খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয় থেকে: ৩ জানুয়ারি (শনিবার) মধ্যরাতে গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হওয়ার পর এরই মধ্যে টানা ১৫ দিন পার করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া।
অবরুদ্ধ হওয়ার ১৫তম দিন শনিবার (১৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গুলশান কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় অবস্থান করছিলেন তিনি।
গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান করছেন এমন একজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‘তিন তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী’ খালেদা জিয়া নিজ দফতরে ছোট্ট একটি কক্ষে টানা অবস্থানে খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন না। তবে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য সব কিছুই হাসি মুখে মেনে নিতে হচ্ছে তাকে।
খালেদা জিয়া প্রতিদিন যথারীতি একটু দেরি করেই ঘুম থেকে উঠছেন। স্বল্পাহারী খালেদা চা-বিস্কুটেই সারছেন সকালের নাস্তা। তারেক রহমানের শ্বশুরবাড়ি অথবা ভাইয়ের বাসা থেকে আনা খাবার খাচ্ছেন দুপুর ও রাতে। তবে এই দুর্যোগ-মুহূর্তে খাবারের মেনুতে কী থাকছে, তা জানতে চেষ্টা করলেও কেউ কিছু বলতে রাজি হননি।
বিলাসী জীবন-যাপনে অভ্যস্ত খালেদা জিয়া নিজের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা, নিরাপত্তাকর্মী, অফিস স্টাফ, প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তা, দলের একজন ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা দলের কয়েকজন নেতাসহ প্রায় অর্ধশত লোক নিয়ে অবস্থান করছেন গুলশান কার্যালয়ে।
গুলশান কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দিনের বেশির ভাগ সময়ই দলের শীর্ষ নেতা ও তৃণমূলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলে সময় কাটান খালেদা জিয়া। এছাড়া তার সঙ্গে গুলশান কার্যালয়ে অবস্থানরত দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমানকে সময় দেন তিনি।
মাঝেমধ্যে মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানাকেও নিজ কক্ষে ডেকে পাঠান খালেদা জিয়া।
প্রয়োজন হলে প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তাও খালেদা জিয়ার সঙ্গে সালাম বিনিময়ের সুযোগ পান। নিজের একান্ত ব্যক্তিগত সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের সঙ্গে প্রয়োজনীয় আলাপ করেন দিনে বেশ কয়েকবার।
এদিকে, গত ১৪ দিনে বিভিন্ন পেশাজীবী নেতাদের সঙ্গে দেখা করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। তবে এদের মধ্যে কেউই খালেদা জিয়ার সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ আলাপের সুযোগ পাননি। সবাকেই ১০/১৫ মিনিট করে সুযোগ দিয়েছেন তিনি।
কেবল গত ১২ জানুয়ারি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার জমির উদ্দীন সরকার ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার সঙ্গে একান্তে দীর্ঘ সময় আলাপ করেছেন। দিয়েছেন প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনাও।
তবে ১৩ জানুয়ারি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দীন আহমেদের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ১৪ জানুয়ারি আরেক উপদেষ্টা রিয়াজ রহমানকে দুর্বৃত্তরা গুলি করার পর খালেদা জিয়ার সঙ্গে দলের আর কোনো শীর্ষ নেতা দেখা করতে আসেননি।
শনিবার (১৭ জানুয়ারি) সারাদিনেও খালেদা জিয়ার সঙ্গে কেউ দেখা করতে আসেননি। বিকেল ৫টার দিকে সাংবাদিক সঞ্জীব চৌধুরী দেখা করতে এলেও ভেতরে যাওয়ার অনুমতি পাননি। পরে পুলিশ তাকে ফিরিয়ে দেয়।
এদিকে, গুলশান কার্যালয়ের সামনের সড়কের উত্তর পাশে দুটি কাভার্ড ভ্যান ও দক্ষিণ পাশে একটি জলকামান এখনো আড়াআড়িভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা আছে। পুলিশি পাহারাও আছে আগের মতোই। তবে সেখানে মোতায়েন পুলিশের সদস্যসংখ্যা কমানো হয়েছে।
বিশেষ কোনো ঘটনা না থাকায় সংবাদকর্মীরাও গুলশান কার্যালয়ের সামনে অলস সময় কাটাচ্ছেন। বিএনপি চেয়ারপার্সনের প্রেস উইংয়ের দুই কর্মকর্তা শায়রুল কবীর খান ও শামসুদ্দিন দিদার মিডিয়ার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন।
বাংলাদেশ সময়: ২২৪৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৫