০ দলীয় জোট যোগ দিয়েছিলাম। তার অবর্তমানে বিএনপির নেতৃত্বের প্রতি আমাদের যে আবেগ বা অবস্থান ছিল সেটা আর আজকে নেই।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন এবং ২০ দলীয় জোটের অবস্থান সম্পর্কে তিনি বলেন, কিছুদিন আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে যে ঐক্য করা হলো তাতে করে কি ২০ দলীয় জোট বিলুপ্ত করা হল? নাকি হবে না, বা যারা এই জোটে নতুন করে অন্তর্ভুক্ত হতে এসেছেন তারা কি ২০ দলীয় জোটকে ঔন করে? এ বিষয়ে আমরা আমাদের জোটের প্রধান দল বিএনপির কাছ থেকে স্পষ্ট ব্যাখ্যা পাইনি। আমাদের অপেক্ষা করতে বলা হচ্ছে। আমরা দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনের সময় যেহেতু অল্প তাই এই মুহূর্তে লুকোচুরি করাটা বা বিএনপির যদি তার পুরনো শরিকদের প্রতি আস্থার অভাব রাখে সেটাকে তো আমরা সমীচীন ভাবে দেখছি না।
আসন ভাগাভাগি নিয়ে সমঝোতা না হওয়ায় জোট ছাড়লেন কি না জানতে চাইলে গানি বলেন, আমরা আওয়ামী লীগ বা বিএনপির কাছে কোন আসনের তালিকা দেইনি। এখন যদি আওয়ামী লীগ বা বিএনপি আসনের তালিকা চায় তখন আমরা বিবেচনা করব তালিকা দেব কি দেব না।
সরকারের কাছ থেকে কোনো অফার পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে আমরা কোন অফার পাইনি। তবে ২০১৩ সালের প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্ন, আজকের প্রেক্ষাপট আরেকটু ভিন্ন। আমি জানি না সরকার অফার দেবে কি না? তবে আমরা এই মুহূর্তে কোনো অফার পাইনি। অফার আসলে কি সিদ্ধান্ত হবে সেটি সময়ই বলে দেবে।
নতুন কোনো জোটে যোগ দেবেন কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে ন্যাপ চেয়ারম্যান বলেন, এই মুহূর্তে আমরা হয়ত বা একটু পর্যবেক্ষণ করতে চাইব। রাজনৈতিক দলের সাথে আলাপ-আলোচনা অতীতেও ছিল ভবিষতেও থাকবে। আমাদের মতাদর্শের সাথে চিন্তা ভাবনার সাথে যদি কোন জোটের সাথে এক হওয়ার সুযোগ আসে সেখানে অবশ্যই উদার মনোভাব নিয়েই এগুবো।
২০ দলীয় জোট ছাড়ার ব্যাপারে জোটের অন্য শরিকদের সাথে আলোচনা হয়েছে কি না বা আর কেউ ছাড়বে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে গানি বলেন, আজকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে শরিক দলের অন্য কারো সাথে আলাপ আলোচনা হয়নি। তবে অন্যরা ছাড়বে কি না সেটা বলতে পারছি না। অন্যরা আমাদের মতো মনে করলে আসতেই পারে। আমরা যে যুক্তিগুলোতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি সেই বিষয়গুলোতে তারা যদি যৌক্তিক মনে করে তাহলে তারা একই প্রকার সিদ্ধান্ত নিতেও পারে।
তিনি বলেন, জোট যখন এক হয় সেখানে আস্থার প্রশ্নটা সবচেয়ে বড় হয়ে দেখা দেয়। আমরা খালেদা জিয়ার উপরে আস্থা রেখেই জোটে এসেছিলাম। আমরা বর্তমানে যে জিনিসহুলো লক্ষ্য করছি, আমিও ব্যথিত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া কারাবরণের পর জোটের পক্ষ থেকে একটি প্রতিবাদও করতে পারিনি। যা করেছে বিএনপি একাই করেছে। তাতে করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রতি আমার যে আবেগ, আমার দলের যে অবস্থান, রাজনৈতিক যে অবস্থান তা প্রকাশ করার সুযোগ পাচ্ছি না।
আপনাদের সমস্যা সুরাহার আশ্বাস দিলে বিএনপিতে ফিরবেন কি না জানতে চাইলে গানি বলেন, আমরা যে রাজনীতিটাকে পরিহার করতে চাচ্ছি সেই রাজনীতি যদি বিএনপি পরিহার করে তাহলে অবশ্যই ভবিষতে বিএনপির সাথে এক হব।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৮
এসএম/এমজেএফ