ঢাকা: যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কথা বলে আবার জাতিকে হানাহানির দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
তিনি বলেছেন, ‘স্বাধীনতার পর প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর হোটেল শেরাটনে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল ও মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম আয়োজিত ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করে জাতির মধ্যে বিভাজন তৈরি করা হচ্ছে। এ বিভাজন ও বিকৃতির বিরুদ্ধে নতুন প্রজন্মসহ সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। ’
মুক্তিযোদ্ধারাই জাতির ঐক্যের কেন্দ্রবিন্দু বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের কেন্দ্র করেই জাতির ঐক্য ও সমন্বয় গড়ে তুলতে হবে। আমরা সুন্দর দেশ ও সমাজ গড়তে মুক্তিযুদ্ধ করেছি। কিন্তু আজ সেই মহান মুক্তিযুদ্ধকেই বিভাজনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। মুক্তিযোদ্ধাদের এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। ’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘ক্ষমতাসীনরা মামলা-হামলা দিয়ে আমাদের আষ্ঠেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলছে। সংসদ, প্রশাসন. বিচার বিভাগ সব কিছুকে দলীয়করণের মাধ্যমে ধ্বংস করা হচ্ছে। জীবনের নীরাপত্তা নেই। সামনে কেবল অন্ধকার। এ থেকে মুক্তি পেতে আত্মঅনুসন্ধান করতে হবে। ’
তিনি আরও বলেন, ‘১৯৭১ সালে যখন জাতি দিশেহারা তখন জিয়াউর রহমানই এগিয়ে এসে হাল ধরেছিলেন। তার ঘোষণাতেই সূচিত হয়েছিল মহান মুক্তিযুদ্ধ। ’
অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া মুক্তিযোদ্ধা ও সেক্টর কমান্ডারদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
বিএনপির মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক উইং কমান্ডার (অব.) হামিদুল্লাহ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন। এছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, সাদেক হোসেন খোকা, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক এমাজ উদ্দিন আহমেদ, সুপ্রীম কোর্ট বার সমিতি সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, ড. মাহবুব উল্লাহ, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন, মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম’র আহবায়ক শামা ওবায়েদ, মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতা ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল, জহিরুদ্দিন বাবর, শফিউজ্জামান খোকন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই ‘রণাঙ্গনে জিয়া’ নামে একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়। এরপর শুরু হয় বক্তৃতা পর্ব।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দু:শাসন আইয়ামে জাহেলিয়াতকেও (অন্ধকার যুগ) ছাড়িয়ে গেছে বলে অভিযোগ করে বিএনপি নেতারা বলেছেন, ‘দেশে এখন আওয়ামী জাহেলিয়াতের যুগ শুরু হয়েছে। ’
আওয়ামী লীগকে ইঙ্গিত করে বক্তারা বলেন, ‘যারা ১৯৭২ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি। বুদ্ধিজীবী হত্যার পরও চুপ থেকেছেন। তারা এখন মুক্তিযুদ্ধের সাইনবোর্ড দিয়ে সব জায়গাই ফার্স্ট হচ্ছেন। হত্যা, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিতে তারা এরই মধ্যে ফার্স্ট হয়েছেন। ’
বক্তারা আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এবং তাদের ছাত্র ও যুব সংগঠন স্বাধীনতার পক্ষের সাইনবোর্ড লাগিয়ে খুন, ধর্ষণ, লুটপাট চালিয়ে যাচ্ছে। ’
যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে সরকার যাতে কোনো অন্যায় ও বিশৃঙ্খলা করতে না পারে সেজন্য মুক্তিযোদ্ধাদের সজাগ ও ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানান বক্তারা।
এছাড়া দেশের সার্বিক পরিস্থিতি, যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে ঢালাও অভিযোগ ও হয়রানি, হত্যা-গুম, নির্যাতন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সারাদেশে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের উপর হামলা, আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি ইত্যাদি বিষয়ও উঠে আসে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যে।
বাংলাদেশ সময়: ২১১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৫, ২০১০