শুক্রবার (২৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজধানীর বাড্ডায় বিকল্প যুবধারার বিশেষ কাউন্সিলে একথা বলেন তিনি।
এর আগে অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়ার পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ও বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, ছাত্রদলের প্রথম নির্বাচিত সভাপতি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী গোলাম সারোয়ার মিলন ও বিশিষ্ট শিল্পপতি প্রকৌশলী শফিকুর রহমান অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিকল্পধারায় যোগ দেন।
বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, সিলেটের জনসভায় ৯৮ ভাগ মানুষ ছিলো বিএনপির, বাকি দুইভাগ ছিলো অন্যদের। সেই সমাবেশে স্বাভাবিক কারণেই শ্রদ্ধার সঙ্গে অন্য দলের নেতারা বঙ্গবন্ধুর নাম স্মরণ করেছেন সত্তর থেকে আশিভাগ। ধন্যবাদ, যিনি এই দেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন তাকে স্মরণ করেছেন নেতারা, এটা স্বাভাবিক।
তিনি আরো বলেন, বিএনপির নেতারা শহীদ জিয়ার নামটি নেননি। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা যিনি দিলেন তার নামটি কেউ বলতে সাহস পাননি। কী মনে হয়, তারা কি আত্মসমর্পণ করেছেন? কার কাছে? কেন? এ দুটি প্রশ্ন জনগণের মনে থেকে যাবে।
সাবেক রাষ্ট্রপতি বলেন, বিএনপির নেতারা উচ্চারণ করেননি ভাসানীর নাম। কেউ উচ্চারণ করেন নাই। তারা কৃষকের মুক্তির সাধক শেরে বাংলার নাম উচ্চারণ করেননি। কেউ না। স্বাধীনতার বীর সিপাহসালার ওসমানীর নাম উচ্চারণ কেউ করলেন না। তাদের কথা বলা উচিত ছিলো না? কেন বলেন নাই আপনারা? জবাব দিতে হবে, কেন বলেন নাই, কেন বলেন নাই? আপনারা সত্যিই যদি মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাস করে থাকেন, আপনাদের যদি সত্যিই স্বপ্ন ছিলো এই রঙিন পতাকাকে সম্মান দেখানোর, কিন্তু দেখান নাই।
যুক্তফ্রন্ট চেয়ারম্যান বি. চৌধুরী বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নও বাস্তবায়ন চাই। মওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা ফজলুল হকের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবো। আমরা উন্নয়ন চাই, গণতন্ত্রের পূর্ণ বিকাশ চাই।
তিনি বলেন, ড. কামাল হোসেন চুক্তি ভঙ্গ করেছেন। আমরা ১৩ অক্টোবর তার দাওয়াতে বাসায় গিয়েছিলাম কিন্ত তিনি বাসায় ছিলেন না। এমনকি তার কোনো লোকও বাসায় ছিল না, তার ঘরের দরজা বন্ধ ছিলো। তিনি যেভাবে চুক্তি ভঙ্গ করলেন, তাতে আমরা আঘাত পেয়েছি। আমরা অসত্যে, ভ্রান্তির সঙ্গে কোনও চুক্তি করি না।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আলোচনার আহ্বান জানিয়ে বি. চৌধুরী বলেন, আলোচনা ছাড়া পৃথিবীর কোথাও সমাধান হয় না। আপনার কাছে দাবি করছি, আপনি বঙ্গবন্ধুকন্যা, এটাই সবচেয়ে বড়। আপনি উদারচিত্তে এগিয়ে আসেন। গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে সব দলের সঙ্গে আলোচনা শুরু করুন।
বিএনপির সঙ্গে ঐক্য না হওয়ার কারণ জানিয়ে বি. চৌধুরী বলেন, আমি বিএনপিকে বলেছিলাম, আপনারা ১৭৫টি আসন নিন, বাকি সব দলের জন্য ১২৫টি আসন। আমি তো বলিনি বিকল্পধারাকে ১২৫ আসন দিতে হবে। এই ভারসাম্য যারা অস্বীকার করে, তাদের সঙ্গে কিসের ঐক্য? আমরা ভারসাম্যের রাজনীতি চাই।
বিকল্পধারায় যোগদান অনুষ্ঠানটিকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়ে শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, আজকে এই অনুষ্ঠানে আসায় স্বাভাবিক প্রশ্ন আসবে, ঠিক তিন বছর আগে রাজনীতিতে অবসর নেওয়ার পর কেন আজকে আবার রাজনীতিতে ফিরলাম। কেন একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করলাম? অত্যন্ত পরিচিত, সাহসী, জাতীয়তাবাদী ধারার রাজনীতি প্রসারিত করতে যার অবদান আছে, তিনি হলেন বি. চৌধুরী।
অবসর থেকে ফেরার প্রসঙ্গ টেনে শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, ‘আমি যখন রাজনীতি থেকে অবসর নিই, একটা কথা তখন উল্লেখ করেছিলাম। শারীরিক সুস্থতার সাপেক্ষে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধকে সামনে রেখে যদি দেশ ও জাতির জন্য কোন ধরনের অবদান রাখার সুযোগ আসে, ভূমিকা রাখার সুযোগ পাই, তাহলে নিজেকে আমি সেই কাজে সম্পৃক্ত করবো। সেই প্রতিশ্রুতির ধারাবাহিকতায় আজকে বিকল্পধারায় যোগ দিলাম।
২০ দলীয় জোট ছেড়ে আসা ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি বলেন, সত্যিকার অর্থে ভারসাম্যের রাজনীতি শুরু করেছেন বি. চৌধুরী। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে একটি দল। যারা জিয়ার দলকেও ধ্বংস করতে চায়।
অনুষ্ঠানে হামদুল্লাহ মেহেদীর বিএনপি জোট ছেড়ে আসার বিষয়টি উল্লেখ করে মাহী বি. চৌধুরী কাউন্সিলে বলেন, স্বাধীনতা বিরোধীদের ২০ দলীয় জোট ছেড়ে এসেছেন লেবার পার্টির মহাসচিব হামদুল্লাহ মেহেদী।
অনুষ্ঠানে কথা বলেন সদ্য বিকল্পধারায় যোগদানকারী সাবেক প্রতিমন্ত্রী গোলাম সারোয়ার মিলন, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি, এনডিপি চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মোর্ত্তুজা, বিএলডিপি চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন আল আজাদ, লেবার পার্টি একাংশের মহাসচিব হামদুল্লাহ মেহেদী প্রমুখ।
সকালের অধিবেশনে বিকল্প শ্রমজীবীধারার কাউন্সিলে সভাপতি আইনুল হক এবং সাধারণ সম্পাদক আরিফুল হক সুমন নির্বাচিত হন। এ সময় ৮১ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।
বিকেলে যুবধারার কাউন্সিলে সভাপতি হিসেবে অধ্যাপক আসাদুজ্জামান বাচ্চু ও সাধারণ সম্পাদক পদে গোলাম মোস্তফা সারোয়ার নির্বাচিত হন।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১৮
এমএইচ/এমজেএফ