ঢাকা: প্রেস রিলিজেই বন্দি হয়ে পড়েছে বিএনপি’র রাজনীতি। প্রতিদিনই অজ্ঞাত স্থান থেকে বিবৃতি আসছে দলটির স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে থাকা নেতাদের।
এমন ভাব দেখে তাদের নামের সঙ্গে ওসামা বিন লাদেনের নাম জুড়ে দেওয়ার চলও ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে বিভিন্ন আড্ডার রাজনৈতিক আলোচনায়।
যেসব নেতার নামে সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হচ্ছে, সাংবাদিকদের চর্মচক্ষু তাদের চেহারাটিও দেখার সুযোগ পাচ্ছেন না বিগত কিছুদিন ধরে। নিজেদের সব কর্মসূচি ও মনোভাব এখন কেবল বিবৃতি-বিজ্ঞপ্তিতেই প্রকাশ করছেন তারা।
৩ জানুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গুলশান-কার্যালয়ে বসবাস শুরুর পর থেকেই বাড়ে এই বিজ্ঞপ্তি-নির্ভরতা।
এর একেকটিতে একেকজনের নাম ও স্বাক্ষর জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। আর ফাঁকিটাও সেখানেই। কারণ পরবর্তীতে কোন সমস্যায় সহজেই অস্বীকার করতে পারবেন এসবের মালিকানা।
গুলশানে কয়েকদিন ইন্টারনেট, ফোন-নেটওয়ার্ক না থাকায় সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগে ব্যাঘাত পান অবস্থানকারীরা। বর্তমানে সেই পরিস্থিতি অনেকটা ঠিক হয়ে এসেছে।
তাই আগের মতোই খালেদা জিয়ার সঙ্গে কারা সাক্ষাতে আসছেন, সেসব ছবি সম্বলিত বিজ্ঞপ্তি আসছে নিয়মিত। যেহেতু মিডিয়ার ক্যামেরা ভেতরে প্রবেশে অনুমতি পাচ্ছে না, তাই এসব ছবিতেই খালেদাকে দেখছেন আগ্রহীরা।
বিজ্ঞপ্তিতেই আসছে হরতালের ঘোষণা, পালিতও হচ্ছে, মানুষ পুড়ছে, গাড়ি পুড়ছে। তবে প্রেরকদের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নেওয়া হলে প্রমাণের সুযোগ না রাখার চেষ্টা থাকছে সব বিজ্ঞপ্তিতে। বিষয়টি যেন ‘সাপও মরলো, লাঠিও ভাঙলো না। ’
সন্দেহের সুযোগ তৈরির চেষ্টা রাখা হচ্ছে যে, এসব বিজ্ঞপ্তি আদৌ বিএনপি’রই পাঠানো কিনা।
একটি বিষয় লক্ষ্য করা গেছে, কোন কোন বিজ্ঞপ্তি চরম উস্কানিমূলক বক্তব্য সমেত আসছে।
মূল দলের পক্ষ থেকে ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমানের নামে বিবৃতি আসছে। যুগ্ম-মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমেদের নামেও আসছে বিজ্ঞপ্তি। এই নেতার বিজ্ঞপ্তিতে লেখা থাকছে ‘নিকুঞ্জ’।
গ্রেপ্তারের আগে দলের দফতর সম্পাদক রুহুল কবির রিজভীর বিবৃতি বা বিজ্ঞপ্তিতে লেখা থাকতো ‘উত্তরা’।
মাঝখানে বড় বিরতির পর মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকেও বিজ্ঞপ্তি আসে আহ্বায়ক মির্জা আব্বাসের নাম জুড়ে।
এক্ষেত্রে ছাত্রদল আরেক কাঠি সরেস। সংগঠনটির দফতর সম্পাদক আব্দুস সাত্তার গ্রেপ্তার হওয়ার পরে কিছুটা সময় বিরতি নেওয়া হয়। এরপরই সাবেক দফতর সম্পাদক নাজমুল হাসানের নাম নিয়ে আসতে থাকে বিজ্ঞপ্তি।
সংগঠনটির নেতাকর্মীদের রাস্তায় দেখা না গেলেও প্রতিদিন বিজ্ঞপ্তি আসছে অনেক গুছিয়ে। কোথায় কোন কর্মসূচি পালন করলেন, তা সবিস্তারে পাঠাচ্ছেন তারা।
