ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

আওয়ামী লীগের সঙ্গে সখ্য গড়তে চায় জামায়াত

মান্নান মারুফ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৫, ২০১০
আওয়ামী লীগের সঙ্গে সখ্য গড়তে চায় জামায়াত

ঢাকা: বিএনপির সঙ্গে রাজনৈতক বন্ধন ঢিলে হয়ে আসছে জামায়াতে ইসলামীর। দলের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে চারদলীয় জোটের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধা ধর্মভিত্তিক এ রাজনৈতিক দলটি এখন বিএনপির সঙ্গ ছেড়ে সখ্য গড়তে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে।



দলীয় সূত্রে জানা গেছে, যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে বিপদগ্রস্ত জামায়াত নেতারা বিএনপির ওপর আর আস্থা বা ভরসা রাখতে পারছেন না। তাই বিএনপির সঙ্গে তারা যোগাযোগ রাখছেন নামকাওয়াস্তে।

দু’একজন জামায়াত নেতা মাঝেমধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার গুলশান কার্যালয়ে গিয়ে দেখা করে এলেও গোপনে গোপনে তারা সরকারের সঙ্গে আপোসরফায় পৌঁছাতে চাইছেন।

এজন্য মীর কাসেমের নেতৃত্বে জামায়াতের একটি চৌকস দল সরকারেরই একটি অংশের সঙ্গে জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন।

দলীয় সূত্রের খবর অনুযায়ী, সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় আসার প্রাণপন চেষ্টা করছে জামায়াত। আপাতত রাজনীতি করার অধিকারটুকু নিশ্চিত করতে চাইছে তারা।

অপরদিকে, সরকারের ওই অংশটি বেশ কিছু শর্ত বেঁধে দিচ্ছে জামায়াতকে। শর্ত অনুযায়ী  প্রথমে চারদলীয় জোট থেকে সরে আসতে হবে তাদের। এরপর মুখে কুলুপ আঁটতে হবে যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে। শীর্ষ নেতাদের ভাগ্যে যাই ঘটুক মেনে তা নিতে হবে চুপচাপ। আগামী নির্বাচনেও থাকতে হবে নিরপেক্ষ।

জামায়াতের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এসব শর্ত মেনেই ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সমঝোতা চাইছেন তারা।

জামায়াতের এক প্রভাবশালী তরুণ নেতা বাংলানিউজকে বলেন, ‘দল ধরে রাখতে ও নেতাকর্মীদের বাঁচাতে সরকারের সঙ্গে সমঝোতার উদ্যোগ নিয়েছে জামায়াত। এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন দলের অধিকাংশ তরুণ নেতা। জ্যেষ্ঠ নেতাদের অনেকে বিষয়টি পছন্দ না করলেও তীব্র বিরোধিতা করছেন না কেউই। ’

সরকারের সঙ্গে আপোসরফা করছেন কিনা জানতে চাইলে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মজিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা সবার সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে চাই। ২০০১ সালে যেমন বিএনপির সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচন করেছি, তেমনি ’৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট না বাঁধলেও আমরা তাদেরই সমর্থন করেছিলাম। ’

তবে জামায়াতের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগকে কোনো সমঝোতার প্রস্তাব দেওয়া হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগত পর্যায়ে এরকম আলোচনা চলছে কি না তা বলতে পারবো না। ’
 
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সরকারের সঙ্গে ভালো সর্ম্পক চাই। কিন্তু তারা যেভাবে মিথ্যা অভিযোগে আমাদের নেতাদের গ্রেপ্তার করছে তা রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত। ’

এদিকে, জামায়াতের সঙ্গে কোনো সমঝোতার সম্ভাবনা আছে কি না জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বাংলানিউজকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। তাই এ ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই। ’
 
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন সিরাজ বাংলানিউজকে বলেন, ‘জামায়াতের তরুণ নেতারা যুদ্ধাপরাধে জড়িত শীর্ষ নেতাদের বিচার চায়। তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গেও কথা বলতে চায় বলে শুনেছি। তবে এটা তাদের কোনো কৌশল হতে পারে। আওয়ামী লীগ তাদের অপকৌশলে পা দেবে না। ’
 
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বাংলা নিউজকে বলেন, ‘যার যার রাজনীতি সে করবে এটাই স্বাভাবিক। রাজনীতিতে কে কখন কি করবে এটা তাদের ব্যাপার। বাঁচার তাগিদে যে কোনো মানুষ যে কোনো কৌশল নিতে পারে। জামায়াত সেটাই করছে কিনা আমি জানি না। ’

জামায়াতের প্রচারবিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক তাসনীম আলম বাংলানিউজকে বলেন, ‘এরকম কোনো উদ্যোগের প্রশ্ন আসবে কেন? আমাদের নেতারা কোনো অপরাধ করেননি। তাদের মিথ্যা অজুহাতে আটক করা হয়েছে। তবে সরকার চাইলে এ বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। ’

জামায়াতের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করছেন বলে শোনা যাচ্ছে, এ ব্যাপারে কি বলবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরাও কতো কথা শুনছি। দেখি কি হয়। ’

ঢাকা মহানগর জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম বুলবুল বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা ছাড়া রাজনীতি করা কঠিন। সরকারের সঙ্গে ভালো সর্ম্পক থাকলে আমাদেরই ভালো। আমরা সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্কে বিশ্বাস করি। তাই সরকারের সঙ্গে সমঝোতার উদ্যোগ কেউ নিয়ে থাকলে ভালো। তবে কেউ এরকম উদ্যোগ নিয়েছেন কিনা জানি না। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৫১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৫, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad
welcome-ad