ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

তেঁতুলিয়ায় সিপিবির সভায় বাধা, কেড়ে নেওয়া হয়েছে ব্যানার

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০২৪
তেঁতুলিয়ায় সিপিবির সভায় বাধা, কেড়ে নেওয়া হয়েছে ব্যানার

পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) পথসভায় বাধ দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মী পরিচয় দেওয়া কয়েকজন যুবক। এ সময় তারা মাইক্রোফোন ও ব্যানার কেড়ে নেন।

বুধবার (১৩ নভেম্বর) দুপুর ১২টায় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলা শহরের তেঁতুলতলায় এ ঘটনা ঘটে।

‘শোষণ-বৈষম্যবিরোধী গণতন্ত্র জাগরণ যাত্রা’ শীর্ষক সভা চলাকালে কয়েকজন যুবক এসে এ ঘটনা ঘটান। এ সময় কেড়ে নেওয়া হয় পথসভার মাইক্রোফোন। এমন অভিযোগ তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বাধা দেওয়ার ছবিসহ পোস্ট করেছেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স।

তিনি লিখেছেন, “তেঁতুলিয়া, পঞ্চগড় এর তেঁতুলতলায় পথসভায় বক্তব্য শেষ করতে পারলাম না। পথসভা করতে দেওয়া হলো না। ওরা কারা? প্রশাসনের কোনো ভূমিকা নেই। সারা দিনের অন্যান্য কর্মসূচি চলবে। ধৈর্যেরও সীমা আছে!!”

সিপিবির সাধারণ সম্পাদকের পোস্টটি মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নেটিজেনদের নেতিবাচক মন্তব্য করতে দেখা গেছে। ছড়িয়ে পড়া ছবির মধ্যে সভায় বাধা দেওয়া যুবকের নাম হযরত আলী বলে বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে।

জানা গেছে, পথসভায় হযরত আলী নামে এক যুবক নিজেকে বৈষ্যম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে কয়েকজনকে নিয়ে সিপিবির ব্যানার ছিনিয়ে নিয়ে সভায় বক্তব্যরত সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সের মাইক্রোফোন কেড়ে নেন। তারা সিপিবি নেতাদের ফ্যাসিস্টদের দোসর আখ্যা দিয়ে পথসভায় বাধা দিয়ে সভা পণ্ড করে দেন।

ঘটনার বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হাসানাত আব্দুল্লাহকে অভিযোগ দিয়েছেন রুহিন হোসেন প্রিন্স। তেঁতুলিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো কমিটি নেই বলে প্রিন্সকে জানিয়েছেন হাসনাত আব্দুল্লাহ।

রুহিন হোসেন প্রিন্স গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, কয়েকজন ছেলে আমাদের পথসভায় এসে সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে আমার হাত থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নিতে শুরু করেন। একপর্যায়ে তারা আমাদের লোকজনকে শাসিয়ে বলতে শুরু করেন, আপনারা এখানে কী করছেন। তখন আমি তাদের বলি আমার সঙ্গে কথা বলো। তারা উচ্চস্বরে চিৎকার চেঁচামেচি করে ব্যানার কেড়ে নেন। তবে এ ঘটনায় পুলিশের কোনো ভূমিকা দেখা যায়নি। ওসি উপস্থিত থাকলেও তার ভূমিকা রহস্যজনক মনে হয়েছে। পরে আমরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে চলে আসি। আমরা এটাকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করব।

সিপিবির পঞ্চগড় জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে এক যুবক বলেন, আমরা নাকি আওয়ামী লীগের সাথে ছিলাম, এতদিন কই ছিলাম? পরে তারা প্রিন্স ভাইয়ের হাত থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নেয়। ব্যানার ছিনিয়ে নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠানে বাধা দেয়, চেয়ার ভাঙচুর করেন। আমরা তাদের বারবার বোঝাবার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু তারা কোনো কথাই শোনেননি। পরে পুলিশকে জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এমনকি ছেলেগুলো আমাদের মোবাইগুলো নিয়ে ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ ডিলিট করে দেন। এ ঘটনায় আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

তেঁতুলিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনায়েত কবির বলেন, ঘটনার পর খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। শুনেছি একটু ধাক্কাধাক্কি হয়েছে। ঘটনার পর সবাই চলে গিয়েছে। কে বাধা দিয়েছে, তাদের পরিচয় কেউ বলতে পারছে না। এ নিয়ে সিপিবির পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ পাইনি।

অন্যদিকে অভিযুক্ত হয়রত আলী সব অভিযোগ অস্বীকার করে গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগের হাতে মানুষ নির্যাতিত। তাদের কিছু দোসরদের নিয়ে তারা এই পথসভা করছিল। স্থানীয়রা পথসভায় আওয়ামী লীগের কয়েকজনকে দেখে তাদের বাগবিতণ্ডায় জড়ায়। বিষয়টি জেনে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি এবং সমাধান করে দেই। আমি কারো ব্যানার ছিনিয়ে নেইনি, পথসভায় বাধাও দেইনি। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ঘটনার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বিষয়টি জানতে আমাকে ফোন দিয়েছিলেন। আমি যেটা সত্য তা ওনাকে জানিয়েছি। আমি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র অন্দোলনের শুরু থেকে তেঁতুলিয়ায় নেতৃত্ব দিয়েছিলাম। তবে তেঁতুলিয়ায় আমাদের কোনো কমিটি নেই।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০২৪
এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।