ঢাকা: সন্ধ্যা হলেই যেন এক অজানা আতঙ্ক তাড়া করে ফেরে নগরবাসীকে। চলমান অবরোধে দিনের বেলায় দু’একটি পিকেটিং ও নাশকতার খবর পাওয়া গেলেও সন্ধ্যা হলেই তা বেড়ে যাচ্ছে।
গত কয়েকদিন যাবৎ লক্ষ্য করা যাচ্ছে যাত্রীবেশে দুর্বৃত্তরা সন্ধ্যার পর থেকে রাজধানীতে যানবাহনে আগুন দিচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে বাড়েছে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও।
ধারাবাহিক এসব নাশকতার কারণে সন্ধ্যার পর জনমনে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে মানুষ সন্ধ্যার পর যানবাহনে উঠতে ভয়ও পাচ্ছে।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে রাত ১০টার মধ্যে ৫টি যানবাহনে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এছাড়াও গত এক সপ্তাহে সন্ধ্যার পর থেকে রাত ১০টা অবধি অন্তত অর্ধশতাধিক গাড়িতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এছাড়াও যততত্র ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটছে এ সময়ের মধ্যেই।
বিভিন্ন সূত্র জানায়, সন্ধ্যা হলেই রাজধানীর কর্মজীবী মানুষের বাড়ি ফেরার হিড়িক পড়েছে। কিন্তু অবরোধের কারণে এমনিতেই রাস্তায় যানচলাচল কম, তাই সব যানবাহনেই ব্যাপক ভিড় লক্ষ্য করা যায়।
এ সময়ে বাসে আগুন ও পেট্রোল বোমা হামলার ঘটনায় লোকজনের মধ্যে এক প্রকার আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ আতঙ্ক থেকে অফিস থেকে বের হয়ে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে লোকজনের মধ্যে তাই বাড়তি তাড়া কাজ করছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ভাটারা থানার সামনে বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। সেখানে কথা হয় প্রত্যক্ষদর্শী আতিকুর রহমানের সঙ্গে।
তিনি বলেন, উত্তরায় থেকে বাড্ডা যাওয়ার জন্য তিনি বাসে উঠেছেন। সবাই আগুনের গল্পই করছিল বাসের মধ্যে। এর মধেই বাসটি ভাটারা থানা অতিক্রমকালে আগুন আগুন বলে চিৎকার করে ওঠে যাত্রীরা। এতে সবাই দ্রুত নেমেই যায়। পরে লোকজন ও ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
তিনি বলেন, যাত্রীবেশে নাশকতাকারীরা আগুন দিচ্ছে। সন্ধ্যার পর লোকজন যখন বাসায় ফিরছে সেই সময়টাতে দুর্বৃত্তরা এই ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে।
বাসের অপর যাত্রী সোহেল মাহবুব বলেন, লাগাতার এই অবরোধে যেভাবে বাসে আগুন দিয়ে সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে তাতে বাসা থেকে বের হওয়ার পরেই এক ধরনের আতঙ্ক কাজ করে। আতঙ্কের মধ্যে থাকা অবস্থাতে গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা আমাদের আরো আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলছে।
এদিকে, গত ২৩ জানুয়ারি যাত্রাবাড়ীর কাঠের পুল এলাকায় রাত সোয়া ৯টায় গ্লোরি পরবিহনের একটি বাসে পেট্রোল বোমা হামলা করে দুর্বৃত্তরা। এছাড়াও মৎস্য ভবনের কাছে পুলিশের গাড়িতেও পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, যাত্রীবেশে দুর্বৃত্তরা গাড়িতে উঠছে। এরপর পুলিশ থাকে না এমন সুবিধামত স্থানে গাড়িতে আগুন দিয়ে কৌশলে নেমে যাচ্ছে। এদের ধরতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ইব্রাহিম ফাতেমি বাংলানিউজকে বলেন, গাড়িতে নাশকতাকারীদের গ্রেফতারে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এজন্য পাশাপাশি সাদা পোশাকেও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নাশকতাকারীদের গ্রেফতারে পুলিশ সার্বক্ষণিক কাজ করছে বলেও তিনি জানান।
গুলশান জোনের সহকারী কমিশনার নুরুল আলম বলেন, বিশ্বরোধ থেকে শুরু করে রামপুরা ব্রিজের আগ পর্যন্ত আমরা বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। এই রাস্তার দু’পাশে অনেক গলি থাকায় নাশকতাকারীরা গলি দিয়ে পালিয়ে যায়। সেটি যেন না পারে এজন্য গলির মুখে মুখে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, খিলগাঁও ফ্লাইওভারের নিচে কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। আমরা ওই এলাকাকে ঘিরে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা হাতে নিয়েছি। চলন্ত গাড়িতে কেউ যেন বোমা বা পেট্রোল বোমা হামলা না করে সে জন্য সার্বক্ষণিক পুলিশ মোতায়েন করা হযেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রমনা জোনের সহকারী কমিশনার শিবলী নোমান বলেন, প্রেসক্লাব থেকে পুরো শাহবাগ মোড় এলাকায় পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০০৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৫