ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

গণসংলাপের কর্মসূচি গণসংহতি আন্দোলনের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১, ২০২৪
গণসংলাপের কর্মসূচি গণসংহতি আন্দোলনের

ঢাকা: ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থান মানুষের ভেতরে রাষ্ট্রের পুনর্গঠনের যে চাহিদা তৈরি করেছে, রাষ্ট্রকে সংস্কার করে একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরির যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, তার জন্য জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে গণসংলাপের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে গণসংহতি আন্দোলন।

মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় রাজধানীর হাতিরপুলে দলীয় প্রধান কার্যালয়ে বর্তমান রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে বক্তব্য তুলে ধরতে এবং কর্মসূচি ঘোষণার লক্ষ্যে এক সংবাদ সম্মেলন করে দলটি।

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের সামনে বিফ্রিং করেন ও প্রশ্নের উত্তর দেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জননেতা জোনায়েদ সাকি। লিখিত বক্তব্য পাঠ ও দেশব্যাপী সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহের উদ্বোধন দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সমন্বকারী আবুল হাসান রুবেল।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ২০২৪ সাল বাংলাদেশের জনগণের সংগ্রামে এক নতুন মাইলফলক। বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচাইতে বড় গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে ছাত্র শ্রমিক জনতার অকল্পনীয় ত্যাগের বিনিময়ে। অভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছেন দেড় হাজারের বেশি, আহত হয়েছেন হাজার হাজার। এক মাসেরও কম সময়ে এত প্রাণহানি, এত রক্তক্ষয়, মানুষের উপরে বিপুল পরিমাণ অত্যাচার আর তার বিপরীতে এক অদম্য সাহসের মাধ্যমে গড়ে ওঠা লড়াইয়ের ফলে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন।

প্রথমে ছাত্রদের মাধ্যমে কোটা সংস্কারের জন্য এ আন্দোলন শুরু হলেও তা সরকারের বিপুল অত্যাচার নির্যাতন আর হত্যার কারণে দ্রুতই পরিণত হয় গণমানুষের আন্দোলনে। ছাত্র শ্রমিক জনতা এক হয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে পরিণত করে ফ্যাসিবাদ উচ্ছেদের আন্দোলনে, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা পরিবর্তনের আন্দোলনে। বিগত ১৬ বছর ধরে চলে আসা গুম, খুন, হামলা-মামলা, মানুষের টুটি চেপে ধরা, এক ভয়ের রাজত্ব কায়েম করে রাখা, মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া, বাজারের দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, জাতীয় সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়া, মানুষের সব ক্ষোভ এই ফ্যাসিবাদী ক্ষমতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভে পরিণত হয়ে জন্ম দেয় এক গণঅভ্যুত্থানের।

ছাত্র শ্রমিক জনতার আত্মত্যাগের বিনিময়ে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার হাত থেকে দেশ মুক্ত হয়েছে কিন্তু এখনো স্বৈরাচারী ব্যবস্থা বহাল তবিয়তে বিদ্যমান। অন্তর্তবর্তী সরকার রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের লক্ষ্যে বেশ কিছু কমিশন গঠন করেছে। সেগুলোর কর্মক্ষেত্র এবং সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু সেগুলো বাস্তবায়িত হওয়া সময়ের ব্যাপার। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই পুরনো ব্যবস্থার ধারাবাহিকতা আমরা লক্ষ্য করছি।

সোমবার গার্মেন্ট শ্রমিকদের আন্দোলনে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের ফলে একজন পোশাকশ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা উল্লেখ করে গণসংহতি আন্দোলনের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত জবাবদিহিতা ও বিচার চাই। শ্রমিক আন্দোলনের ভেতরে কেউ যাতে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে অস্থিরতা তৈরি করতে না পারে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে, তাই বলে শ্রমিক আন্দোলন দমন করতে গিয়ে শ্রমিক হত্যাকাণ্ডের পুরনো রীতি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা মনে করি শ্রমিকদের দাবি-দাওয়ার প্রতি সহানুভূতিশীল থেকেই বর্তমান পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ সমধানে যেতে হবে।

গণঅভ্যুত্থানের শক্তির ভেতরে বিভেদ সৃষ্টি করা এবং কোন কোন মহলের বিদ্বেষমূলক বক্তব্য বিষয়েও সরকারের দৃঢ় পদক্ষেপের অভাব দেখা যাচ্ছে উল্লেখ করে বলা হয়, পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়ে আনতে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সমস্যার সমাধান, এর জন্য দায়ীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা, তার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ ইত্যাদি জরুরি বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের দৃড় পদক্ষেপের প্রয়োজন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি প্রতিরোধ ও মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনার বিষয়েও এখনো পর্যন্ত কার্যকর পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের জনগণের সম্মিলিত প্রয়াস। এখানে কেউ অগ্রবর্তী ভূমিকা নিতে পারেন কিন্তু সমস্ত জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া এটা কখনোই সাফল্যের দিকে যেতে পারত না। ফলে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত সরকার ছাত্র শ্রমিক মধ্যবিত্তসহ সমস্ত জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করবে, তাদের স্বার্থের পক্ষে অবস্থান নিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে সেটাই কাম্য। রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী হিসেবে বাংলাদেশের জনগণের পুনর্গঠনে জাতি ধর্ম বর্ণ লিঙ্গ শ্রেণি নির্বিশেষে সকলের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই গণঅভ্যুত্থানের যা আকাঙ্ক্ষা সেই আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী এক নতুন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে উঠতে পারে।  

সেজন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম কাজ হবে গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা নিশ্চিত করা, আহতদের সম্ভাব্য সমস্ত ধরনের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা এবং তাদের সাথে হওয়া অন্যায়ের বিচার করা। ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সেটাই হবে প্রথম পদক্ষেপ। এসব বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলোকে আমরা আরও সুনির্দিষ্ট, দ্রুত ও স্বচ্ছ করার এবং জনগণের কাছে তার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে আহ্বান জানায় গণসংহতি আন্দোলন।

সংবাদ সম্মেলনে দলটির লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, অক্টোবর মাস থেকে আমরা গণঅভ্যুত্থান মানুষের ভেতরে রাষ্ট্রের পুনর্গঠনের যে চাহিদা তৈরি করেছে, রাষ্ট্রকে সংস্কার করে একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরির যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, তার জন্য জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে গণসংলাপ আয়োজন করছি। আমরা অভ্যুত্থানে সক্রিয় অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও শক্তিকেও জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাই। একই সাথে আমরা ১ অক্টোবর থেকে পঞ্চম সম্মেলনকে সামনে রেখে কেন্দ্রীয়ভাবে ও সকল শাখায় সদস্য নবায়ন ও সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করছি।

সংবাদ সম্মেলনে গণসংহতি আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য মনির উদ্দীন পাপ্পু, কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভূইয়া, জুলহাসনাইন বাবু, দীপক রায়, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আলিফ দেওয়ান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মিজানুর রহমান মোল্লা এবং ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক মনিরুল হুদা বাবন প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০১, ২০২৪
এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।