ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

আন্দোলনে নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণসহ ৩০ দাবি এনডিপির

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০২৪
আন্দোলনে নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণসহ ৩০ দাবি এনডিপির এনডিপির সংবাদ সম্মেলন | ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ ও পরিবারের একজনকে যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে নিয়োগ দেওয়াসহ ৩০ দফা দাবি জানিয়েছে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি)।

রোববার (১৮ আগস্ট) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়েজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এসব দাবি জানান এনডিপির চেয়ারম্যান কে. এম. আবু তাহের।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সনে জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়েও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে ছলনার মাধ্যমে দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড শুরু করেন। দেশি-বিদেশি গভীর ষড়যন্ত্রে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে স্থায়ীভাবে দেশ শাসনের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে ভারতের লেজুরভিত্তিক রাষ্ট্রে পরিণত করেন। দেশের মানুষের ওপর পরিবার হত্যার প্রতিশোধ নিতে দেশকে দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেন। শেখ হাসিনা সজ্ঞানে দেশের মানুষের জন্য এই পরিণতি সৃষ্টি করেছিলেন। দেশের মানুষের প্রতি তার কোনো ভালোবাসা ও জবাবদিহিতা না থাকায় শত শত ছাত্র-জনতার মৃত্যুর পরও হাজার হাজার মৃত্যুর বিনিময় হলেও ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিলেন।

এনডিপির চেয়ারম্যান আরও বলেন, সেনাবাহিনীর ঐকান্তিক চেষ্টা ও দেশপ্রেমের দৃঢ়তায় শেখ হাসিনা টিকতে পারেননি। শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের একনায়কতান্ত্রিক স্বৈরশাসনের পর সাহসী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলনে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি) অন্তবর্তী সরকারের কাছে ৩০ দফা দাবি উপস্থাপন করছে।

দাবিগুলো হলো-
১। সকল শহীদের পরিবার প্রতি এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ ও পরিবারের ১ জনকে যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে নিয়োগ করতে হবে।

২। আহতদের ফ্রি সু-চিকিৎসা, শারীরিক অবস্থাভেদে জনপ্রতি কমপক্ষে ২৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ ও যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি চাকরি দিতে হবে।

৩। কোটা সংস্কার ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে পুলিশের ইন্সপেক্টর পর্যন্ত দোষী ব্যক্তিদের তদন্ত সাপেক্ষে মানবতাবিরোধী অপরাধ আইন আদালতে সাজার ব্যবস্থা করতে হবে।

৪। সন্ত্রাসী দল হিসেবে আওয়ামী লীগের রাজনীতি ২০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করতে হবে। ২০ বছর পর ৫ বছর রাজনীতিতে পর্যবেক্ষণে রেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

৫। দেশবিরোধী সন্ত্রাসী মনোভাব, দেশপ্রেমহীনতা ও বাংলাদেশের জনগণের ওপর প্রতিশোধ পরায়নতার জন্য শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আজীবন নিষিদ্ধ করতে হবে।

৬। ১ জানুয়ারি, ২০০৯ থেকে ৫ আগস্ট, ২০২৪ পর্যন্ত সকল রাজনৈতিক ও গায়েবি মামলা প্রত্যাহার এবং গায়েবি মামলা দায়েরকারীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। সাগর-রুনি হত্যার চার্জশিটসহ সকল সাংবাদিক হত্যার ন্যায়বিচার করতে হবে।

৭। সকল গুম ও বিচার বহির্ভূত হত্যার বিচার ব্যবস্থা করতে হবে।

৮। আওয়ামী লীগ সরকার আমলের দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে।

৯। ৪ জুলাই, ২০২৪ থেকে ৫ আগস্ট, ২০২৪ সাল পর্যন্ত গণহত্যা মানবতা বিরোধী অপরাধ হিসাবে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।

১০। সরকারি ক্রয়ে ইনডেমনিটি বাতিল করতে হবে।

১১। বিদ্যুৎ উৎপাদনের কুইক রেন্টাল চুক্তিসমূহ বাতিল করে দেশের সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন স্থাপনায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা করতে হবে।

