ঢাকা: মানুষ খুন করে বা মানুষের লাশ নিয়ে এ অপরাজনীতি বন্ধ করতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এবারের পেট্রোল বোমা, ককটেল, আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা ও সন্ত্রাস-সহিংসতা এবং একাত্তরের গণহত্যা-বর্বরতা, পঁচাত্তরের নৃশংস হত্যাকাণ্ড ও একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার হত্যাযজ্ঞ একই ধরনের বলে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেছেন, যে মানুষগুলোর জন্য রাজনীতি তাদেরকেই হত্যা করা, এ কোন ধরনের রাজনীতি? কাদের জন্য রাজনীতি?
এ জঘন্য অপরাধ, নৃশংসতা, বীভৎসতা, গণহত্যা চালিয়ে কি অর্জন হচ্ছে বলেও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
চলমান হরতাল-অবরোধে বিএনপি-জামায়াতের নৃশংসভাবে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা ও সহিংসতা নিয়ে তথ্যচিত্র প্রদর্শন ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপ-বিভাগ এ কর্মসূচির আয়োজন করে।
‘বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস ও লুণ্ঠিত মানবতা’ শীর্ষক একটি ভিডিওচিত্রও প্রদর্শন করা হয় এ অনুষ্ঠানে। এছাড়া বিএনপি-জামায়াতের হত্যা-সন্ত্রাস ও অগ্নিসন্ত্রাসের চিত্র তুলে ধরে বিভিন্ন আলোকচিত্র প্রদর্শিত হচ্ছে জাতীয় যাদুঘরের নিচতলার গ্যালারিতে।
এসব ছবি ও ভিডিও চিত্রে ফুটে ওঠে আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াতের হত্যাযজ্ঞ ও নৃশংসতা।
বিএনপি নেত্রীকে এ ধরনের হত্যা বন্ধ করার অনুরোধ জানানোর পাশাপাশি এটা প্রতিরোধে সাধারণ মানুষকে এগিয়ে আসার আহবান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সরকার এ বর্বরতা বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে, সাধারণ মানুষও প্রতিরোধ করছে। সন্ত্রাসীদের হাতেনাতে আটক করে পুলিশে দিচ্ছে। এভাবেই স্বাধীনতায় বিশ্বাসী মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা-নৃশংসতা রুখে দিতে হবে।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, যে মানুষগুলোর জন্য রাজনীতি সে মানুষগুলোর ওপর হামলা- পুড়িয়ে হত্যা, এটা কী ধরনের রাজনীতি? আগুন দিয়ে পেট্রোল বোমা দিয়ে সাধারণ মানুষকে মেরে ফেলা হচ্ছে, কী অপরাধ তাদের? কাদের জন্য আমরা কাজ করি? আমি এর কোনো সংজ্ঞা পাই না।
‘মানুষের জীবন নিয়ে খেলে, মানুষের পুড়িয়ে মেরে এ হত্যাযজ্ঞের মধ্যে কী লাভ হচ্ছে, তা আমার বোধগম্য নয়,’ বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ যারা স্বজন হারিয়েছেন, তাদের যন্ত্রণা আমি বুঝি। যারা অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন, তাদের এ যন্ত্রণা যাবে না। একুশে আগস্ট আমাদের রাজনীতিবিদদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। কিন্তু এখন রাজনীতিবিদ ছাড়াও সাধারণ মানুষের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে।
আমরাও আন্দোলন করেছি। জনগণকে নিয়ে আন্দোলন করেছি। মানুষকে কষ্ট দেইনি, পুড়িয়ে মারিনি বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনের পরও নৃশংস বর্বরতা, মানুষ হত্যার উৎসব করেছে বিএনপি-জামায়াত। সেইসব সন্ত্রাসীরা জামিনে মুক্ত হয়ে গেছে। তারা আবারও সাধারণ মানুষের ওপর নারকীয় হামলা চালাচ্ছে।
আমরা ওই সময়কার অপরাধের জন্য তাদের ওপর প্রতিশোধ নিতে যাইনি। বরং তারাই এখন জনসমর্থন হারিয়ে, আন্দোলনে সাড়া না পেয়ে সাধারণ মানুষের ওপর প্রতিশোধ নিচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানে বিদেশি কূটনীতিক ও দেশের বিশিষ্ট নাগরিক ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। তাদের সামনে পেট্রোল বোমার আগুনে পুড়ে নিহতদের স্বজন ও অগ্নিদগ্ধরা তাদের যন্ত্রণার কথা তুলে ধরেন।
এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা অনুবিভাগের চেয়ারম্যান এইচ টি ইমাম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।
বাংলাদেশ সময় ১২৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৫