ঢাকা: আগামী সাধারণ নির্বাচনে জনগণকে আবারও আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার (১ জুলাই) দুপুরে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ জনগণের সঙ্গে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের স্বাধীনতা এনেছে, অর্থনৈতিক মুক্তি এনে দিয়েছে, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং দেশবাসীর জন্য খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করেছে। আগামী সাধারণ নির্বাচনে আবারও আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকায় ভোট দিন।
গত সাড়ে ১৪ বছরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশের উন্নয়নের সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, তার দল ক্ষমতায় গেলে সাধারণ মানুষের ভাগ্য বদলায়।
শেখ হাসিনা বলেন, যারা চায়নি আওয়ামী লীগ কোনোদিন ক্ষমতায় আসুক, যারা চায়নি কখনো এদেশের মানুষ আবার পেট ভরে ভাত খাক, মানুষের একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই হোক, রোগে চিকিৎসা পাক, শিক্ষা পাক, তাদের প্রতি আমাদের চ্যালেঞ্জ যে এই দেশে আমার বাবা স্বাধীন করেছেন, আমার বাবা যে লক্ষ্য নিয়ে স্বাধীন করেছেন সেটা আমি পূরণ করবো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাই তার লক্ষ্য। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন করা, অবকাঠামো উন্নয়ন করা এটাই তো আমাদের লক্ষ্য।
তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি। বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবো এটাই আমাদের লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করতে চাই।
একটা মহল চোখ থাকতে অন্ধ মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, আজকে আমরা আমাদের দেশের ভাবমূর্তি সারা বিশ্বে উজ্জ্বল করতে পেরেছি। কিছু তো আছেই যারা দেশের কোনো ভালোই চোখে দেখে না। যারা দেখে না চোখে, চোখ থাকতে অন্ধ তাদের বিষয়ে কিছু বলার নাই। তারা দেখে না কিন্তু ভোগ করে।
কিছু মানুষ সারাদিন কথা বলার পরও বলে কথা বলার অধিকার নাই অভিযোগ করে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, সারাদিন কথা বলে তারপর যদি বলে কিছুই বলতে পারি না। কথা বলার অধিকার নাই। সব বলেই বলে কথা বলার অধিকার নাই। এদের ব্যাপারে করুণা করা ছাড়া কিছুই করার নেই। এদের আমরা করুণাই করি।
রাস্তাঘাট, পুল-ব্রিজসহ কোটালীপাড়ার অবকাঠামো উন্নয়নের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এই কোটালীপাড়ায় আসতে গেলে কষ্ট ছিল, চলাচলে কষ্ট ছিল। এখন আর সে কষ্ট নেই।
কোটালীপাড়াবাসীর প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার বাবা-মা, নিজের ভাই নেই। আপনারাই আমার আপনজন। আপনারাই আমার সব কাজ করে দেন।
পদ্মা সেতু সুফলের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ পদ্মা সেতু, মিথ্যা অপবাদ দিতে চেয়েছিল, নিজের ভাগ্য গড়তে আসিনি, এদেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে এসেছি। তাদের অপবাদের প্রতিবাদ করে নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু করতে পেরেছি। এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা। সেই শক্তিটা কিন্তু আপনারা যুগিয়েছেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন তার ছেলে ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।
শুভেচ্ছা বিনিময় শুরুর আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে পৌঁছে সেখানে তিনি একটি নিম, একটি বকুল এবং একটি আম গাছের চারা রোপণ করেন।
পরে নবনির্মিত কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা।
এর আগে গোপালগঞ্জে দুই দিন সফরের অংশ হিসেবে শনিবার (১ জুলাই) বেলা ১১টা ২৭ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী কোটালীপাড়া এসে পৌঁছান। এর আগে তিনি সকাল ৮টায় সড়ক পথে গণভবন থেকে রওয়ানা হন। এ সফরে তিনি টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ স্থানীয় জনসাধারণের সঙ্গেও শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
কোটালীপাড়ার কর্মসূচি শেষে দুপুরের পর বঙ্গবন্ধু কন্যা টুঙ্গিপাড়ার নিজের গ্রামের বাড়িতে যাবেন। টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তার সমাধিসৌধে পুষ্পস্তবক অপর্ণ করবেন।
রাতে টুঙ্গিপাড়ার নিজ বাড়িতে অবস্থান করবেন শেখ হাসিনা।
সফরের দ্বিতীয় দিন রোববার (২ জুলাই) সকালে তিনি টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ জনগণের সঙ্গে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। দুপুরে নিজের গ্রামের বাড়িতে মধ্যাহ্নের বিরতি দেবেন। গোপালগঞ্জ সফর শেষে বিকেলে সড়ক পথে ঢাকায় ফিরে আসবেন শেখ হাসিনা।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার আগমণকে ঘিরে গোটা গোপালগঞ্জে উৎসবের আমেজ। শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানিয়ে রং-বেরঙের ব্যানার-পোস্টার, প্ল্যাকার্ড টানানো হয়েছে।
গোপালগঞ্জ জেলাবাসী বলছেন, তাদের ঈদ উৎসবের আনন্দ কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে শেখ হাসিনার এ আগমন।
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া উপজেলা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী আসন।
প্রধানমন্ত্রী নিয়মিত এলাকার বিষয়ে খোঁজ-খবর রাখেন। চলতি বছরে একাধিকবার তিনি টুঙ্গিপাড়ায় সফরে গিয়েছিলেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গেও মতবিনিময় করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৮ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০২৩
এমইউএম/এসকে/আরআইএস