ঢাকা: শোক আর অসুস্থতায় ক্রমেই কাতর হয়ে পড়ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। শরীর ও মন কোনোটাই ভালো নেই তার।
এ অবস্থায় প্রায় প্রতি রাতেই তাকে দেখতে যাচ্ছেন চিকিৎসক। ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. মামুন নিয়মিত চেকআপ করছেন। এ ছাড়াও কয়েকজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মাঝে-মধ্যে এসে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিয়ে যান। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, পায়ের গোড়ালির সমস্যা, অ্যালার্জি, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগের প্রতিনিয়ত চেকআপ চলছে।
পিপার স্প্রের ফলে যে শ্বাসকষ্ট ও অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিয়েছিলো তা এখন আর নেই বলে জানিয়েছের দায়িত্বশীলরা।
বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান একটি সংবাদপত্রকে বলেন, ‘ম্যাডামের প্রতিনিয়ত শারীরিক চেকআপ করা হচ্ছে। একজন চিকিৎসক নিয়মিত আসছেন। ’
দেশের চলমান পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন ধরে কার্যালয়ে থাকলে একজন নেত্রী কতটা ভালো থাকতে পারেন- এটা সবারই জানা,’বলেন মারুফ কামাল। তবে তিনি এও দাবি করেন খালেদা জিয়া ভালো আছেন।
গুলশান কার্যালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থাকলেও নতুন নির্বাচনের দাবিতে থাকা নিজের অবস্থানে এখনো অনড় খালেদা জিয়া।
সম্প্রতি ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মারা যাওয়ার ঘটনায় শোক কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। যদিও ছেলের মৃত্যুর পর থেকে খালেদা জিয়ার খাওয়া-দাওয়ার অনিয়ম হচ্ছে। শারীরিকভাবে কিছুটা দুর্বল হয়েও পড়েছেন শোকাহত এই নেত্রী।
মাঝে তার কার্যালয়ের বিদ্যুৎ, টেলিফোন, ডিস, ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোনের সংযোগ ছিন্ন করা হয়। প্রায় ২০ ঘণ্টা পর বিদ্যুৎ সংযোগ পুনঃস্থাপন করা হয়। এ ছাড়া গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্কও সংযুক্ত করা হয়। তবে অন্যান্য সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এ কারণে নেতা-কর্মীদের সঙ্গেও রাজনৈতিক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন বিএনপিপ্রধানের। এসব কারণে টেনশনে সময় কাটে তার।
এদিকে গত দুই দিন ধরে গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান নেওয়া প্রায় অর্ধশত নেতা-নেত্রী, স্টাফ ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাইরে থেকে আসা খাবার প্রবেশে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়টিতেও গভীর চিন্তিত খালেদা জিয়া। তবে তিনি এখনও নিজের অবস্থানে অনড় রয়েছেন। পুলিশি পাহারায় কার্যালয়ের অবস্থা, শোকগ্রস্ততা, গ্রেফতারের ঝুঁকি ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা- কোনো কিছুই টলাতে পারেনি তাকে। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও সরকারবিরোধী আন্দোলন থেকে পিছপা হবেন না বলে আন্দোলনরত নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন মাধ্যমে বার্তা পাঠিয়েছেন তিনি।
চেয়ারপারসন কার্যালয় সূত্র জানায়, বড় ছেলে তারেক রহমানের শ্বশুরবাড়ি থেকে প্রতিদিন আসে খালেদা জিয়ার নিজের খাবার। তার নিজের বাসা থেকেও খাবার আনা হয়। কখনো কখনো দুই ভাই সাঈদ এস্কান্দার ও শামীম এস্কান্দারের পরিবার থেকেও খালেদা জিয়ার জন্য খাবার আসে।
একটি ঘনিষ্ট সূত্র জানায়, খাবারের ব্যাপারে অনেক বেশি নিয়ম রক্ষা করে চলেন খালেদা জিয়া। খাবার খান খুবই পরিমিত- সামান্য একটু ভাত এবং সবজি, মাছ বা এক টুকরো মাংস। বেশির ভাগ দিন তার মেন্যুতে থাকে করলা ভাজি। এটি তিনি খুবই পছন্দ করেন। তিনি প্রায়ই পেঁপের জুস ও তাজা ফলমূল খান।
সূত্র জানায়, রাতে ঘুমাতে যান দেরিতে। সকালের নাশতা ও চা খেয়ে তিনি কিছুক্ষণ পত্রপত্রিকায় চোখ বোলান। দলের কাজকর্মের কিছু কাগজপত্রও দেখেন। বিকাল বা সন্ধ্যার পর গুলশানে অবস্থান নেওয়া নেতা-নেত্রী ও স্টাফদের সঙ্গে কথা বলেন।
গত ৩ জানুয়ারি রাত থেকে গুলশান কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে অবস্থান করছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল কাইয়ুম, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান সোহেল, বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, একান্ত সহকারী মাহবুব আল আমিন ডিউ, একান্ত সচিব আবদুস সাত্তার, প্রেস উইং কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার, শায়রুল কবীর খানসহ কয়েকজন কর্মকর্তা। এ ছাড়া খালেদা জিয়াকে সহায়তা করার জন্য তার বাসা থেকে আসা কয়েকজন গৃহকর্মীও রয়েছেন প্রথম দিন থেকেই। সব মিলিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে অর্ধশত নেতা-নেত্রী ও স্টাফ সেখানে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।
পরিবার-পরিজন ছাড়া গুলশান কার্যালয়ে কাউকেই প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
বাংলাদেশ সময় ০৯৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৫