ঢাকা: ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের গণমিছিলে লাখো মানুষ অংশ নিয়ে চলমান নাশকতার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের গেট থেকে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত এ গণমিছিলে আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের নেতাকর্মীর পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।
ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড থেকে আসা হাজার হাজার মানুষের এই গণমিছিল লাখ জনতার মিছিলের পরিণত হয়।
এই গণমিছিল-পূর্ব সমাবেশে ১৪ দলের নেতারা অবরোধ-হরতালের নামে নাশকতা, সহিংসতার বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
নেতারা সংলাপের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে সহিংসতা-নাশকতা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বলেন, সহিংসতার বিরুদ্ধে জনগণ ফুঁসে উঠেছে। এই সহিংসতা বন্ধ না করলে দেশের মানুষ খালেদা জিয়াকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে। তার রাজনৈতিক মৃত্যু হবে।
বিএনপি-জামায়াত জোটের অবরোধ-হরতালে নাশকতার বিরুদ্ধে ১৪ দল সারাদেশে এই শান্তির পক্ষে গণমিছিলের আয়োজন করে। এরই অংশ হিসেবে রাজধানীতে ঢাকা মহানগর ১৪ দলের এই গণমিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
গণমিছিলের আগে বিকেল সাড়ে ৩টায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের গেটে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
বিকেল ৩টা থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে জোটভুক্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের ব্যানারে নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে এসে সমবেত হতে থাকেন।
গণমিছিল-পূর্ব এই সংক্ষিপ্ত সমাবেশ গুলিস্তান বঙ্গবন্ধু স্কয়ার থেকে স্টেডিয়াম, জিপিও হয়ে মুক্তাঙ্গনসহ রাস্তায় জনতার ঢল নামে। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিকলীগ, যুব মহিলা লীগসহ বিভিন্ন সংগঠন, জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদসহ অন্য দলগুলোও নিজস্ব ব্যানারে জমায়েত নিয়ে এই গণমিছিলে অংশ নেয়।
এই গণমিছিলে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নির্বাচনী শোডাউনের আমেজও লক্ষ করা যায়। সম্ভাব্য প্রার্থীদের পক্ষে বিশাল বিশাল জমায়েত আসে গণমিছিলে।
গণমিছিল-পূর্ব সমাবেশ থেকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ১৪ দলের মুখপাত্র স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
সহিংসতা ও নাশকতার বিরুদ্ধে আগামী ৮, ৯ ও ১০ মার্চ সারাদেশে গণপদযাত্রার কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া মানুষ পুড়িয়ে মারছে। খুনির সঙ্গে কোনো সংলাপ হতে পারে না। হবে না। সংলাপ হবে নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে।
কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, বিএনপির হরতাল-অবরোধ সুপার ফ্লপ হয়েছে। নিজেরা আন্দোলনে না পেরে বিদেশিদের ডাকছেন খালেদা জিয়া। তিনি ভেবেছেন, মানুষ হত্যা করে পার পাবেন। তার বিচার হবেই।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, কোনো বিদেশি এদেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। দেশের রাজনীতি এ দেশের মানুষেরাই নিয়ন্ত্রণ করবে।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বেসরকারি বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, বিএনপি-জামায়াত রাজনৈতিকভাবে হেরে গিয়ে মানুষ হত্যা করছে। নাশকতা আর সংলাপ এক সঙ্গে হবে না। বিদেশিদের কাছে ধর্ণা দিয়ে লাভ হবে না।
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে বিতাড়িত করলেই বাংলাদেশ শান্ত হবে।
এ সময় খালেদাকে রাজনীতি থেকে বিতাড়নের সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান ইনু।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর ১৪ দলের সমন্বয়ক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন- আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, নগর আওয়ামী লীগের এমএ আজিজ, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, জেপির সাধারণ সম্পাদক শেখ শহিদুল ইসলাম, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ওয়াজেদুল ইসলাম খান।
সমাবেশ শেষে গণমিছিল বের হয়। গণমিছিলটি পুরানা পল্টন, প্রেসক্লাব, মৎস্য ভবন হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখাচিরন্তনে গিয়ে শেষ হয়।
গণমিছিল যাওয়ার সময় রাস্তার দুই পাশে মানুষ দাঁড়িয়ে মিছিলের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেন। মিছিল শেষে শিখা চিরন্তনে বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্য নিশ্চিহ্নের শপথ পাঠ করেন ১৪ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা। এ শপথ বাক্য পড়ান জোটের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৫