ঢাকা: বিএনপির সঙ্গে সংলাপে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল থেকেই অগ্রসর হচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। চলমান সংকট সমাধানে জাতিসংঘের মহাসচিব চিঠি দেওয়ার পরও আওয়ামী লীগের এ অবস্থানের পরিবর্তন হচ্ছে না।
দলটির নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিএনপি নির্দলীয় সরকারের অধীনে যে আগাম নির্বাচনের দাবি করে আসছে, সে দাবির ব্যাপারে কোনো ছাড় দেবে না আওয়ামী লীগ।
অনির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে দেবে না ক্ষমতাসীন এ দলটি। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত সরকারের অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগ তাদের বর্তমান অবস্থানে অনড় থেকেই অগ্রসর হবে বলে তারা জানান।
তাছাড়া টানা দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে অবরোধ-হরতাল চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। এই অবরোধ-হরতালে বোমাবাজি করে সহিংসতা, নাশকতা চালিয়ে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। বিএনপির এই কর্মসূচি শুরু থেকেই নাশকতায় পরিণত হয়েছে। এই অবস্থায় বিএনপির সঙ্গে সংলাপ করা নাশকতা-সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেওয়া বলেও মনে করেন আওয়ামী লীগের ওই নেতারা। এ বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের সিনিয়র মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা সংসদ অধিবেশনে ও সংসদের বাইরে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বক্তব্য দিয়েছেন। সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকেও আওয়ামী লীগের এই অবস্থান স্পষ্ট করে নেতারা সংলাপের সম্ভাবনা নাকোচ করে দিয়েছেন।
সূত্র জানায়, বৈঠকে অবরোধ-হরতালে সহিংসতার বিষয়টি ইইউ প্রতিনিধিদের অবহিত করা হয়েছে। চলমান সহিংসতার সচিত্র একটি সিডিও দেওয়া হয়েছে প্রতিনিধি দলকে। ওই বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামসহ সরকার ও দলের শীর্ষস্থানীয় নীতি নির্ধারকরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী সাংবাদিকদের বলেন, নাশকতা ও সংলাপ একসঙ্গে চলতে পারে না। নাশকতা ও সংলাপ একেবারেই আলাদা বিষয়। নাশকতা বন্ধ না হলে সংলাপ হয় না।
এদিকে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের প্রশ্নে অনড় অবস্থানে রয়েছে আওয়ামী লীগ। সংবিধান অনুযায়ী জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অনির্বাচিত কোনো সরকারের অধীনে নির্বাচন নয়। এই অবস্থায় বিএনপি যে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি করছে সেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেও কোনো সমাধানের সম্ভাবনা নেই। ইইউ প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রেস ব্রিফিংয়ে গওহর রিজভীর বক্তব্যে সেটা স্পষ্ট হয়েছে।
গওহর রিজভী বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী পরিষ্কার করেই বলেছেন, যখন নির্বাচনের সময় আসবে তার আগে কথা বলা যাবে। আমরা সবাই অবাধ, নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই। এর জন্য যা দরকার, নির্বাচন কমিশনকে আরও শক্তিশালী করা বা যদি অন্য কোনো নিয়ম আনতে হয় তা নিয়ে আলাপ হবে। কিন্তু যাই আলাপ করি না কেন তা সংবিধানের মধ্যে থাকতে হবে। এর বাইরে গিয়ে কোনো আলাপ করার কোনো সুযোগ নেই।
অন্যদিকে, জাতিসংঘের মহাসচিবের সংলাপের আহ্বানের পর ইইউ প্রতিনিধি দলের বৈঠকে আওয়ামী লীগের এই বক্তব্যে দলটির আগের অনড় অবস্থান স্পষ্ট হয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিবের চিঠির উত্তরে এই অবস্থানই তুলে ধরা হবে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে এক নেতা বাংলানিউজকে বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিব এর আগেও উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো এসেছিলেন। জাতিসংঘ যে উদ্যোগ নিয়েছিলো তাতে তো তখন কোনো সমাধান হয়নি। বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে পারেনি।
তখন সংবিধান অনুযায়ী যথা সময়ে নির্বাচন হয়েছে। সেই নির্বাচন বন্ধ করতে বিএনপি সর্বশক্তি দিয়ে মাঠে নেমে তাণ্ডব চালিয়েছে। কিন্তু নির্বাচন বন্ধ করতে পারেনি।
জাতিসংঘের মহাসচিবের চিঠির বিষয়টি উল্লেখ করে সংলাপের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলির সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী তো বলেছেন, যারা মানুষ পুড়িয়ে মারছে তাদের সঙ্গে কিসের সংলাপ। তাদের সঙ্গে সংলাপের প্রশ্নই ওঠে না।
মতিয়া চৌধুরী আরও বলেন, জনগণ আমাদের ভোট দিয়েছে। সরকারের দায়িত্ব জনগণের নিরাপত্তা দেওয়া। সরকার এর জন্য যা যা করার করছে, করবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। এখন যেটা চলছে- চোরাগোপ্তা হামলা ও বিকারগ্রস্থ আচরণ।
এদিকে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে নাশকতার বিরুদ্ধে রাস্তায় নামিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে আওয়ামী লীগ নেত্বাধীন ১৪ দল।
১৪ দলের ধারাবাহিক কর্মসূচির পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠন ও সাধারণ মানুষকে নাশকতার বিরুদ্ধে কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
শুক্রবার রাজধানীসহ সারা দেশে নাশকতার বিরুদ্ধে গণমিছিল করবে ১৪ দল। এই গণমিছিলের রাজনৈতিক কর্মী-সমর্থকদের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করতে পেশাজীবী সংগঠনগুলোকে এই কর্মসূচির সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময় ০০৪৮ ঘন্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৫