ঢাকা: সংঘর্ষ-সহিংসতায় প্রাণ হারানো মানুষের স্বজনদের আহাজারি আর হাসপাতালগুলোর বার্ন ইউনিটজুড়ে পোড়া মানুষের আকুতিও টলাতে পারছে না রাজনৈতিক দলগুলোকে। গত ৩৯ দিনে বিএনপি-জামায়াত জোটের সহিংসতায় প্রাণ গেছে ৮৭ জনের।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির আলোচিত নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগের সরকার গঠনের প্রথম বার্ষিকীতে গত ৫ জানুয়ারি বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের সমাবেশ ডাকাকে কেন্দ্র করে সহিংসতার সূত্রপাত। নাশকতার আশঙ্কায় সমাবেশের অনুমতি না মেলায় নিজের রাজধানীর গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবস্থান নিয়ে দেশব্যাপী অনির্দিষ্টকালের অবরোধের ডাক দেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সেই অবরোধের ৩৯তম দিন শুক্রবার (১৩ ফেব্রুয়ারি)।
এই ৩৯ দিনে দফায় দফায় হরতালও পালন করেছে ২০ দল। সবশেষ গত দু’সপ্তাহের কার্যদিবসগুলোতে টানা হরতাল পালন করে বিরোধী জোটটি।
৩৯ দিনের লাগাতার অবরোধ আর দফায় দফায় হরতালে সহিংসতার ‘প্রাপ্তি’ আঁতকে ওঠার মতো।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বিএনপি-জামায়াত জোটের এ দফার সহিংস কর্মসূচিতে প্রাণ গেছে ৮৭ জনের। এর মধ্যে কেবল পেট্রোল বোমা আর গাড়িতে আগুনেই পুড়ে মরেছেন ৫২ জন। আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনসহ প্রতিপক্ষের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত জোটের কর্মীদের সংঘর্ষে প্রাণ গেছে ১৩ জনের। এছাড়া, অন্যান্য সহিংসতায় নিহত হয়েছে আরও ২২ জন।
এতো কেবল সহিংসতার বলি হওয়া মানুষের পরিসংখ্যান। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল, রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালসহ বিভিন্ন চিকিৎসাকেন্দ্রের বার্ন ইউনিটে পোড়া মানুষের আহাজারি যেন প্রবল থেকে প্রবলতর হয়ে উঠছে। কেবল ঢামেকের বার্ন ইউনিটেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন পেট্রোল বোমা আর আগুনে পোড়া ১২৬ জন মানুষ। এই পোড়া মানুষদের রোনাজারি এতোই মর্মান্তিক যে সম্প্রতি ঢামেক পরিদর্শনে কেঁদে ফেলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।
মানুষ হত্যা আর পোড়ানোর এ সহিংসতায় অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়েছে এক হাজার ৮৪টিরও বেশি যানবাহন। আগুন দেওয়া হয়েছে ৫৩০টিরও বেশি যানবাহনে, আর ৫৫৪টিরও বেশি গাড়ি করা হয়েছে ভাঙচুর। এর মধ্যে রয়েছে পশু-পণ্যবাহী ট্রাক-ভ্যান থেকে শুরু করে যাত্রীবাহী বাস-প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস।
হরতাল-অবরোধে মানুষের ভ্রমণের সবচেয়ে আস্থার মাধ্যম রেলওয়েতেও ১১ দফায় নাশকতা চালিয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোটের কর্মীরা। কখনো তুলে ফেলা হয়েছে ফিসপ্লেট, কখনোবা যাত্রীবোঝাই ট্রেনেই ছোঁড়া হয়েছে পেট্রোল বোমা বা ককটেল। এমনকি যাত্রীবেশে ট্রেনের কক্ষে আগুনও দেওয়া হয়েছে আতঙ্ক ছড়াতে।
এছাড়া, হরতাল-অবরোধের এই ৩৯ দিনে নাশকতাকারীদের সঙ্গে পুলিশসহ আইন-প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের কয়েক দফা বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় কয়েকজন নাশকতাকারীর মৃত্যু হয়েছে। যদিও বিএনপি-জামায়াত জোটের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ক্রসফায়ারের নামে তাদের ১৯ কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে।
সহিংসতা-নাশকতার এই লাগামহীনতায় জনজীবন যেমন স্থবির হয়ে পড়েছে, তেমনি মুখ থুবড়ে পড়েছে দেশের অর্থনীতিও। জীবনযাত্রা-অর্থনীতির গতিতে স্বাভাবিকতা ফেরাতে সহিংস কর্মসূচি প্রত্যাহারের জন্য সুধীসমাজ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী এমনকি সাধারণ শ্রেণী-পেশার মানুষ রাস্তায় নামলেও গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবস্থান নিয়ে তা চালিয়েই যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে যাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোটনেতা খালেদা জিয়া।
বাংলাদেশ সময়: ১১০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৫
** হরতাল নেই, অবরোধ চলছে