ঢাকা: স্বৈরাচারকে সঙ্গে নিয়ে গণতন্ত্র হয় না। আর গণতন্ত্র বিসর্জন দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন হয় না।
রোববার (১ মার্চ) দুপুরে স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলনের শহীদ তাজুল ইসলামের ৩১তম মৃত্যুবার্ষিকীতে ফুলেল শ্রদ্ধা জ্ঞাপন শেষে এসব কথা বলেন সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।
১৯৮৪ সালের ১ মার্চ দেশব্যাপী আহুত শিল্প ধর্মঘট ও হরতালের সমর্থনে আগের দিন মধ্যরাতে আদমজী জুটমিল এলাকায় কমরেড তাজুলের নেতৃত্বে শ্রমিকরা প্রচার মিছিল বের করলে তৎকালীন এরশাদ সরকারের সন্ত্রাসী বাহিনীর হামলায় তাজুল ইসলামসহ কয়েকজন শ্রমিক মারাত্মক আহত হন। ১ মার্চ ভোরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাজুলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির কিছুক্ষণ পরে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
এরপর থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও শ্রমিক সংগঠন ১ মার্চ ‘তাজুল দিবস’ পালন করে। রোববার এ উপলক্ষে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় অফিসের সামনে প্রতিস্থাপিত অস্থায়ী বেদিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতাকর্মীরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত অস্থায়ী শহীদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। প্রথমে সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমেদের নেতৃত্বে সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতারা পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর শহীদ তাজুলের পরিবারের পক্ষ থেকে সহধর্মিনী নাসিমা ইসলামের নেতৃত্বে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়।
পরে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণফোরাম, ঐক্য ন্যাপ, বাসদ (মার্কসবাদী), গণতন্ত্রী পার্টি, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, সাম্যবাদী দল (এমএল), বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র (টিইউসি), বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন- কেন্দ্রীয় সংসদ ও বিভিন্ন শাখা, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন- কেন্দ্রীয় সংসদ ও বিভিন্ন শাখা, বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতি, বাংলাদেশ কৃষক সমিতি, গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট, সিপিবি নারী সেল, গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি, সাপ্তাহিক একতা, লতিফ বাওয়ানি জুট মিল শ্রমিক ইউনিয়ন, জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, খেলাঘর আসর, সিপিবির ঢাকা কমিটি, বিভিন্ন থানা কমিটি ও শাখা, শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট, ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন, হকার্স ইউনিয়ন, জাতীয় গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য পরিষদ, সমজাতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মী ও ব্যক্তিরা পুষ্পার্ঘ অর্পণের মাধ্যমে শহীদ তাজুলের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, স্বৈরাচারকে সঙ্গে নিয়ে গণতন্ত্র হয় না। আর গণতন্ত্র বিসর্জন দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করা যায় না। একাত্তরে হত্যা-ধর্ষণ-অগ্নিসংযোগের হুকুম দেওয়ার জন্য যেমন গোলাম আযমকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে, তেমনি তাজুলসহ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অনেক সংগঠককে খুনের হুকুমদাতা হিসেবে স্বৈরাচার এরশাদকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে।
সেলিম আরও বলেন, বর্তমান সংকট রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে হবে। তার জন্য সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। আন্দোলন করার অধিকার থাকলেও আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যা ও জ্বালাও-পোড়াও করার অধিকার কারও নেই। জ্বালাও-পোড়াও, সহিংস রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। ক্রমসফায়ার, গুম-খুন, বিচার বহির্ভুত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।
অভিজিৎ রায়ের হত্যাকারীদের এখনো গ্রেফতার না করতে না পারায় প্রশাসনের তীব্র সমালোচনা করেন সেলিম।
তিনি বলেন, তাজুল মৃত্যুর ঝুঁকি জেনেও হরতাল সফল করার জন্য আদমজীতে মিছিল সংগঠিত করেছিলেন। তাজুলের মৃত্যু বীরের মৃত্যু। তাজুলের আত্মদানের পথ ধরেই শ্রমিকশ্রেণির পার্টি কমিউনিস্ট পার্টি এবং বিপ্লবী ধারার ট্রেড ইউনিয়নকে শক্তিশালী করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৫ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০১৫