১২। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিম্ন আয়ের মানুষের নাগালের মধ্যে আনতে বিশেষ কমিটি গঠন করে সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে।

১৩। বিগত সাড়ে ১৫ বছরের বড় বড় স্থাপনা নির্মাণ ব্যয় পর্যালোচনা করার জন্য বিশেষ কমিশন গঠন করতে হবে।

১৪। বিগত সাড়ে ১৫ বছরের অবলোপনকৃত ব্যাংক ঋণ পর্যালোচনার জন্য কমিটি গঠন করতে হবে। শেখ হাসিনাকে তেল মারা পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করে ব্যাংক সমূহের নতুন পর্ষদ গঠন করতে হবে।

১৫। বিগত সাড়ে ১৫ বছরে ভারতের সঙ্গে যে সকল চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে, তা জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে। যে সকল চুক্তি/সমঝোতা স্মারক দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতাবিরোধী তা বাতিল করতে হবে।

১৬। বিডিআর বিদ্রোহের ন্যায়বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে।

১৭। ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলামীর শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হত্যাযজ্ঞের তদন্ত সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট সকলের বিচার ও মৃতদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে।

১৮। সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট বিভাগের যে সকল বিচারপতি শপথ ভঙ্গ করে সরকারকে সহযোগিতা করে অবৈধ সরকারকে দীর্ঘমেয়াদী ও স্বৈরাচারী করে তুলেছিল, নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে তাদের বিচার ও শান্তির ব্যবস্থা, বিশেষ করে বিচারপতি খায়রুল হককে অবিলম্বে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।

১৯। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ও বিস্তারিত ইতিহাস প্রকাশ করে তা পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

২০। বিশেষ কমিশন গঠন করে বর্তমান বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তক সংশোধন করতে হবে।

২১। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন বাতিল করতে হবে।

২২। ২০১৩ সালে আওয়ামীলীগের সাজানো আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী আইন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) প্রতিষ্ঠাতা মরহুম সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, বাংলাদেশ জামায়াতের ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে বে-আইনিভাবে ফাঁসির মাধ্যমে হত্যার ন্যায়সঙ্গত বিচার করতে হবে।

২৩। নির্বাচন কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশন পুনর্গঠন করে পূর্ববর্তী কমিশনসমূহের কার্যক্রম তথা ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন আইন ও বিধিসম্মত ছিল কিনা তাহা পর্যালোচনার জন্য কমিটি গঠন করতে হবে।

২৪। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচন বা প্রত্যেক সংসদ সদস্যের প্রথম নির্বাচনের হলফনামার সহিত আয়কর দাখিলকৃত সর্বশেষ সম্পত্তির বিবরণী তুলনা করে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।

২৫। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের অবৈধ সংসদ সদস্যদের নামে রাজউক কর্তৃক বরাদ্দকৃত প্লট বাতিল করে তাহা সাধারণের কাছে যথাযথ নিয়মে বণ্টন করতে হবে।

২৬। বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নামে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলাসমূহ প্রত্যাহার করে হয়রানি ও সম্মানহানিকর মামলা দায়েরে সংশ্লিষ্ট সকলকে আইনের আওতায় এনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

২৭। ১৯৯৬ ও ২০০৯-২০২৪ এর জুলাই পর্যন্ত শেয়ার মার্কেটে যতবার ম্যানিপুলেশন/কারসাজি হয়েছে তদন্ত সাপেক্ষে বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।

২৮। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮১ মিলিয়ন ডলার চুরি ঘটনা তদন্ত সাপেক্ষে জনসম্মুক্ষে প্রকাশ ও অতি দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচার করতে হবে।

২৯। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নিহত হওয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনার কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা তা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।

৩০। ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিদেশে অর্থ পাচারের ঘটনাসমূহ তদন্ত করার জন্য একটি বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে।

এনডিপির মহাসচিব আবদুল্লাহ-আল-হারুনের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০২৪
এসসি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।