এসবে দাবি করা হচ্ছে, সারাদেশে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন জনগণকে সঙ্গে নিয়ে। হরতাল-অবরোধ সফলভাবে পালিত হচ্ছে বলে জোর দাবি প্রেরকের।
যুবদলও সংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের নিন্দা ও মুক্তির দাবি জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি পাঠায়, তবে সেটি অখ্যাত একটি নিউজ এজেন্সির মেইলিং ঠিকানা ব্যবহার করে।
বিএনপিপন্থি পেশাজীবীদের সংগঠন ড্যাব, বিটিএফ, বিএসপিপি’র বিজ্ঞপ্তিও পাওয়া যাচ্ছে। এইচ আর খানের মেইল-ঠিকানা থেকে সপ্তাহে একাধিকবার আসছে এসব।
যেমন- সোমবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টা ৩২ মিনিটে বিএনপি অফিসের নাম নিয়ে পাঠানো হয় বিজ্ঞপ্তি। এর আগে ৪টা তিন মিনিটে ড্যাব’র নাম নিয়ে, বেলা ১১টা ৩৭ মিনিটে ছাত্রদলের ঠিকানা থেকে আসে বার্তা। রাত ৮টা দুই মিনিট ও ৩৯ মিনিটে পরপর দুইটি বিজ্ঞপ্তি পাঠায় মহানগর বিএনপি।
রোববার (১৫ ফেব্রুয়ারি) যুবদল, ড্যাব, বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়, বিএনপি অফিস-সালাউদ্দিন আহমেদের (নিকুঞ্জ) ঠিকানা ও নাম নিয়ে আসে বার্তা।
শনিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) এইচ আর খান (২টি), যুবদলের নাজমুল, বিএনপি অফিস-সালাউদ্দিন আহমেদ (নিকুঞ্জ) থেকে আসে বিজ্ঞপ্তি।
শুক্রবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা মহানগর বিএনপি’র পক্ষ থেকে জাহাঙ্গীর আলমের মেইল থেকে আসে একাধিক বার্তা। এগুলোতে সংগঠনের আহবায়ক মির্জা আব্বাস ও সদস্য সচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেলের নাম লেখা হয়েছে।
একইদিনে আরএনএসবিডি নামে একটি অখ্যাত ও অপরিচিত ঠিকানা থেকে গুলশানে আটক ছাত্রনেতা নিশিতার বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। এছাড়া ‘নিকুঞ্জ’ থেকে সালাউদ্দিন ও যুবদল থেকে বার্তা আসে।
কিছু নতুন নিউজএজেন্সির মেইল-ঠিকানা ব্যবহার করেও বিএনপির পক্ষে প্রচারণা চলছে।
এখানে একটি বিষয় সাংবাদিকরা লক্ষ্য করছেন যে, সংবাদমাধ্যমের সেই ঠিকানাগুলোতেই এসব বিজ্ঞপ্তি যাচ্ছে, যেগুলো বিএনপি’র দফতরের ফোন-ইনডেক্সে রাখা ছিল।
তাই এসব বিজ্ঞপ্তি বিএনপি নেতাকর্মী বা তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশেই আসছে বলে অনুমান করছেন সংবাদকর্মীরা।
শুধু তাই নয়, একই বিজ্ঞপ্তি পরপর কয়েকবার পাঠানোর পূর্ব প্রবণতার ধরনেও তারা নিঃসন্দেহ হচ্ছেন প্রেরকের পরিচয় বিএনপিসংশ্লিষ্ট বলে।
রিপোর্টে নেতাকর্মীদের মন্তব্য নিতে খুঁজে পাচ্ছেন না সংবাদকর্মীরা, উল্টো বিজ্ঞপ্তি এল কিনা তা নিয়ে দুঃশ্চিন্তা।
কোন কোন হাউজে সুনির্দিষ্টভাবে কাউকে অ্যাসাইন রাখা হচ্ছে সারাক্ষণ মেইল-চেক করার কাজে। কারণ সবার জানা- বিরোধী এই দলটির আপডেট এখন বেশিরভাগই বিজ্ঞপ্তি-বন্দি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৫ ঘন্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৫