ঢাকা: নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, কোনো এক সাদা চামড়ার লোক প্রস্তাব দিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম মিয়ানমারের অংশে নিয়ে খ্রিষ্টান রাষ্ট্র করতে চায়। এ সাদা চামড়ার লোকের বাড়ি কোথায় ? এর নাম কি? আমরা এর জবাব চাই।
রোববার (২৬ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে গণসংহতি আন্দোলন আয়োজিত আব্দুস সালামের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘জনগণের মুক্তির সংগ্রাম এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সংবিধান প্রতিষ্ঠার লড়াই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমাদের সরকার প্রধান অবিরাম অনর্গলভাবে বলে চলেছেন 'আমরাতো নির্বাচিত সরকার, আমাদের কী অপরাধ ? কেন বদলাতে চাচ্ছে?' উনি কী এতই নিরাপোষ অসহায় মানুষ যে উনি বুঝতে পারছেন আমরা কেন তাদের পরিবর্তন চাই। এটা না বোঝার কি আছে? উনি বুঝতে পারেন কোনো এক সাদা চামড়ার লোক প্রস্তাব দিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম মিয়ানমারের অংশ নিয়ে খ্রিস্টান রাষ্ট্র করতে চান। এ সাদা চামড়ার লোকের বাড়ি কোথায়? এর নাম কি? উনি কী কোনো ব্যবসায়ী, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে এসব কথা বলেছেন? আর এখন তিনি (প্রধানমন্ত্রী) আমাদের এসব কথা বলছেন। বগি-চগি মানে রাজনীতি না। কথা স্পষ্ট করে বলতে হবে। যদি এরকম কোনো রাষ্ট্র থাকে, সেটা কোন রাষ্ট্র ? তারা কী রাষ্ট্রীয়ভাবে বা সরকারিভাবে আমাদের সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছে? আমরা এর জবাব চাই। কে আপনাকে এটা বলল, কোনো সাদা চামড়া? ও কী আমেরিকান, কানাডিয়ান, নাকি ইউরোপীয় কোনো দেশ নাকি জাপানিজ? সবগুলোই তো সাদা চামড়া।
তিনি আরও বলেন, সরকার সমস্ত দিকে আটকে যাচ্ছে। এখন যত তাড়াতাড়ি এদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা যায় ততই ভালো। সরকার তাড়াতাড়ি বিদায় হবে। এ সরকার সব দিক থেকে বিপদে আছে। ৭ জানুয়ারি তাদের বিশ্রাম বা নিঃশ্বাস নেওয়ার মতো সময় দেয়নি। বরং বেশি করে সংকটের মধ্যে পড়েছে। এখান থেকে তাদের উত্তরণের একমাত্র উপায় হচ্ছে যদি তারা পদত্যাগ করে, একটা অন্তবর্তী সরকার দিয়ে নির্বাচন দেয়। আর যদি তারা না দেয়, জেদাজেদি করে তাহলে জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে, মানুষের জীবন যেভাবে দুর্বিষহ হচ্ছে তাহলে আন্দোলন লড়াই ঠেকানো কষ্টকর হবে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ২০১৮ সালের রাতের ভোটের কারচুপির সভাপতিত্ব করেছেন জেনারেল আজিজ। না হলে তিনি কীভাবে বলেন, এ ভোট (২০১৮ নির্বাচন) সবচেয়ে ভালো নির্বাচন হয়েছে। এরচেয়ে ভালো নির্বাচন তিনি বাংলাদেশে দেখেনি। জেনারেল আজিজ, বেনজীর আহমেদের মতো আরও আমলাদের নাম হয়তো সামনে আসবে। যারা বিভিন্ন জায়গায় বসে প্রশাসনকে কাজে লাগিয়েছে এরকম একটা শাসন ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখতে। প্রত্যেকটা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান কিংবা বিচার বিভাগ যারা এরকম একটা শাসন ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করেছে, সব মিলিয়েই যেটা বাননো হয়েছে তাতে এ রাষ্ট্র ব্যবস্থার মধ্যে আর সরকার পরিবর্তন সম্ভব না। সরকার পরিবর্তন করতে হলে আমাদের রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লড়তে হচ্ছে।
সাকি আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষ এখন পরিষ্কার বুঝতে পারছে যে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্বের ক্ষেত্রে এখন প্রধান বাধা হয়ে দাড়াচ্ছে বর্তমান সরকার যেভাবে এ রাষ্ট্রটাকে একটা দলীয় বিষয়ে পরিণত করেছে, জনগণকে যেভাবে বিভাজিত করেছে এবং স্রেফ গদি রক্ষার জন্য আজকে পররাষ্ট্রনীতি তৈরি করেছে। তাতে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়েছে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারন সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের পরিবর্তে এখন একটা ফ্যাসিবাদী শাসন ও স্বৈরতন্ত্র দেশকে উপহার দিচ্ছে। আজকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা একটা যাতনায় পর্যবসিত হয়েছে। বাস্তবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কোনো দূরবর্তী কোনো সম্পর্ক তারা আর অবশিষ্ট রাখেনি। আওয়ামী লীগ আজকে মানুষের ভোটাধিকারের বিরুদ্ধে, গণতান্ত্রিক অধিকারের বিরুদ্ধে, বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সেনাবাহিনীর একটা সুনাম আছে। আমাদের সেনাবাহিনী দেশের বাইরে শান্তিরক্ষা মিশনে আছে। কিন্তু একটা দেশের সেনাবাহিনীর প্রধানের বিরুদ্ধে, পুলিশ প্রধানের বিরুদ্ধে যদি এ ধরনের ব্যবস্থা (নিষেধাজ্ঞা) গ্রহণ করা হয় তাহলে এর দায়-দায়িত্ব কার ? অবশ্যই বর্তমান সরকার এবং সরকারি দলের। সুতরাং এ দায়-দায়িত্ব তাকে গ্রহণ করতে হবে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির সভাপতিত্বে এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, গণমুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম লালা, জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান ও গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৮ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০২৪
এইচএমএস/জেএইচ