বরিশাল: ২৪ এর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সব শহীদদের স্মরণে বরিশালে 'স্মরণ সভা' অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেখানে গণঅভ্যুত্থানে নিহত শহীদ ও আহতদের বীরত্ব গাঁথা পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত এবং তাদের একজীবনের সমান ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি জানানো হয়।
রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টায় বরিশাল প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে গণসংহতি আন্দোলনের আয়োজনে এ স্মরণ সভা হয়।
গণসংহতি আন্দোলন বরিশাল জেলা সমন্বয়কারী দেওয়ান আবদুর রশিদ নীলুর সভাপতিত্বে ও জেলা কমিটির সদস্য হাসিব আহমেদ এর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য হাসান মারুফ রুমি, সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য জননেতা বাচ্চু ভুঁইয়া, কেন্দ্রীয় সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম আমজাদ হোসেন, সৈকত মল্লিক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য জনাব এবায়দুল হক চান, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছাত্রনেতা মশিউর রহমান খান রিচার্ড, গণসংহতি আন্দোলন বরিশাল জেলার নির্বাহী সমন্বয়কারী আরিফুর রহমান মিরাজ, আহত যোদ্ধা ও বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাবেক প্রচার সম্পাদক রেজাউল করিম, গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শরিক দল ভাসানী অনুসারী পরিষদ বরিশাল জেলা আহ্বায়ক মহসিন উল ইসলাম হাবুল, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)র কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি আলহাজ সোহরাব হোসেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ বরিশাল বিভাগের সংগ্রামী সদস্য সচিব ডা. মিজানুর রহমান, বরিশাল জেলা ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি শ্রমিক নেতা মো: আলম খান, বরিশাল জেলা করাতকল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল মান্নান মিয়া, বাংলাদেশ কৃষক মজুর সংহতির উজিরপুর উপজেলা কমিটির সদস্য কৃষকনেতা শহীদুল ইসলাম ও বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন বরিশাল জেলার সাধারণ সম্পাদক রাইদুল ইসলাম সাকিব।
স্মরণ সভায় নেতারা বলেন, বাংলাদেশে এক অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। দীর্ঘদিন বাংলাদেশের মানুষ স্বৈরাচারী সরকারের জুলুমের যাঁতাকলে নিষ্পেষিত হয়েছে। সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করে স্বৈরাচার হাসিনা সরকার তার মসনদের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশের শত শত ছাত্র শ্রমিক জনতা তাদের বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে স্বৈরাচারী বন্দোবস্তের অবসান ঘটিয়েছে। সমষ্টির স্বার্থে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে আমাদেরকে চির ঋণী করেছেন তারা। এই শহিদ ছাত্র জনতা দেশের বিভিন্ন স্তরের অনিয়ম বৈষম্যের বিরুদ্ধে নিজেকে উৎসর্গ করেছে। বৈষম্যমুক্ত নতুন বাংলাদেশ গঠনই ছিল আমাদের শহিদদের একমাত্র অভিপ্রায়। অবিলম্বে আন্দোলনে শহিদদের আত্মত্যাগ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরতে হবে৷ তাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে। দেশের প্রতিটি জেলা উপজেলায় বীর শহিদদের স্মৃতি রক্ষার্থে শহিদ মিনার, ভাস্কর্য স্থাপন করতে হবে। এ ১৫৮১ জন শহিদ শুধু সংখ্যা নয় এরা ছিল এক একটি সম্ভাবনা জীবন। তাই এই শহিদদের পরিবারের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে। আহত যোদ্ধাদের যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। চিকিৎসা পরবর্তী সক্ষমতা অনুযায়ী মর্যাদাকর কর্মের নিশ্চয়তা দিতে হবে।
নেতারা আরও বলেন, গণহত্যার সাথে জড়িত সবাইকে অবিলম্বে বিচারের আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে অভ্যুত্থান পরবর্তী দেশকে যারা অস্থিতিশীল করার লক্ষ্য হত্যা, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, লুটপাট ও চাঁদাবাজি করেছে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এ বিষয়ে আমরা প্রশাসনের যথাযথ উদ্যোগ দেখছি না। আমরা বিভিন্ন ভাবে শুনতে পাচ্ছি গণহত্যার নির্দেশদাতারা সীমান্ত দিয়ে দেশ ত্যাগ করছেন। বাংলাদেশের মুক্তিকামী জনগণের কাছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে জবাব দিতে হবে কেন তারা গণহত্যাকারীদের আটক করতে পারছে না? প্রশাসনের সর্বস্তর এখনো কেন পূর্ণ মাত্রায় সক্রিয় নয়?"
নেতারা গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী জনগণের মধ্যে গড়ে ওঠা ঐক্যকে সুসংহত রেখে রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ জোরদার করা ও এই লক্ষ্য একটি নতুন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক বন্দোবস্ত গড়ে তোলার আহ্বান জানায়।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪
এমএস/জেএইচ